শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

যদি রাস্তায় বেরুতে হলে শেষ বিদায় নিতে হয়, তাহলে এদেশ আমার নয়



বিজ্ঞাপন

মাহমুদ এইচ খান :: শুক্রবার (১২ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টা। আমি আর রিপন দা তখন মৌলভীবাজার থেকে শ্রীমঙ্গল যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে দেখি একটি সিএনজি রাস্তায় পাশে উল্টে আছে। সাথে সাথে বাইক থামিয়ে এগিয়ে গিয়ে দেখি গাড়ির ভেতর ধুমড়ানো অবস্থায় ওই যুবককের রক্তকরণ হচ্ছে। মাথায় এমনভাবে আঘঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন যে মাথা চুপষে গেছে। তাকে বের করে আনতে সেখানে জড়ো হওয়া মানুষের সহায়তা চাইলাম। আমার ধমক ও চেচামেচিতে তারা না পারতে যেমন লোকটাকে বের করে আনতে সহায়তা করেছে। এমনভাবে তাকে ধরছিল যেন মরার আগে একটা মানুষকে অবহেলার টানাহেচড়ায় তারা মেরে ফেলতে চাইছিল। চরম অবহেলা।


বের করে আনার পর রাস্তার পাশে শুইয়ে দিতে চাইলো। আমি তখন একজনের গলা থেকে গামছা টেনে নিয়ে ছেলেটির মাথা বাঁধলাম। কিন্তু হাসপাতালে নেয়ার জন্য গাড়ি নেই। একজনের সহায়তায় জোরপূর্বক একটা গাড়ি থামিয়ে যখন হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হচ্ছিলাম তখন রিপন দা মনে করিয়ে দিলেন আমরা শ্রীমঙ্গলে যাব লাউয়াছড়ার মানববন্ধনে, খুবই জরুরি। তখন ছেলেটি নিয়ে আর হাসপাতালে যাওয়ার কেউ নেই। যেই গাড়ি থামিয়েছিলাম সে গাড়ির এক যাত্রীকে বলে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব দিলাম। সাথে আমার একটা ভিজিটিং কার্ড দিয়ে বললাম হাসপাতালে পৌঁছে আমাকে জানাতে। পরে মৌলভীবাজার মডেল থানার এসআই তাপষ দা ফোন করে বললেন লোকটি রাস্তায় মারা গেছে। তার পকেটে আমার ভিজিটিং কার্ড পাওয়া গেছে। জানিনা কোন অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। আর আমার ভিজিটিং কার্ড তার পকেটে কেন দেয়া হল। তবে আমি নিশ্চিত এটুকু দায়িত্ব নিয়ে কেউ তাকে হাসপাতালে পৌঁছায়নি।

যুবকটি সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশায় করে মৌলভীবাজার থেকে শ্রীমঙ্গল যাচ্ছিলেন। পথে মৌলভীবাজারগামী হবিগঞ্জ এক্সপ্রেসের একটি যাত্রীবাহী বাস এসে সামনে পড়লে বিপরীত থেকে আসা অপর একটি অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তার অটোরিশাটিকে ধাক্কা দেয়। যেটুকু জানতে পারলাম দু’টি সিএনজি চালিত অটোরিকশার মধ্যকার এই দুর্ঘটনা বাধিয়েছে হবিগঞ্জ এক্সপ্রেস। তার ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত দু’টি গাড়ির চালকই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হন।


নিহত ওই যুবককে রক্তাক্ত অবস্থায় আমি উদ্ধার করেছি। মানুষের এত রক্ত এর আগে দেখিনি। সারাদিন থেকে বারবার এই চিত্র চোখে ভাসছে। চরম মাত্রায় ঘৃণা হচ্ছে এই দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনার প্রতি। ঘৃণা হচ্ছে আমার এই সংকীর্ণ অবস্থানের প্রতি। ঘৃণা হচ্ছে দেশ নিয়ে উঁচু বাক্য ছড়ানোর কথা ভেবে। আসলে যে আমরা নিচের দিকেই ধাবছি।

হবিগঞ্জ এক্সপ্রেসের দাপুটে চলাচলে এরকম আর কত প্রাণ যাবে? এমন প্রশ্ন করলে উত্তর সহজভাবে দেয়া যাবে। যতদিন হবিগঞ্জ এক্সপ্রেস আছে ততদিন তাদের মানুষের প্রাণ কাড়তেই হবে। লম্বা হাত-পায়ের জোরে প্রাণনাশী স্বভাবে তারা সেরা পরিবহন সেবা দাতা হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের থেকে পুরষ্কারও পেতে পারে। আমি তাতে একদম অবাক হব না। গত ৫ বছরের হিসেব কষে দেখেন তাদের কারণে কত মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। কত মানুষের রক্ত সড়কে মিশে গেছে তাহলে আপনিও অবাক হবেন না।


আমাদের অবক্ষয় কোথায় আর এই দেশের ভবিষ্যৎ কী তা এখানেই স্পষ্ট। চোখের সামনে এমন মৃত্যু না হোক। এমন দেশ আর দেখতে চাইনা। যেখানে মানুষের প্রাণের নিরাপত্তা নেই। যেখানে রাস্তায় বের হলে বাড়ি থেকে শেষ বিদায় নিয়ে আসতে হয়। আর যদি এমনই হয় তাহলে এদেশ আমার নয়।