শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

সিসিক নির্বাচন: আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর লন্ডনের ‘বাড়ি-রেস্তোরাঁ’ গেল কোথায়?



বিজ্ঞাপন

লাতু ডেস্ক:: সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচন আগামী বুধবার। নির্বাচনের ঠিক দুদিন আগে এ সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ উঠেছে।

বলা হচ্ছে, আইন অনুযায়ী হলফনামায় প্রার্থীর সব সম্পদের বিবরনী তুলে ধরতে হবে। কিন্তু আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রীর নামে লন্ডনে বাড়ি ও রেস্তোরাঁ থাকার তথ্য প্রার্থী হওয়ার জন্য দাখিল করা হলফনামায় প্রকাশ করা হয়নি।

তবে ভোট গ্রহণের আগ মুহুর্তে এমন অভিযোগ ওঠায় অনেকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে নির্বাচন কমিশনও। করনীয় কি তা নির্ধারণে অভ্যন্তরীন আলোচনা করছেন নির্বাচন কমিশনাররা এবং নির্বাচন কমিশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

প্রার্থী হওয়ার হলফনামায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বিদেশে থাকা সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে নির্বাচন কমিশনের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘প্রার্থীর সম্পদের হিসাব হলফনামায় দেখাতে হবে বলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) বলা আছে। দেশে বা বিদেশে থাকা সম্পদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই। সেক্ষেত্রে বিষয়টির ন্যায্য সুরাহা নিশ্চিত করতে কাজ করছে কমিশন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

‘যদি আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বা যে কোনো প্রার্থী, হলফনামায় তথ্য গোপন করে থাকেন, আর তা যদি কমিশনের কাছে সত্যি বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে’, বলেন এই নির্বাচন কমিশনার।

ইসি সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আনোয়ারুজ্জামান হলফনামায় অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন, ৪১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৪৮ নগদ টাকা, স্ত্রীর ৪৭ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, দুটি টেলিভিশন, একটি ফ্রিজ, দুটি এসি ও আসবাবপত্র। স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন, তিন বিঘা কৃষিজমি, ২৩ শতক অকৃষিজমি, একটি দালান ও একটি বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট।

হলফনামায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আয়ের উৎস দেখিয়েছেন, বছরে কৃষি থেকে আয় ১ লাখ টাকা, ব্যবসা থেকে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৪২ টাকা এবং বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া হিসেবে আসে ৪৭ হাজার ৫৪২ টাকা।

এ হলফনামায় লন্ডনে আনোয়ারুজ্জামানের কোনো সম্পদ থাকার তথ্য নেই।

তবে দেশের ও লন্ডনের একাধিক সূত্র বলছে, সিলেট সদরের পাঠানটুলা এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারুজ্জামান দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। তিনি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী হলি বেগম চৌধুরীর যৌথ নামে পূর্ব লন্ডনের রেডব্রিজ কাউন্সিলের ইলফোর্ডে একটি বাড়ি রয়েছে। বাড়িটি ২০০৭ সালের ৬ আগস্ট ২ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড দিয়ে কেনা হয়। বাড়িতে তিনটি শয়নকক্ষ ও দুটি বসার কক্ষ রয়েছে। বাড়িটির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৫ লাখ ৬ হাজার পাউন্ড থেকে ৬ লাখ ১৮ হাজার পাউন্ড।

এর বাইরে দক্ষিণ লন্ডনের হাইগেটের নর্থ হিল রোডে (২ নর্থ হিল) কিপলিং ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট নামে একটি রেস্তোরাঁর মালিকানায় রয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। রেস্তোরাঁটি যে স্থাপনায় অবস্থিত, তার লিজহোল্ড মালিক কিপলিং ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি। এই কোম্পানির দুজন পরিচালকের একজন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এবং অপরজন ফখরুল ইসলাম। ২০২২ সালের ৩১ মার্চে এই কোম্পানির মোট সম্পদমূল্য ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৯০৫ পাউন্ড।

এ অভিযোগের সত্যতা জানতে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি কল কেটে দেন। বিষয় উল্লেখ করে মোবাইলে ও হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয় খুদে বার্তা। সাড়া মেলেনি।

এদিকে আনোয়ারুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, লন্ডনে আনোয়ারুজ্জামানের সম্পদ রয়েছে। তবে প্রয়োজন মনে না করায় তা উল্লেখ করা হয়নি হলফনামায়।

এদিকে নির্বাচন কমিশনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, তার জানা মতে- নির্বাচনী আইন ও বিধি অনুযায়ী প্রার্থীর দেশ-বিদেশ যেখভানে সে সম্পদ থাকুক, তা হলফনামায় উল্লেখ করতে হবে। যদি তথ্য গোপন করার বিষয়টি প্রমাণ হয় তবে সেই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে।

ইসির আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, কোনো অভিযোগ না উঠলে সাধারণত নির্বাচন কমিশন প্রার্থীর হলফনামার তথ্য যাচাই-বাছাই করে না। তবে কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে তা খতিয়ে দেখা হয়। এ ধরনের ঘটনায় প্রার্থিতা বাতিলের নজিরও আছে। আনোয়ারুজ্জামানের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।