ফরহাদ আহমদ :: বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি বৃহৎ ছাত্র সংগঠন। দেশের সকল গণতান্ত্রিক অান্দোলন সংগ্রামে ছাত্রলীগের অবদান রয়েছে। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিটি ন্যায্য আন্দোলন-সংগ্রামের প্রথম সারিতে ছিল ছাত্রলীগ।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা ও ১১ দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং ছিয়ানব্বইয়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনসহ সব প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছেন।
এসব আন্দোলন-সংগ্রামে শহীদ হয়েছেন সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী। আবার সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে অনেকেই সম্পৃক্ত হয়েছেন রাজনীতির আরও বৃহত্তর পরিসরে। দেশ ও জাতির অগ্রগতিতে পালন করে চলেছেন অগ্রণী ভূমিকা।
এ সংগঠনটি বিরোধী দলে থাকা অবস্থায়ও কমিটিতে পদ পাওয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়। হবারই কথা। কারণ ছাত্রলীগ একজন রাজনীতি সচেতন কিশোর, তরুণের কাছে বিশুদ্ধ অাবেগ ও ভালোবাসার নাম।
ছাত্রলীগ সম্পর্কে গর্ব করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস, ছাত্রলীগের ইতিহাস স্বাধীনতার ইতিহাস।’
এমন গৌরবময় ঐতিহ্যের এই ছাত্রলীগকে বিভিন্ন সময় নানা জায়গায় সমালোচনার মুখে ঠেলে দেন। দেওয়ার চেষ্টা করেন। অনেকে সমালোচনা করতে গিয়ে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করেন।
কথাগুলো যখন লিখছি ততক্ষণে অামার উপজেলার সম্প্রতি ঘোষণা হওয়া দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নে ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়ে গেছে।
এই কমিটিতে স্থান পাওয়া বেশ কয়েকজনকে নিয়ে নানা সমালোচনা হচ্ছে। এরা নাকি বিএনপি-জামায়াত পরিবারের। অাবার কেউ কেউ না-কি ছাত্রদল শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। এটার জন্য বিভিন্ন ছবি দেখানো হচ্ছে। এরই মধ্য কিছু ছবি ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
কিশোর বয়সে মাধ্যমিকে পড়াকালীন একটি ছেলেকে কিছু ছাত্রসংগঠন অাছে যারা দলে বেড়ানোর নানা কৌশল নেয়। সে অনুযায়ী তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও মিছিলে নিয়ে ছবি তুলে রাখে। যখন ছেলেটি তাঁর পছন্দের সংগঠনে সক্রিয় হয়। তখনই শুরু হয় নানা সমালোচনা। তাদের বিতর্কিত করার নানা চেষ্টা চলে। মানসিকভাবে তাকে অপদস্ত করার চেষ্টা চলানো হয়। যেমনটি হচ্ছে দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নে।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে মাধ্যমিকে পড়াকালীন একটি ছেলে রাজনীতি করার কতটুকু সময় পায়?
বড়লেখা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকাকালীন ও এর অাগে থেকেই দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নে পদ পাওয়া ছেলেগুলোকে অামি ব্যক্তিগতভাবে জানি। যারা পদ পাননি তাদেরকে ও আমি চিনি জানি, যারা পদ প্রত্যাশী ছিলেন তাদের সকলেও পরিচিত। যাদের নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে তারাও চেনা-জানা। প্রত্যকেই পরিশ্রমী, যোগ্য, মেধাবী ও মুজিব অাদর্শের কর্মী।
যাদের নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে তাঁরা গত প্রায় ৬ থেকে ৭ বছর থেকে দলে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তখন কেনো প্রশ্ন তুলা হয়নি?
মিছিল মিটিংসহ সকল সাংগঠনিক কাজে অংশ নিয়েছে। এখন তাদের পদ পাওয়ায় নানা প্রশ্ন তুলা হচ্ছে। এটা কেনো? কি উদ্দেশ্যে?
এদের বিতর্কিত করে কি ফায়দা?
একটি বড় সংগঠনে অনেক কর্মী থাকেন, পদ প্রত্যাশী থাকেন, প্রতিযোগীতা থাকে। কিন্তু সকলকে পদ দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই বলে কি পদবঞ্চিতরা দল ছেড়ে যান। না। অবশ্যই পরিশ্রমী, যোগ্য, মেধাবী ও মুজিব অাদর্শের কর্মীরা এটা করতে পারেন না।
বড়লেখায় অনেক সিনিয়র নেতৃবৃন্দ অাছেন। যারা ছাত্র সংগঠনের জন্য জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করেছেন। কিন্তু পদ পাননি। দিন শেষে শূন্য হাতেই ঘরে ফিরেছেন। কিন্তু অভিমান করেননি। তারাই অাদর্শ নেতা। তাদের সততা ও দলের জন্য ত্যাগ তাদের প্রতি অামার শ্রদ্ধা জাগে মনে।
অামি নিজেও দলের গঠনতন্ত্র ও সাংগঠিক নিয়মপদ পাইনি। এই তো কিছু দিন হয়। তাই বলে কি দল ছেড়েছি। ছাড়িনি। কারণ ছাত্রলীগ অামার কাছে বিশুদ্ধ একটি ভালোবাসা ও অাবেগ। কাজ করছি সংগঠনের জন্য। খোঁজ খবর রাখি সব সময় তৃণমূলের কর্মীদের। কারণ তৃণমূলের কর্মীরাই সংগঠনের প্রাণ।
পদে থেকে কাজ করলে যে, সুনাম অর্জিত হয় তার চেয়ে দ্বিগুন সুনাম হয় পদে না থেকে কাজ করলে। যিনি পদে আছেন কাজ করাটা তাঁর দায়িত্ব। আর দায়িত্বে না থেকেও কাজ করাটা সংগঠনের প্রতি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।
দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ন (কাঠালতলি) ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দসহ সকলের কাছে অামার অাহবান সমালোচনা করে কর্মীদের মনোবল ভাঙবেন না। অন্য সংগঠনকে সমালোচনার সুযোগ দেবেন না। ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করুন।
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
লেখক:
সাবেক সাধারণ সম্পাদক
বাংলােদশ ছাত্রলীগ
বড়লেখা উপজেলা শাখা।