বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

ঘুরেফিরে ৫ দেশে থাকছেন হারিছ চৌধুরী
নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক



বিজ্ঞাপন

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় অভিযুক্ত মোট ১৮ আসামির মধ্যে ৮ জনের অবস্থান জানতে পেরেছে পুলিশ। বুধবার এই মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

অপরাধ তদন্ত বিভাগের অতিরিক্ত ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (এডিডিআই ডিআইজি) এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) আবদুল কাহহার আকন্দ বলেন, ‘আমরা ইন্টারপুল ও বিদেশে আমাদের মিশনগুলোর সহায়তায় ইতোমধ্যে ৮ পলাতক আসামির অবস্থান সনাক্ত করেছি এবং অপর ১০ পলাতক আসামির অবস্থান জানার চেষ্টা করছি।’ খবর: বাসস

সিআইডি ও পুলিশ সদর দফতরের সূত্র অনুযায়ী, মাওলানা তাজুদ্দিন ও তার ভাই রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে, সাবেক এমপি মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ সৌদি আরবে, সাবেক মেজর জেনারেল এটিএম আমিন ও লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার দুবাইতে, দু’ভাই- হরকাতুল জিহাদ নেতা মহিবুল মত্তাকিন ও আনিসুল মোরছালিন রয়েছে ভারতের তিহার জেলে।

সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাবেক বিশেষ সহকারী আবদুল হারিছ চৌধুরী মালয়েশিয়ায়, লন্ডন, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে যাতায়াতের মধ্যে রয়েছেন।

তবে তৎকালীন উপ-পুলিশ কমিশনার খান সায়ীদ হাসান ও ওবায়দুর রহমান খান, হুজি নেতা মোহাম্মদ খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বাদল, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মো. ইকবাল, মুফতি শফিউর রহমান (ভৈরব) ও মুফতি আবদুল হাই এবং হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফের অবস্থান এখনও সনাক্ত করা যায়নি।

এই মামলার চার্জশিট দাখিলের পরপরই খান সায়ীদ হাসান ওবায়দুর রহমান খানকে জরুরি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া মাওলানা তাজুদ্দিনকে ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি, তারেক রহমানকে একই বছরের ১৩ এপ্রিল, হারিছ চৌধুরীকে ৩১ নভেম্বর এবং রাতুল বাবুকে ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জরুরি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

ইন্টারপোলের জরুরি নোটিশের প্রেক্ষিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ মাওলানা তাজুদ্দিনকে গ্রেফতার করলেও পরে সে জামিনে মুক্তি পায়। কিন্তু তিনি এখন দক্ষিণ আফ্রিকায় অবৈধ অনুপ্রেবেশের মামলা মোকাবেলা করছেন।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, ‘আদালত তাদের (১৮ অভিযুক্তকে) পলাতক ঘোষণা করেছেন এবং অপর ৩১ জন জেলে রয়েছে, তাছাড়া তিন জনের ফাঁসি হয়েছে।’

অন্য মামলায় যে তিন জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে তারা হচ্ছে সাবেক মন্ত্রী জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, হরকাতুল জিহাদ প্রধান মুফতি আবদুল হান্নান ও অপর জঙ্গি নেতা শহিদুল আলম বিপুল।

রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে একুশে আগস্টের ঘটনায় আনা পৃথক মামলায় একইসঙ্গে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিচার শেষ হয়।

২১ আগস্টের ঘটনায় পৃথক মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫২ জন। এর মধ্যে ৩ জন আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদেরকে মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।

৩ আসামি হলেন- জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও শরীফ সাহেদুল আলম বিপুল। এখন ৪৯ আসামির বিচার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে এখনো ১৮ জন পলাতক। ৩১ জন কারাগারে।

প্রসিকিউশনের অন্যতম সদস্য এডভোকেট ফারহানা রেজা বলেন, মামলার অভিযোগপত্র আমলে নেয়ার পর পলাতক ১৮ আসামির বিষয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরে তাদের হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিসহ সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া শেষে পলাতক দেখিয়ে বিচার শুরু হয়। এরমধ্যে যাদের বিষয়ে আইনে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ার মতো ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিল। এ আইনজীবীরা পলাতকদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন।

আসামিরা হলেন- মাওলানা তাজউদ্দিন, তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মো. হানিফ, মহিবুল মুত্তাকীন, আনিসুল মুরসালিন, মুফতি শফিকুর রহামন, রাতুল আহমেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবু, জাহাঙ্গির আলম বদর, মো. খলিল, মো. ইকবাল, মাওলানা লিটন ও মুফতি আবদুল হাই।

ফারহানা রেজা বলেন, পলাতক ১৮ জনের মধ্যে ৪ জন আসামির বিষয়ে ‘রাষ্ট্র নিযুক্ত’ আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়নি। তারা হলেন—আসামি সাবেক সেনা কর্মকর্তা এটিএম আমিন ও সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান খান ও খান সাঈদ হাসান।

এ চার আসামির আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজা তথা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে এমন কোন ধারায় অভিযোগ গঠন হয়নি। তাই তারা ‘স্ট্যাট ডিফেন্স বা রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী’ সুবিধা পাননি।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেয়।

বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয়। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ ৫ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পত্নী আইভি রহমান।

তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।