শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

রাজনগরে তিনশ বছর ধরে পূজা হচ্ছে উপমহাদেশে একমাত্র লাল দুর্গার
বিশেষ প্রতিবেদক

বিশেষ প্রতিবেদক



বিজ্ঞাপন

প্রতি বছর উপমহাদেশে কয়েক লাখ দুর্গা প্রতিমা বিভিন্ন সাজে সাজিয়ে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু উপমহাদেশের একমাত্র লাল বর্ণের দুর্গা প্রতিমায় পূজা হয় মৌলভীবাজারের রাজগনর উপজেলার পাঁচগাঁওয়ে। সিলেট ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এমনকি ভারত থেকেও প্রচুর ভক্ত আসেন এই পূজা মণ্ডপে। পূজোর তিন দিন কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে লাখ লাখ পূজারীর ভিড় থাকে। তাদের ধারণা এখানে দুর্গা জাগ্রত। যে যখন যা চেয়েছে তাই পেয়েছে।

প্রায় ৩০০ বছর ধরে এই লাল বর্ণের দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সাধক সর্বানন্দ দাস লাল বর্ণের দুর্গাপ্রতিমায় পূজার প্রচলন করেন। এখানে দেবী স্বশরীরে হাজির হন বলে কথিত আছে। মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার ও রাজনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার উত্তরে পাঁচগাঁও গ্রামে স্বর্গীয় সর্বানন্দ দাসের বাড়িতে পালিত হয়ে আসছে ব্যতিক্রম এই পূজা।

Durga-2

এলাকায় প্রচলিত আছে স্বর্গীয় সর্বানন্দ দাস আসামের শিবসাগরে মুন্সীপদে চাকরি করতেন। তিনি ছিলেন সাধক পুরুষ। একবার আসামের কামরূপ-কামাক্ষা বাড়িতে গিয়ে পূজার জন্য পাঁচ বছরের একটি মেয়ে চাইলে স্থানীয় লোকজন তাকে একটি মেয়ে দেন। সর্বানন্দ দাস সেই মেয়েকে পূজা দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে ধীরে ধীরে মেয়েটির রং বদলে লাল হয়ে ওঠে। মেয়েটির মধ্যে স্বয়ং দেবী ভর করেন। মেয়েটি তখন সর্বানন্দ দাসকে বলেন, তুমি আমার কাছে বর চাও। আমি তোমাকে বর দিব। সর্বানন্দ দাস তখন তার কাছে বর চাইলেন। দেবী তখন নির্দেশ দিলেন পাঁচগাঁওয়ের প্রতিমার রঙ লাল হবে। সাধক সর্বানন্দ দাস দেবীকে রাজনগরের পাঁচগাঁওয়ে যেনো দেখা দেন সেই আকুতি জানান। সেই থেকে এখানে লাল বর্ণের মূর্তির পূজা হয়ে আসছে এবং এখানে সাধনায় প্রসন্ন হয়ে মা দুর্গা তাকে দেখা দেন। পূজার একপর্যায়ে সাধক সর্বানন্দ দাস মায়ের কাছে আকুতি জানান, তিনি (মা দুর্গা) যে এখানে এসেছেন তার প্রমাণ কী? তখন মা তার হাতের পাঁচ আঙুলের লাল ছাপ তৎকালীন নির্মিত কাঁচা ঘরের বেড়ায় লেপ্টে দেন। মায়ের মাথার স্বর্ণের টিকলি ও কানের দুল রেখে যান। সেই থেকেই এখানে লাল মূর্তিতে দেবীর পূজা হয়ে আসছে। এমনকি পূজার সময় এখনো মায়ের রেখে যাওয়া গয়না দেবীকে পরানো হয়। সাধক সর্বানন্দ দাসের বংশধর সঞ্জয় দাস ১৪১৫ বঙ্গাব্দে নতুন জায়গায় মন্দির স্থাপন করলে পূর্বের সেই স্মৃতিচিহ্ন আর চোখে পড়ে না। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী মন্দিরে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। মন্দির পুড়ে গেলেও গহনা অক্ষত ছিল।

প্রতি বছর উৎসব মুখর পরিবেশে দেশ বিদেশ থেকে লাখ লাখ পূজারীরা আসেন এ মণ্ডপে। এখানে হাজার হাজার হিন্দু ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীরা তাদের নানা মানত নিয়ে ছুটে আসেন দুর দূরান্ত থেকে। কেউ হোমযজ্ঞ দেন, কেউ প্রদীপ ও আগরবাতি জ্বালান আবার কেউবা মহিষ, পাঠা, কবুতরসহ বিভিন্ন পশু বলি দেন।

Durga-3

দুর্গাপূজা মণ্ডপকে ঘিরে আশেপাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এখানে মেলা বসে। বিভিন্ন ধর্মীয় জিনিসপত্রের ও দেবদেবীর ছবি মূর্তিসহ কয়েকশত দোকানে বেচাকেনা হয়। এছাড়া খই, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা, জিলাপি, মিষ্টি, বাঁশি, বেলুন, ঝুমঝুমি আরও অনেক পসরা নিয়ে দোকানিরা মেলায় হাজির হন। প্রতিবছরের মত এবারও এখানে লাখো ভক্তের মিলন ঘটবে তাই প্রশাসন ও পূজা উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. শাহজালাল জানান, পুলিশ, আনসার, র্যাবসহ গ্রাম পুলিশ মোতায়নের থাকবে। পাঁচগাঁওয়ে লাল দেবীর পূজা হওয়ায় এখানে লাখো মানুষের ঢল নামে তাই সেখানে আলাদা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।