‘আল্লাহর দোহাই, ভিসা পেলেই বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে লোক পাঠাবেন না। সরকারকে নিষেধ করেন। ভিসা নিয়ে আসতে পারলেও এখানে কাজ নাই। কাজ পেলেও বেতন খুবই কম। টাকা ছাড়া কোম্পানি আকামা দেয় না। আকামা পেলেও নির্দিষ্ট ওই কোম্পানির বাইরে কাউকে কাজে পেলে তাকে অবৈধ বলে দেশে পাঠিয়ে দেয়। গত ২১ বছরের প্রবাস জীবনে এমন দুরবস্থা দেখিনি।’
ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার মাতানিয়া গ্রামের বাসিন্দা কবির আহমেদ আক্ষেপ করে এ কথাগুলো বলছিলেন। তিনি গত ২১ বছর যাবত মদিনা আল মনোয়ারাতে বসবাস করছেন। বর্তমানে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করছেন।
রোববার এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে কবির আহমেদ বলেন, ‘সৌদি সরকার আকামা, ভ্যাট ও ইন্সুরেন্সসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আগের তুলনায় ফি বৃদ্ধি করায় পুরনো-নতুন সব বাংলাদেশির জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। পুরনোদের বেতন কমছে, নতুনরা কাজই পাচ্ছেন না। ফলে সৌদি আরবে বসবাসরত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লাখ লাখ মানুষ চরম দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তায় দিনাতিপাত করছেন।’
কবির আহমেদ জানান, গত দুই দশক সৌদি আরবে রাজারহালে দিন কাটিয়েছেন তিনি। চাকরি-ব্যবসা সব ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা ছিল, কিন্তু এখন চিত্র ভিন্ন।
ব্যক্তিগত তিক্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ২৬০০ রিয়েল বেতন পাই। আগে বাসাভাড়া ২০০, পরিবহন ১০০ ও আকামা বাবদ ২০০ রিয়েলসহ কোম্পানি ৫০০ রিয়েল কেটে নিলেও ২১০০ রিয়েল বেতন পেতাম। এখন কোম্পানি এক হাজার রিয়েল কেটে নিয়ে মাত্র ১৬০০ রিয়েল বেতন দিচ্ছে।
তিনি জানান, পরিবারের পীড়াপীড়িতে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে ২৩ বছর বয়সী ছেলেকে মদিনাতে নিয়ে আসেন। যে কোম্পানির মাধ্যমে এসেছেন তাদের ওখানে চাকরি না থাকায় গত সাত মাস ধরে বেকার। তিনি সহজেই অন্য কোথাও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেন, তবে ধরা পড়লে দেশে ফেরত পাঠাবে এই ভয়ে ছেলেকে কাজে দেননি। পুরনো আকামার চার মাস বাকি রয়েছে। আবার নতুন করে পাঁচ লাখ টাকায় আকামা করতে হবে। এমতাবস্থায় চার মাস পর নিজেই ছেলেকে দেশে পাঠিয়ে দেবেন বলে মনোস্থির করেছেন।
দেশের মানুষ যেন সৌদি ভিসা পেলেই আসার জন্য পাগল না হয়, জেনেশুনে ও বুঝে যেন না আসে- সে ব্যাপারে সরকারকে প্রয়োজনীয় প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান তিনি।