মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে দুই ভাই-বোন ১৫ বছর ধরে গৃহবন্দি রয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। তাদের দু’জনের চেহারার অবস্থা এমন হয়েছে যে, মানুষ দেখে পালিয়ে যায়। অন্যদিকে সূর্যের আলো তাঁরা সহ্য করতে পারে না।
কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকার উত্তর তিলকপুর গ্রামের দরিদ্র কৃষক পরিবারের মো. ফখরুল ইসলাম (আফরুজ) ও শিরী বেগমের দুই ছেলে-মেয়ে মো. সিরাজুছ ছালেকিন (২০) ও মোছা. আবেদা আক্তার রিমা (১৭) জন্মের ৩ বছর পর থেকে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়। আক্রান্তের পর চোখের সামনে ছেলে মেয়ের এমন অবস্থা দেখে তাদের বাবা তাদেরকে গ্রাম্য কবিরাজের কাছে নিয়ে যান। অন্ধবিশ্বাসের কারণে ক্রমাগত রোগটি বাড়তে থাকে। মো. সিরাজুছ ছালেকিনের মুখমন্ডল ও শরীরে রোগটি ক্রমাগত বাড়তে থেকে মারাত্মক আকার ধারণ করে।
আবেদা আক্তার রিমার রোগটিও বেড়ে গিয়ে মুখ ও শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের এই অবস্থাতে ঘরের বাইরে বের হওয়া খুবই কষ্টসাধ্য। ভাই-বোন দীর্ঘদিন যাবত এই ভয়ংকর রোগের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে।
আর্থিক অস্বচ্ছলতা ও অজ্ঞতার কারণে অসহায় ফখরুল ইসলাম কোনো সুচিকিৎসা করাতে পারছেন না। ভালো কোনো ডাক্তারও দেখাতে পারেননি।
একদিকে রোগের যন্ত্রণা, অন্যদিকে সংসারের অনটনে চিকিৎসার অভাবে যেন তাঁরা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। এমনই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন বাবা মো. ফখরুল ইসলাম আফরুজ।
এদিকে আর্থিক সাহায্য চেয়ে সম্প্রতি কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
স্থানীয় কমলগঞ্জ সদর ইউপি সদস্য রুপেন্দ্র কুমার সিংহ জানান, ভয়ংকর বিরল রোগে আক্রান্ত ছেলে-মেয়েকে শুধুমাত্র টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা সেবা দিতে পারছেন না দরিদ্র পিতা মো. ফখরুল ইসলাম আফরুজ। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে সাহায্য চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে একটি লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর চিকিৎসক সৈয়দ শওকত আলী জানান, এটি জিনগত সমস্যা হতে পারে। রোগীর চামড়ার কোষে মেলানিন না থাকায় সূর্যের আলোর অতিবেগুনী রশ্মিতে কোষের ডিএনএ নষ্ট হয়ে যায়। ক্রমাগত অতিবেগুনী রশ্মির সম্মুখীন হলে ডিএনএ নষ্ট হয়ে ক্যান্সার হতে পারে। প্রাথমিকভাবে তিনি ধারনা করছেন রোগটি Xeroderma Pigmentosam হতে পারে। এটি একটি বিরল ধরনের রোগ। ছেলে ও মেয়েকে সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আশেকুল হক জানান, বিরল রোগে আক্রান্ত ভাই-বোন এর বিষয়টি আমি আগে জানতাম না। পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন করার পর জরুরি ভিত্তিতে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্যসহ সব ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।