বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

ওসমানীনগরে চেয়ারম্যান পুত্রের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা
খবর: মানবজমিন

খবর: মানবজমিন



বিজ্ঞাপন

স্বামী সৌদি আরব। স্ত্রী ও তিন বছরের সন্তান দেশে। কম্পিউটার ক্লাসে যাওয়ার সুবাদে ৯৯+ দোকান থেকে পরিচয় চেয়ারম্যানের ছেলের সঙ্গে। এক পর্যায়ে প্রবাসীর স্ত্রীর মোবাইল নাম্বার নিয়ে কথা বলা। তারপর শুরু হয় মোবাইলে প্রেম ও শারীরিক সম্পর্ক। আর ওই প্রবাসীর স্ত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বউ পরিচয় দিয়ে দীর্ঘ ৭ মাস সিলেটের বিভিন্ন স্থানে ভাড়া বাসা নিয়ে করেছে রাত্রিযাপন। কিন্তু ওই প্রবাসীর স্ত্রী যখন তার প্রেমিককে বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করেন, তখন তার প্রেমিক সিলেট জেলার ওসমানীনগর থানার উসমানপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও কুতুবপুর থানা গাঁও গ্রামের বাসিন্দা ময়নুল আজাদ ফারুকের ছেলে লয়েছ আহমদ সুলতান (২৫) তাকে বিয়ে না করে, প্রবাসীর স্ত্রী ও তার তিন বছরের শিশুকে আটক রেখে মারপিট করে এবং ওই প্রবাসীর স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে পুনরায় শারীরিক সম্পর্ক করতে চায়।

পরে সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী কৌশলে পালিয়ে এসে গত সোমবার সিলেটের ওসমানীনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের অভিযোগে [মামলা নং-০৭(১০)১৮] দায়ের করেন। এই মামলা দায়েরের পর থেকে পলাতক রয়েছে উসমানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের ছেলে সুলতান।

প্রবাসীর স্ত্রী তার মামলায় উল্লেখ করেন, ওসমানীনগর থানার দয়ামীর শামীম মিয়ার বাড়িতে তিনি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। তার স্বামী সৌদি আরবে থাকেন। তার তিন বছরের একটি শিশু ছেলেও রয়েছে। তিনি স্থানীয় একটি কম্পিউটার সেন্টারে কম্পিউটার শিখতেন। তাছাড়া দয়ামীর বাজারে লয়েছের রয়েছে একটি ৯৯+ এবং ওয়ালটনের শো-রুম। ওই প্রবাসীর স্ত্রী দুটি দোকান থেকে প্রায় সময় নানা ধরনের জিনিস ক্রয় করতেন। এক পর্যায়ের চেয়ারম্যানের ছেলে তার নাম্বার দিয়ে প্রবাসীর স্ত্রীকে বলে কিছু লাগলে ফোন দেয়ার জন্য। প্রবাসীর স্ত্রী একবার ফোন করে বলেন, তার জন্য কিছু কসমেটিক ঢাকা থেকে আনতে। নাম্বার পাওয়ার পর থেকে লয়েছ প্রায় সময় ফোন দিয়ে প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতো ও কু-প্রস্তাব দিত। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যানের ছেলে প্রবাসীর স্ত্রীকে ফোন করে বলে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক না করলে, সে ফোনের রেকর্ড প্রবাসী স্বামীর কাছে বলে দিবে। এভাবে সে প্রবাসীর স্ত্রীকে ব্লাক মেইল করে এবং বিয়ের প্রলোভন দেখায় ও প্রবাসী স্বামীকে তালাক দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে এবং তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন না করলে ছেলেকে হত্যার ভয় দেখায়।

এক পর্যায়ে দু’জন মিলে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফিরা শুরু করে। আর যখনই লয়েছ তার প্রেমিকাকে নিয়ে বেড়াতে যেত তখনই তার বাবা চেয়ারম্যানের গাড়ি নিয়ে যেত। এভাবে তাদের সম্পর্ক তৈরি হয়। সেই সুবাদে চলতি বছরের ১৫ই এপ্রিল লয়েছ প্রবাসীর স্ত্রীর বাসায় এসে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। পরবর্তীতে ৩০শে জুন সিলেট নগরীর মজুমদারী ৮৮/সি নং বাসায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে ওঠে লয়েছ। সেখানে কিছুদিন পর পর লয়েছ গিয়ে রাত্রীযাপন করে ও শারীরিক মেলামেশা করে। কিছুদিন পর লয়েছকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে মজুমদারি বাসা থেকে এনে দয়ামীর আব্বাস আলীর বাড়িতে রাখে প্রবাসীর স্ত্রীকে। পরবর্তীতে প্রবাসীর স্ত্রী সিলেট নগরে তার নানার বাসায় চলে যায়। এরপর ৯ই অক্টোবর বিকাল অনুমান সাড়ে তিনটায় লয়েছ এসে বলে তোমার আমার বিয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে সঙ্গে যেতে হবে। একথা বলে তাদের নতুন বাড়িতে নিয়ে যায় প্রবাসীর স্ত্রীকে। সেখানে গিয়ে প্রবাসীর স্ত্রী বিয়ের কোনো আয়োজন না দেখে লয়েছকে প্রশ্ন করলে সে বিবাহ করবে বলে দৈহিক মিলনের প্রস্তাব দেয়। তখন প্রবাসীর স্ত্রী রাজি না হওয়ায় তাকে মারপিট করে ও তার ছেলের গলায় চুরি ধরে হত্যার হুমকি প্রদান করে সারা রাত আটক রেখে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কয়েকবার ধর্ষণ করে। পরদিন সকালে কৌশলে লয়েছের বাড়ি থেকে বের হয়ে আশপাশের লোকজনকে বিষয়টি অবগত করে বিচার প্রার্থী হন। লয়েছের বাবা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিচার কেউ করতে পারেনি। ফলে ধর্ষিতা সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে ওসিসি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করে থানায় মামলা দায়ের করেন।

উসমানপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ময়নুল আজাদ ফারুক জানান, তার ছেলের বিরুদ্ধে কাল্পনিক একটি ঘটনা সাজিয়ে মামলা করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল মামুন জানান, চেয়ারম্যানের ছেলে দ্বারা ধর্ষণের শিকার হওয়া প্রবাসীর স্ত্রী থানায় অভিযোগ দাখিল করলে আমরা মামলা নেই। আর ধর্ষক পলাতক রয়েছে। তবে তাকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।