একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনে ভোট শূন্য নয়, এবার ভোট বিপ্লব চান বিএনপি মনোনিত প্রার্থী নিখোঁজ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর সহধর্মিনী তাহসিনা রুশদী লুনা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ইলিয়াসকে ভালোবেসে যে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যাননি, সেই ভোটাররা আসন্ন নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে ভোট বিপ্লব ঘটাবে বলে প্রত্যাশা তার। বিগত নির্বচানে ভোট কেন্দ্রে না গিয়ে নজির সৃষ্টি করেছিল ইলিয়াসের জন্মস্থান রামধানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটাররা।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে ঢাকার বনানী এলাকা থেকে গাড়ি চালকসহ নিখোঁজ হন এম ইলিয়াস আলী। প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে সিলেট। তার সন্ধানের দাবিতে নির্বাচনী এলাকা সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনের সাধারণ নেতাকর্মীরা রাজপথে নেমে আসে। ওই আসনের ২ বারের এমপি ছিলেন তিনি। ইলিয়াসের সন্ধানের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে ২৩ এপ্রিল পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান মনোয়ার হোসেন (২৬) ও জাকির হোসেন নামে দুই কর্মী।
ইলিয়াসের নিখোঁজের বিষয়টি তার নির্বাচনী এলাকার লোকজনকে কতটা মর্মাহত করেছিল তার প্রমাণ দেন সাধারণ ভোটাররা। দগদগে ক্ষত নিয়ে ইলিয়াসের জন্মস্থান রামধানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটাররা কেউই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে যায়নি।
পেছনে তাকালে দেখা যায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ইলিয়াস আলীর গ্রামের বাড়ি রামধানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কাস্টিং ভোটের সংখ্যা ছিল শূন্য। এই কেন্দ্রে মোট ভোট ছিল ১ হাজার ৯১০টি। দিন শেষে শূন্য ভোট বাক্স নিয়ে ফিরতে হয় প্রিসাইডিং ও পুলিং অফিসারদের। আশপাশের কেন্দ্রগুলোরও অবস্থা ছিল শোচনীয়। অলংকারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট ছিল ১ হাজার ১০৬টি। ভোট কাস্ট হয় মাত্র ২টি। রামপুর কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সেদিন ভোট পড়েছিল মাত্র ৮টি, বন্ধুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কাস্ট হয়েছিল ১১টি।
মির্জারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ২ হাজার ৬৬টি ভোটের মধ্যে ভোট কাস্ট হয়েছিল মাত্র ৯৬টি। বেশিরভাগ ভোট কেন্দ্রেরই এমন চিত্র ছিল সেদিন। যদিও সেই ভোটে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী ছিল না। জোটবদ্ধ ভোট হওয়ার কারণে জাতীয় পার্টিকে সেই আসনটি ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। বিএনপিও তখন নির্বাচনে আসেনি।
আসন্ন একাদশ নির্বাচনেও জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বতর্মান সংসদ সদস্য ইয়হিয়া আহমদ চৌধুরীর বিপরীতে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা এবার বিএনপি মনোনীত প্রার্থী। কৌশলগত কারণে তার ছেলে ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াস অর্নবকে সঙ্গে নিয়ে মা-ছেলে দুজন মনোনয়ন দাখিল করেছেন।
তাহসিনা রুশদী লুনার মতে, তার স্বামীকে ভালোবেসে যারা পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক মেলে ধরতে পারে, তারা ধানের শীষের বিজয়ে জীবন বাজি রাখতেও পারে। তিনি জানান, ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথের জনগণ তার স্বামী নিখোঁজের জবাব দেবে। আগেরবার সুযোগ পায়নি, ভোট না দিয়ে প্রতিবাদ করেছে, এবার ভোট দিয়ে ইলিয়াসের প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ করবে।
প্রসঙ্গত, বুধবার (২৮ নভেম্বর) হযরত শাহজালালের (রহ.) মাজার জিয়ারত শেষে শাশুড়ির দোয়া নিয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন তাহসিনা রুশদী লুনা। স্বামী নিখোঁজের পর থেকে তিনিই হাল ধরেন সিলেট-২ আসনের বিএনপির নেতাকর্মীদের।