গ্রিসে দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুন হয়েছেন নবীগঞ্জ উপজেলার দুই প্রবাসী। গত মঙ্গলবার গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের আসপোগিরগো এলাকায় স্থানীয় সময় বেলা ১১টার দিকে গুলিবিদ্ধ মরদেহগুলো উদ্ধার করে গ্রিস পুলিশ। নিহত আবদুল মমিন ও শাহীন মিয়া দুজনই নবীগঞ্জ উপজেলার কামড়াখাই গ্রামের বাসিন্দা।
হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়ার পর থেকেই নিহতদের বাড়ির সদস্য ও স্বজনদের মধ্যে চলছে শোকের মাতম। দুই রেমিট্যান্স যোদ্ধার পরিবারের লোকজন অপেক্ষা করছেন কখন তাদের লাশ বাড়ি ফিরবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুই পরিবারই নিহতদের উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল।
জানা যায়, ওই গ্রামের মৃত আবদুর রাজ্জাকের ছেলে আবদুল মমিন ও একই গ্রামের নূর হোসেনের ছেলে শাহীন মিয়া কয়েক বছর আগে গ্রিসে যান। আবদুল মমিন প্রায় ১০ বছর ধরে গ্রিসে ছিলেন। প্রায় দুই বছর আগে গ্রিসে যান শাহীন। সেখানকার আসপোগিরগো এলাকায় একটি কনটেইনার কোম্পানিতে পাহারাদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন আবদুল মমিন। একই গ্রামের বাসিন্দা হওয়ায় মমিনের কর্মস্থলে যোগ দেন শাহীনও। মঙ্গলবার রাতের কোনো একসময় দুর্বৃত্তরা একজনের মাথায় এবং অন্যজনের গলায় গুলি করে হত্যা করে। পর দিন সকালে স্থানীয়রা দুই মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন।
সেখানে বসবাসরত হবিগঞ্জ জেলা অ্যাসোসিয়েশন-ইন গ্রিসের সভাপতি শফিক মিয়ার উদ্ধৃতি দিয়ে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা জানান, দুটি কনটেইনার ছিনতাইয়ের প্রস্তুতি নেয় দুর্বৃত্তরা। মমিন ও শাহীন বাধা দিলে দুর্র্বত্তরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যান। এ নিয়ে পুলিশ তদন্তে নেমেছে। মরদেহগুলো বাংলাদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
নিহত আবদুল মমিনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে রায়হান বাবা হত্যার বিচার দাবি ও লাশ দেশে আনার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। মমিনের মা গোলেছা বিবি কান্নাকণ্ঠে বলেন, সরকারের কাছে আমার একটিই দাবি- ছেলেকে শেষবারের মতো দেখতে চাই। তিনিও ছেলে হত্যার বিচার দাবি করেন।
নিহত আবদুল মমিনের চাচাতো ভাই মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রফিক জানান, দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে মমিন প্রবাসে বসবাস করে আসছেন। তিনি প্রথমে এক বছর ইরান, তুরস্কে দুই বছর থাকার পর গত ১০ বছর ধরে গ্রিসে বসবাস করছিলেন। হঠাৎ এমন ঘটনায় শুনে আমরা বাকরুদ্ধ। নিহতদের লাশ আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
এদিকে নিহত শাহীন মিয়ার বাবা নুর হোসেন জানান, অবিবাহিত শাহীন পরিবারের সচ্ছলতা ফেরানোর চিন্তা করে সাত বছর আগে দেশান্তরী হন। চার বছর ইরানে ও এক বছর তুরস্কে থাকার পর দুই বছর ধরে গ্রিসে কর্মরত ছিলেন। এ দুর্ঘটনার আগের দিনও আমাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমার বুকের ধনের মুখটা শেষবারের দেখতে চাই। তিনি সরকারের কাছে লাশ ফিরিয়ে আনার দাবি করেন।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহি উদ্দিন জানান, খবরটি শুনে তিনিও শোকাহত। লাশ দেশে ফেরাতে সরকারিভাবে যা কিছু করতে হয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।