মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

বড়লেখায় নিজের কিডনি দিয়ে বোনের জীবন বাঁচালেন ভাই



বিজ্ঞাপন

এ.জে লাভলু:: বোনের প্রতি ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত গড়েছেন কোরআনে হাফেজ এক যুবক। তিনি নিজের একটি কিডনি দিয়ে বড় বোনের জীবন বাঁচিয়েছেন। এই ঘটনাটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এতে সবার প্রশংসায় ভাসছেন ওই যুবক। তাঁর নাম আব্দুর রাহিম (২৪)। আর বোনের নাম ফাহমিদা বুশরা ঝুমু (২৬)। তারা মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ ইউপির গাংকুল গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ফজলু মিয়ার সন্তান।

সম্প্রতি ঢাকার সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি (সিকেডি) হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে চিকিৎসকরা রাহিমের দেওয়া কিডনি ঝুমুর দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেছেন। বর্তমানে ভাই-বোন দুজনেই সুস্থ রয়েছেন। এদিকে ফাহমিদার চিকিৎসার ব্যয়ভার সংগ্রহের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন এলাকার লোকজন। তারা কয়েক মাসে ফাহমিদার চিকিৎসার জন্য তহবিল গঠন করে প্রায় ১৭ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ফাহমিদার চিকিৎসায় ব্যয় হয়েছে।

স্থানীয় ও ফাহমিদার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত বছরে ফাহমিদা বুশরা ঝুমুর সঙ্গে উপজেলার বর্ণি গ্রামের দুবাইপ্রবাসী জাহেদ আহমদের বিয়ে হয়। একমাস পর ফাহমিদার স্বামী পাড়ি দেন বিদেশে। এরমধ্যে হঠাৎ ফাহমিদার কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে। ফাহমিদাও চলে আসেন বাবার বাড়ি। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলে ডাক্তার ফাহিমদাকে জানান তার দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। এরপর থেকে স্বামী ফাহমিদার কোনো খোঁজ-খবর নেননি। ডায়ালাইসিস করেও তার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছিল না। এই অবস্থায় যেন অন্ধকার নামে ফাহিমদা ও তার পরিবারে। কারণ পরিবারের পক্ষে ফাহমিদার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা মোটেও সম্ভব ছিল না। আর কে দেবে ফাহমিদাকে একটি কিডনি? এই অবস্থায় পাশে দাঁড়ান ফাহিমদার ছোট ভাই কোরআনে হাফেজ আব্দুর রাহিম।

তিনি নিজের একটি কিডনি বোনকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ফাহমিদার কিডনি সঙ্গে রাহিমের কিডনি মিলে যায়। কিন্তু কিডনি পাওয়া গেলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় টাকা। কারণ চিকিৎসার খরচের জন্য এত টাকা ফাহিমার পরিবার কোথায় পাবে? ফাহমিদার পরিবার বিষয়টি আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয় লোকজনকে জানান। এলাকার লোকজন ফাহমিদার পাশে দাঁড়ান। তারা ফাহমিদার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের জন্য ‘ফাহিমদা চিকিৎসা সহায়তা তহবিল’ গঠন করেন। এরপর অর্থ সংগ্রহ শুরু হয়। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন মানুষ হাত বাড়ান। প্রায় চারমাসে তহবিলে ১৭ লাখ টাকা সংগ্রহ হয়। সেই টাকা দিয়ে চলতি মাসের ০৩ মার্চ ঢাকার সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি (সিকেডি) হাসপাতালের রাহিমের দেওয়া কিডনি ঝুমুর দেহে সফলভাবে কিডনি প্রতিস্থাপন করেন চিকিৎসকরা।

বোনকে কিডনি দেওয়ার বিষয়ে হাফিজ আব্দুর রাহিম বলেন, আমার বোন আমাকে খুব স্নেহ-আদর করেন। তাই তাকে বাঁচাতে আমার কিডনি দিয়েছি। আমার দেওয়া কিডনি তার দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এখন আমরা আল্লাহর রহমতে সুস্থ আছি। হাসপাতালে আরও কিছুদিন থাকা লাগবে। তিনি বলেন, বোনের চিকিৎসার পেছনে অনেক টাকা খরছ হয়েছে। এলাকার মানুষজন তহবিল গঠন করে আমার বোনের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

ফাহিমদা চিকিৎসা সহায়তা তহবিলের আহ্বায়ক ও স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের (ইউপি) মেম্বার সাহেদুল ইসলাম সুমন ও সদস্য ফয়ছল রানা সোমবার বিকেলে বলেন, ফাহমিদা বুশরা ঝুমুর চিকিৎসার জন্য তহবিল গঠন করে দেশ-বিদেশের সবার সহযোগিতায় ১৭ লাখ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। এই টাকা থেকে ফাহমিদার চিকিৎসার পেছনে ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। তারা বলেন, ফাহমিদাকে বাঁচাতে তার ভাই হাফিজ আব্দুর রাহিম একটি কিডনি দিয়ে ভাইয়ের প্রতি বোনের ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত গড়েছেন।