শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

হবিগঞ্জে জীবন ঝুঁকি নিয়েও বঞ্চিত ধান কাটার শ্রমিকেরা



বিজ্ঞাপন

নিউজ ডেস্ক: বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাসে ঝড়-বৃষ্টির দাপট, সঙ্গে হঠাৎ বজ্রপাতে জীবনের ঝুঁকিও। এসবের মধ্যে প্রতিদিন রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কাজ করেন ধান কাটা শ্রমিকরা। কিন্তু স্বল্প আয়ের এ শ্রমিকদের সংসারে টানা-পোড়েন লেগে থাকলেও একই পেশায় তারা কাটিয়ে দিচ্ছেন বছরের পর বছর।

অনেকে ধান কাটা ছাড়া তেমন কোনো কাজ জানেন না, কেউ আবার দীর্ঘদিনে এ কাজে দক্ষ হয়ে ওঠার কারণে পেশা পরিবর্তন করছেন না। এজন্য শত অভাবেও এ পেশাতেই তাদের আনন্দ। তবে গেল কয়েক বছর ধরে মজুরি হিসেবে ধানের পরিবর্তে টাকা দেওয়ায় অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন শ্রমিকরা। খবর: বাংলানিউজ।

সম্প্রতি হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বদলপুর ইউনিয়নের হাওরে গিয়ে দেখা যায়, কাজের ফাঁকে খোলা আকাশের নিচে বসে খাবার খাচ্ছিলেন একদল শ্রমিক। দুপুরের তপ্ত রোদে ক্লান্ত শরীরেও কয়েকজনের ঠোঁটের কোনে ছিল এক চিলতে হাসি।


দলটিতে থাকা উপজেলার বদলপুর গ্রামের বলরাম দাস কিশোর বয়স থেকে ধান কাটার শ্রমিকের কাজ করছেন। ৩৫ বছর বয়সী বলরাম বলেন, ছোটবেলায় বাবার হাতে ধান কাটা দেখতে হাওরে যেতাম। ধীরে ধীরে এ পেশার সঙ্গে নিজেও জড়িত হতে থাকি। একইভাবে এ পেশায় জড়িয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন দলে থাকা সুমন দাস, সুরুজ মিয়া, নজরুল ইসলাম, নুরুল আমীনও।

সুরুজ আলী বলেন, পূর্ব পুরুষের আমল থেকেই ধান তোলার সাথে আমাদের সম্পর্ক। বৈশাখ ও অগ্রহায়ণ মাস আসলে ধান কাটা ছাড়া থাকতে কষ্ট হয়।

ধান কাটা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে জমি থেকে ১০ মণ ধান কেটে দিলে শ্রমিকদের দেওয়া হতো এক মণ। কিন্তু এখন অনেক জায়গায় তা করা হচ্ছে না। শ্রমিকদের মজুরি হিসেবে দেওয়া হয় টাকা। এজন্য ধীরে ধীরে ধান কাটার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা।

তারা আরও জানান, কৃষকরা প্রতি এক কেদার জমির ধান কাটার জন্য শ্রমিকদের দিয়ে থাকেন দেড় হাজার টাকা। আর দিনে তিনজন শ্রমিক এক কেদার জমি কাটতে সক্ষম। সেই হিসেবে একেকজনের প্রতিদিনকার মজুরি ৫০০ টাকা। বছরে দুইবার বোরো ও আমনের মৌসুমে প্রায় ৩ মাস তারা ধান কাটায় ব্যস্ত থাকেন। বাকি সময় কৃষিকাজ সংশ্লিষ্ট অন্য কাজে। এ আয় দিয়েই কষ্টে চলছে তাদের সংসার।

আজমিরীগঞ্জে একটি ধান কাটা দলের সরদার আমরু মিয়া বলেন, আগে একজন শ্রমিক ধান কাটার মাধ্যমে যে ধান পেতেন তা দিয়ে একটি পরিবারের সারা বছরের খোরাকি হতো। কিন্তু এখন ধানের বদলে টাকা দেয়ায় তাদের কষ্ট বেড়েছে। বছরজুড়ে চাল কিনে খেতে হয়।


তিনি আরও বলেন, শ্রমিকরা রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ধান কাটেন। এরপর সন্ধ্যা পর্যন্ত মাথায় করে ধান পৌঁছে দেন কৃষকের বাড়ি। বজ্রপাতে অনেক শ্রমিক মারাও গেছেন। এরপরও সোনার ধান কেটে দেওয়ার মজুরি হিসেবে ধান না দিয়ে টাকা দেওয়া হচ্ছে। এজন্য পছন্দের এ পেশার প্রতি অনেকেই আগ্রহ হারাচ্ছেন।