রবিবার, ১২ মে ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

গোলাপগঞ্জে বছর জুড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ জনের প্রাণহানি, আহত অর্ধশতাধিক



বিজ্ঞাপন

জাহিদ উদ্দিন, গোলাপগঞ্জ:
পূর্ব সিলেটের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক। বর্তমানে এই সড়কটি যাত্রীদের কাছে মুত্যুর কুপে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি যানবাহন যেন সর্বোচ্চ গতিতে ধেয়ে আসা মৃত্যুদূত। চোখের পলকে ঘটে যায় দুর্ঘটনা। যে কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। এ মিছিলে শামিল হচ্ছে সব শ্রেণী পেশা, বয়সের মানুষ। দুর্ঘটনায় স্বজন হারানোর আর্তনাদে ভারি হচ্ছে বাতাস। পঙ্গুত্বের অভিশাপতো আছেই। পরিবারের নেমে আসে আর্থিক কষ্টও। আইনের যথেষ্ট প্রয়োগ না থাকা, অসচেতনতা ও অদক্ষ চালকের কারণেই গোলাপগঞ্জ তথা সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জন্যই এ সড়কে অকালে ঝরছে অনেক তাজা প্রাণ। একটি দুর্ঘটনার রক্তের দাগ শুকানোর আগেই আরেকটি প্রাণের বিনিময়ে রক্তে লাল হয় এ সড়কের কোনো না কোনো স্থান।

২০১৮ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গোলাপগঞ্জ উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় তিন কলেজ শিক্ষার্থীসহ মোট ৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫০ জন যাত্রী।

জানা যায়, সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের মূলত গোলাপগঞ্জ উপজেলার পাঁচমাইল এলাকা থেকে-রানাপিং বাজার পর্যন্ত এলাকায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। উপজেলার এ এলাকার ভিতরে এ বছরের প্রথম থেকেই বেশ কয়েকটা বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে যার ক্ষত এখনো মুছে যায়নি উপজেলাবাসীর।

২০১৮ সালের শুরুর দিকে উপজেলায় কোনো সড়ক দুর্ঘটনা না ঘটলেও ২৯ মার্চ সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের উপজেলার দাঁড়িপাতন এলাকায় যাত্রীবাহী বাস উল্টে খাদে পড়ে ঘটনাস্থলেই বাসের হেল্পার নিহত হন। আহত হন আরো ৩৮ জন যাত্রী। বাসে থাকা যাত্রীরা দাবি করেন, ড্রাইভার মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে আরেকটি বাসকে ওভারটেকিং করতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

২৯ এপ্রিল সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের হেতিমগঞ্জের নাশাগঞ্জ নামক স্থানে যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে আব্দুল ওদুদ নামে এক যুবক নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় আহত হন আরো ৫ জন। নিহত আব্দুল ওদুদ উপজেলার সদও ইউনিয়নের রাণাপিং এলাকার বাসিন্দা।

১৯ মে দুপুরে আবারো সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক রক্তে লাল হয়। এ সড়কের হেতিমগঞ্জ কায়স্থগ্রাম নয়া মসজিদেও সামনে প্রাইভেটকার ও সিএনজি অটোরিকশার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে এতে ঘটনাস্থলেই এমি বেগম (২০) নামের এক কলেজ ছাত্রী নিহত ও শিশুসহ আরো ৩ জন পথচারী গুরুতর আহত হন। নিহত এমি বেগম উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের লরিফর নওয়াগাও গ্রামের জুরু মিয়ার মেয়ে। আহতরা হলেন- একই এলাকার আতাউর রহমানের মেয়ে জেনি আক্তার (২৪) ও সুমাইয়া আক্তার (৬), তুরন মিয়ার পুত্র তাউহিদ তাওহিদ আহমদ (৫)।

১৩ জুলাই বাজারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় শিউলি আক্তার রিমি (২১) নামের আরেক কলেজ ছাত্রীর মৃত্যু হয়। নিহত এমি গোলাপগঞ্জ পৌরসভার পূর্ব ঘোষগাওঁ গ্রামের নোমান আলীর মেয়ে এবং সিলেট এমসি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। এ সময় নিহতের চাচাতো ভাই পৌর কাউন্সিলর জবান আলীর ছেলে জুমান আহমদ (২২) আহত হন।

৭ আগস্ট সকালে উপজেলার হেতিমগঞ্জ মোলাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সাথে সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে সিএনজি চালক সুরুজ আলী (৪০) ও তার বড় ভাই তরমুজ আলী (৪৫) হাসপাতালে নেওয়ার পথে নিহত হন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২দিন পর নিহত হন গোলাপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান।

১৪ ডিসেম্বর রাতে গোলাপগঞ্জ-ঢাকাদক্ষিণ সড়কের রাঙ্গাডহর বাজারের নিকটে বাস ও সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায় কলেজ শিক্ষার্থী আব্দুল মালিক (২০)। আব্দুল মালিক ঢাকাদক্ষিণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ও ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের ধারাবহর গ্রামের ফয়েজ আহমদের ছোট পুত্র। এ দুর্ঘটনায় সিএনজি চালকসহ আহত হন আরো ৩জন যাত্রী।

এসব সড়ক দুর্ঘটনা গাড়ি চালকদের অবহেলা ও বেপরোয়া গাড়ি চালানোকে দায়ি করেছেন উপজেলার সচেতন মহল। এছাড়াও তারা গাড়ির অতি গতি, গাড়ি চালানোর লাইসেন্স না থাকা, চালকের অদক্ষতা, সড়কের বেহাল অবস্থা, গাড়ির ফিটনেস না থাকা এসব কারণেই সড়কে প্রতিনিয়ত প্রাণহানি ঘটছে বলে দাবি করেন।

এ ব্যাপারে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর গোলাপগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি ইলিয়াছ বিন রিয়াছত জানান, সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক বিশেষ করে গোলাপগঞ্জের সীমানায় বেশিরভাগ সড়কে দুর্ঘটনা অদক্ষ চালক ও তাদের বেপরোয়া মনোভাব এবং প্রতিযোগিতার কারণেই ঘটছে। ডিবাইডার না থাকাও সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ বলে জানান তিনি।

গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ওসি (অপারেশন) দেলোয়ার হোসেন জানান, গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশ সব সময় গাড়ি চালকদের লাইসেন্স, গাড়ির কাগজ যাচাই বাছাই করছে। ট্রাফিক পুলিশও এ ব্যাপারে সর্বদা সতর্ক রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে পুলিশ, গাড়ি চালকদের পাশাপাশি যাত্রীদেরও সচেতন হওয়ার আহবান জানান তিনি।