তারেক মাহমুদ:
নানাবিধ সমস্যা নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলছে বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের কুমারশাইল নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত করার ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রতিষ্ঠানটিতে নির্মাণ করা হয়নি কোনো একাডেমিক ভবন। পরিত্যক্ত দালানে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন ক্লাস করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে এখানে প্রতিদিন ক্লাস করছে। আসবাবপত্রের অভাবে শিক্ষার্থীরা স্যাঁতস্যাঁতে মেঝেতে বসে ক্লাস করে। শ্রেণীকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত টিন শেড ঘরটিতে ফ্যান ও পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা না থাকায় অনেকটা দমবন্ধ পরিবেশে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত কুমারশাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে বিধি মোতাবেক ২০১৩ সালে নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত করা হয়। গ্রামবাসীর অর্থায়নে নির্মিত একটি টিন-শেড ঘর ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত একটি জরাজীর্ণ দালানে মাস্টার রোলে নিয়োগপ্রাপ্ত ৪জন শিক্ষক এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ে পাঠদান শুরু করা হয়।
এলাকাবাসী হুইপ আলহাজ্ব শাহাব উদ্দিন এমপি’র নিকট একাডেমিক ভবনের জোর দাবি জানালে ২০১৭ সালে শাহাব উদ্দিন এমপি কুমারশাইল চা বাগানের বিদ্যুৎ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসে বিদ্যালয়ের ভবন অনুমোদনের খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার কথা ঘোষণা দেন। কিন্তু অজানা কারণে তা আর বাস্তবায়ন হয়নি।
অবকাঠামো, শিক্ষক, শিক্ষা উপকরণ এবং আসবাবপত্রের চরম সংকট নিয়েও ভালো ফলাফলের ধারা অব্যাহত রেখেছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। তবে পড়ালেখার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে দ্রুত অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ করা অতীব জরুরি বলে মনে করছেন প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে গিয়ে বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের বেহাল দশা লক্ষ করা যায়। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন হিসেবে ব্যবহৃত পরিত্যক্ত দালানটিকে সারিয়ে তোলতে বারবার মেরামত করে যাচ্ছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শত চেষ্টার পরও দালানের বেহাল দশা কাটছে না বরং দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে, ঝরে পড়ছে পলস্তারাগুলোও। মেঝের ঢালাই উঠে গিয়ে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। বৃষ্টির সময় টিনের চালার ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে। ভেজা ও স্যাঁতস্যাঁতে মেঝেতে মাধুর পেতে বসে ক্লাস করে বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীরা।
এছাড়াও বিদ্যালয়ের প্রাথমিক স্তরের একমাত্র একাডেমিক ভবনটিতেও দেখা দিয়েছে একাধিক ফাটল। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের ফলে নির্মাণের অল্পদিনেই এতে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষ। একটি গভীর নলকূপ স্থাপনের কথা থাকলেও তা মাত্র ৪০ ফুট গভীরতায় স্থাপন করার ফলে এ নলকূপটির দুর্গন্ধযুক্ত ও পানের অযোগ্য পানি ব্যবহার করতে পারছেন না শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিক উদ্দিন শাহবাজপুরডটকম’কে জানান- মাননীয় হুইপ আলহাজ্ব শাহাব উদ্দিন এমপি মহোদয় গতবছর কুমারশাইল চা বাগানের বিদ্যুৎ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসে কুমারশাইল স্কুলের একাডেমিক ভবন অনুমোদনের কথা ঘোষণা দিলেও ভবনটি এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে দ্রুত ভবনটি বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আবেদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে মাস্টার রোলে পাঠ দানকারী শিক্ষকরা অনেক দূর থেকে কষ্ট করে এসে প্রতিদিন ক্লাস নেন। তাদেরকে যথার্থ সম্মানী দেয়া সম্ভব হয় না। প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ করা জরুরি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুছ জানান, প্রতিষ্ঠানের বিধি মোতাবেক আরো ৬ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাওলাদার আজিজুল ইসলাম মুঠোফোনে শাহবাজপুরডটকম’কে বলেন, প্রাথমিক স্তর থেকে নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পর্যন্ত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগের আওতায় রয়ে গেছে। সুতরাং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই পাঠদান করবেন। এখানে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে কি না এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। আর ভবন নির্মাণের বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারে নেই। শিক্ষা উপকরণ সংক্রান্ত কোন প্রয়োজন হলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।