মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:: মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় শেখ রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী (৬৫) নামে সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলার পর স্ত্রী, মেয়ে ও জামাতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে শনিবার ভোররাতে উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকীর লাশ উদ্ধার করা হয়। একই দিন রফিকুল ইসলামের বড় ভাই শেখ সিরাজুল ইসলাম সিদ্দিকী বাদী হয়ে ছয়জনকে অভিযুক্ত করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—রফিকুলের স্ত্রী মিছফা আক্তার সিদ্দিকা (৫৫), শেখ শারমিন আক্তার সিদ্দিকা (৩৫), শেখ তাজরিন আক্তার সিদ্দিকা (৩০) ও তাজরিনের স্বামী মেহেদী হাসান (৩২)।
পুলিশ, মামলার অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। দুই বছর আগে তিনি চাকরি থেকে অবসর নেন। তাঁর ঘরে পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছেন। অবসরের পর একমাত্র ছেলে শেখ আমিনুল ইসলাম সিদ্দিকীকে পেনশনের টাকায় আরব আমিরাতে পাঠান। ছেলেকে প্রবাসে পাঠানোর পর তাঁর কাছে অবশিষ্ট থাকা পেনশনের টাকার জন্য স্ত্রী মিছফা আক্তার সিদ্দিকা ও মেয়েদের সঙ্গে প্রায় দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে শেখ রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকীর ভাই ও স্থানীয় ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম পাখির উপস্থিতিতে একাধিকবার পারিবারিক সালিসি বৈঠক হয়।
সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে পারিবারিক কলহ সংক্রান্তের ঘটনায় রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকীর ভাই সিরাজুল ইসলামসহ স্বজনদের উপস্থিতিতে পারিবারিক সালিস হয়। সালিস শেষে সবাই চলে যান। পরে রাত দেড়টার দিকে সিরাজুল খবর পেয়ে তাঁর ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে দেখতে পান রফিকুলের লাশ ঘরের বারান্দায় পড়ে আছে। সিরাজুল বিষয়টি জেনে স্থানীয় ইউপি সদস্যর মাধ্যমে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রফিকুলের লাশ সুরতহাল শেষে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রফিকুলের স্ত্রী মিছফা আক্তার সিদ্দিকা, শেখ শারমিন আক্তার সিদ্দিকা, শেখ তাজরিন আক্তার সিদ্দিকা ও তাজরিনের স্বামী মেহেদী হাসানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকীর ভাই সিরাজুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার ছোট ভাই রফিকুল চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর তাঁর পেনশন থেকে পাওয়ার ৫২ লাখ টাকা নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ হতো। আমার ভাইয়ের স্ত্রী মিছফা আক্তার ও তাঁর মেয়েরা পেনশনের টাকা নিজেদের কাছে নেওয়ার জন্য রফিকুলকে প্রায়ই মারধর ও দুর্ব্যবহার করত। এ নিয়ে আমরা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যসহ বেশ কয়েকবার পারিবারিক সালিসি বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করেছি। শুক্রবার রাতেও এ সংক্রান্ত বিবাদের জন্য পারিবারিক সালিশি বৈঠকে বসে সমাধান করি। পরে আমরা আমাদের বাড়িতে চলে যাই। রাতে খবর পেয়ে রফিকুলের বাড়িতে গিয়ে দেখি তাঁর লাশ ঘরের বারান্দার মেঝেতে জখম অবস্থায় পড়ে আছে। আমার ভাইকে তাঁর স্ত্রী, মেয়ে ও মেয়ে জামাতা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম পাখি বলেন, ‘রফিকুল সম্পর্কে আমার মামা। আমার মামা রফিকুলের সঙ্গে ভাতার টাকা ভাগ–বাঁটোয়ারা নিয়ে ঝগড়া-ঝাঁটি করতেন মামি, তাঁর মেয়ে ও মেয়ে জামাতারা। একাধিকবার বৈঠকে বসে পারিবারিকভাবে বিষয়টি আমরা সমাধান করেছি। মামার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে ধারণা করছি এটি পরিকল্পিত হত্যা হতে পারে।’
থানায় পুলিশি হেফাজতে থাকার সময় রফিকুলের মেয়ে শারমীন বলেন, ‘আমাদের বাবা মানসিক রোগী ছিলেন। এ জন্য আমাদের সঙ্গে বাবা প্রায়ই খারাপ আচরণ করতেন। শুক্রবার রাতে তাঁকে খাবার দিতে বিলম্ব হওয়ায় বাবা (রফিকুল) আমাদেরকে গালিগালাজ ও মারধর করেন। পরে ঘরের ভেতর আমাদেরকে রেখে, বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে তিনি বের হয়ে যান। পরে দরজা ভেঙে বের হয়ে দেখি বাবা বারান্দার মেঝেতে পড়ে আছেন।’
কুলাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রতন দেবনাথ বলেন, ‘পুলিশ সুরতহালের সময় রফিকুলের মাথার পেছনের আঘাত এবং গলায় নখের আঁচড়ের চিহ্ন পেয়েছে। রফিকুলের ভাই সিরাজুল ইসলাম ছয়জনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দিয়েছেন। রফিকুলের স্ত্রী, মেয়ে এক মেয়ের স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছি। শনিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।’