রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

গোলাপগঞ্জে অভিযোগ নেই বিএনপি প্রার্থীর, নৌকার প্রার্থীর ভিন্ন কথা, ক্ষুব্ধ আ’লীগের দুই বিদ্রোহী



বিজ্ঞাপন

নিউজ ডেস্ক: আসন্ন গোলাপগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে তিন জনই আওয়ামী লীগের নেতা। অপরজন বিএনপির। নির্বাচনে নৌকা প্রার্থী হিসবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রুহেল আহমদ ও ধানের শীষের প্রার্থী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী শাহিন। তাদের বিপরীতে ভোট যুদ্ধে মাঠে রয়েছেন গোলাপগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল ও সাবেক মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু।


৩০ জানুয়ারির এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পৌরসভাজুড়ে চলছে জোর প্রচার। মেয়র-কাউন্সিলর সব প্রার্থীই ব্যস্ত ভোটারদের মন জয় করতে। পোস্টারে ছেয়ে গেছে পৌর এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার অলি-গলিও।

নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই বিএনপি প্রার্থীর। অভিযোগ আছে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর। আর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া অপর দুই নেতা ক্ষুব্ধ দলটির ওপর।

একাধিক প্রার্থী হওয়ায় কিছুটা বিপাকে পড়েছে আওয়ামী লীগ। একক প্রার্থী থাকায় এখন পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ বিএনপি। স্বতন্ত্র প্রার্থীয় হওয়ায় দুই নেতাকে এরই মধ্যে বহিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগ।

চার মেয়র প্রার্থীই চষে বেড়াচ্ছেন পুরো পৌর এলাকা। মঙ্গলবার প্রচারের ফাঁকে ফাঁকেই পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় কথা হয় তাদের সঙ্গে।

নৌকার প্রার্থী রুহেল আহমদ অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার নির্বাচনি পোাস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। অনেক জায়গায় পোস্টার টানাতে বাধা দেয়া হচ্ছে। নির্বাচনি প্রচারেও অনেক ক্ষেত্রে বাধা দেয়া হচ্ছে। এ রকম চলতে থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে।’

বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন বলে জানান রুহেল। তবে কারা এমনটি করছে এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি। রুহেল বলেন, এটি পুলিশ ও নির্বাচন কমিশন খোঁজ নিয়ে দেখুক।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগের দুই নেতার দাবি, দলের মনোনয়ন তাদেরই প্রাপ্য ছিল। বর্তমান মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তাই নিজেকে দলের মনোনয়নের প্রধান দাবিদার মনে করেন তিনি।


গত নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় এবার তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য সূত্র।

দলীয় মনোনয়ন না পেলেও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি রাবেল। জগ প্রতীক নিয়ে আছেন ভোটের লড়াইয়ে। মনোনয়ন না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আমিনুল ইসলাম রাবেল বলেন, ‘আমি বর্তমান মেয়র। পৌর আওয়ামী লীগেরও সভাপতি। অথচ এবার আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়নি। কারণ মনোনয়ন এখন উচ্চবিত্তের দখলে চলে গেছে। অর্থের লড়াইয়ে আমি অযোগ্য হয়ে গেছি।

‘দল অযোগ্য মনে করলেও পৌরবাসী আমাকেই চায়। তাদের শক্তিতেই আমি এবার প্রার্থী হয়েছি।’

গোলাপগঞ্জ পৌরসভার প্রথম মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু। টানা দুইবারের এই মেয়র গত নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান।

কিন্তু জিততে না পারায় এবার আর তাকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয়নি বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন।

দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে থাকা পাপলুর প্রতীক মোবাইল ফোন।

দলের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে সাবেক এই মেয়র বলেন, ‘গত নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যিনি (আমিনুল ইসলাম রাবেল) আমার বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন তাকে পরবর্তীতে দল থেকে পুরস্কৃত করা হয়। নির্বাচনে বিজয়ের পর তাকে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। আর এবার যাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে গত নির্বাচনে তিনি বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘পৌরবাসী আমার পক্ষে আছে। তাদের সমর্থন নিয়েই আমি এবার প্রার্থী হয়েছি।’

ক্ষমতাসীন দল যখন বিদ্রোহীদের সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছে, তখন বিএনপির প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী শাহীনের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে রয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এতে কিছুটা স্বস্তিতে থাকা শাহীন মনে করেন, নির্বাচনের পরিবেশ এখন পর্যন্ত ভালো।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ এখন পর্যন্ত ভালো। আমার দলও ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে আছে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনি পরিবেশ ঠিকঠাক থাকলে ঐক্যের শক্তিতে আমা বিজয়ী হবো। আশা করছি, এবার ভোট ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হবে না।’

২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থী ছিলেন শাহীন। সে নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী ছিলেন। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীই মেয়র হয়েছিলেন এখানে। সে নির্বাচনের আগেও পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন বিএনপির প্রার্থী শাহীন। তবে নির্বাচনের দিন দুপুরে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

নির্বাচনের পরিবেশে যাতে বিঘ্ন না ঘটে সে ব্যাপারে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ও রির্টার্নিং অফিসার ফয়সল কাদের।


তিনি বলেন, কেউ আচরণবিধি না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।

উল্লেখ্য, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে ৯টি ওয়ার্ডে ৪৭ প্রার্থী পুরুষ কাউন্সিলর ও ৩টি ওয়ার্ডে ১০ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ও ৪ মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে মোট ২২ হাজার ৯শ ১৬ জন ভোটার রয়েছেন। পুরুষ ভোটার ১১ হাজার ৬শ ৯৪ জন এবং মহিলা ভোটার ১১হাজার ৩শ ১৯ জন।