বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

সিলেট-২: ‘ভাগ্যগুণে’ এমপি লন্ডনি মোকাব্বির
খবর: কালের কন্ঠ

খবর: কালের কন্ঠ



বিজ্ঞাপন

এক সপ্তাহ আগেও সিলেট-২ আসনের বেশির ভাগ ভোটার যাঁকে চিনত না, এখনো বেশির ভাগ ভোটার যাঁকে সামনাসামনি দেখেনি, সেই মোকাব্বির খানই এখন আসনটির সংসদ সদস্য। অথচ গণফোরামের এই প্রার্থীর নির্বাচনে থাকারই কথা ছিল না। প্রবাসী মোকাব্বির নিজের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে নির্বাচন কমিশনেও গিয়েছিলেন। কিন্তু দশ মিনিট দেরিতে উপস্থিত হওয়ায় তাঁর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার হয়নি।

নাম থেকে গেল নির্বাচনে। মোকাব্বির চলে গেলেন লন্ডনে। কিন্তু সেই থেকে যাওয়াটাই ঘটনাচক্রে মোকাব্বিরের সামনে খুলে দিল সংসদে প্রবেশের পথ। তিনি বিএনপির সমর্থন নিয়ে ৩০ হাজার ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে পরাজিত করেন। বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর থানা এলাকার অনেকেই মোকাব্বিরকে বলছে, ‘বাই চান্স এমপি’।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির একজন নেতা বলেন, ‘মোকাব্বির খান তো বাই চান্স এমপি। তাঁকে তো এলাকার মানুষ চেনে না। লুনা ভাবি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় ভোটারদের কাছেও অপরিচিত মোকাব্বির খানকে আমরা সমর্থন দিয়েছি।’

বিশ্বনাথ উপজেলার সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক মধু মিয়া বলেন, ‘এলাকায় মোকাব্বির খানকে কখনো দেখিনি। তবে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এলাকার মানুষের মুখে মুখে তাঁর নাম শোনা যায়। তিনি এখন এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তবে হয়তো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে দেখা হতে পারে। তবে তিনি যেভাবে সপ্তাহখানেক আগে মাঠে নেমে জয়ী হয়েছেন এর জন্য কপাল লাগে।’

মোকাব্বির খানের নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় মঙ্গলচণ্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু। এরপর তরুণ বয়সে পরিবারের সঙ্গে ব্রিটেনে পাড়ি দেওয়া মোকাব্বির দেশে থাকাকালে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। একসময় ড. কামাল হোসেনের হাত ধরে গণফোরামে যোগ দেন। প্রবাসে থাকলেও বছরে অন্তত দুই থেকে তিনবার দেশে আসেন মোকাব্বির। তবে নিজের নির্বাচনী এলাকায় কখনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাঁকে দেখা যায়নি। তবে দেশে এলেই ঢাকায় যেতেন কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সখ্যের সুবাদে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি গণফোরামের উদীয়মান সূর্য প্রতীকে গণফোরামের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। শুরু থেকেই বলে আসছিলেন নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী বিএনপি প্রার্থী তাহমিনা রুশদীর লুনা যদি নির্বাচনে থাকেন তাহলে তিনি সরে যাবেন। নির্বাচন কমিশনে প্রথম দফা মনোনয়ন বাতিলের পর আবার যখন তা ফিরে পেলেন তখন মোকাব্বির কথা অনুযায়ী মনোনয়ন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাহারের আবেদন জমা দিতে ১০ মিনিট দেরি হয়ে যাওয়ায় তা গ্রহণ করেনি নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনে প্রার্থী তালিকায় নাম থেকে গেলেও নিজের কাজ পড়ে যাওয়ায় লন্ডনে ফিরে যান তিনি।

ভোটগ্রহণের মাত্র এক সপ্তাহ আগে তাহমিনা রুশদীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। আদালতের এই সিদ্ধান্তের পর এ আসনে কাকে সমর্থন দেবে তা নিয়ে বিএনপিতে তোড়জোড় শুরু হয়। তখন বিএনপির সামনে দুইটি বিকল্প ছিল। ২০ দলীয় জোটের শরিক খেলাফত মজলিসের মো. মুনতাসির আলী ও ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরামের মোকাব্বির খান। প্রথমে মুনতাসির আলীর নাম শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত বিএনপির সমর্থন যায় মোকাব্বির খানের দিকে। পরে ভোটের মাত্র সপ্তাহখানেক আগে তড়িঘড়ি করে খবর দিয়ে লন্ডন থেকে দেশে আনা হয় মোকাব্বিরকে। এরপর তিনি নিয়মিত গণসংযোগে নামেন।

সে সময় মোকাব্বির খান বলেছিলেন, ‘লুনা ভাবি নির্বাচন করতে পারবেন না বলে আমাকে লন্ডন থেকে খবর দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। বিএনপি আমাকে সমর্থন দিচ্ছে।’

গতকাল মোকাব্বির খানের শ্যালক জসিম উদ্দিন জুনেদ বলেন, ‘লুনা ভাবির যেহেতু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল, তাই মোকাব্বির ভাইয়ের নির্বাচন করার প্রশ্নই ছিল না। যে কারণে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ১০ মিনিট দেরিতে যাওয়ায় প্রত্যাহার করা সম্ভব হয়নি। পরে তিনি এ অবস্থায়ই ইংল্যান্ডে ফিরে যান।’ লুনা রুশদীর প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাওয়ার পর তাঁকে দেশে ডেকে আনা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেহেতু লুনা ভাবি নির্বাচন করতে পারছেন না, তাই তিনি দেশে এসে নির্বাচনের মাঠে নামেন শেষ মুহূর্তে।’

গণফোরামের এই প্রার্থী উদীয়মান সূর্য প্রতীকে পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৪২৩ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান ডাব প্রতীকে পেয়েছেন ৩০ হাজার ৪৪৯ ভোট। আর এই আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া লাঙল প্রতীকে ১৮ হাজার ৩২ ভোট পেয়ে হয়েছেন চতুর্থ।

বিশ্বনাথ উপজেলার ‘বাঁচাও বাসিয়া নদী ঐক্য পরিষদ’-এর আহ্বায়ক ফজল খান বলেন, ‘সিলেট-২ আসনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত গণফোরামের মোকাব্বির খানকে এলাকায় আমি দেখিনি। নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগেও তাঁর নাম শুনিনি। উপজেলা সদরের নির্বাচনী প্রচার মিছিলে তাঁর চেহারা প্রথম দেখি। তবে নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর পরিবারের সমর্থনের কারণে তিনি এ আসনে সংসদ সদস্য হয়েছেন।’ একই এলাকার স্কুল শিক্ষক ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘তাহমিনা রুশদীর লুনার মনোনয়ন স্থগিত হওয়ার দুই-তিন দিন পর হঠাৎ মোকাব্বির খানকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থন জানায়। তখন তাঁর নাম আলাদাভাবে আলোতে আসে। কিন্তু নির্বাচনের আগে কোনো দিন তাঁর সঙ্গে দেখাও হয়নি, কথাও হয়নি।’ এলাকার অটোরিকশাচালক নুরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের তিন দিন আগে গাড়িতে বসা যাত্রীদের মুখে উদীয়মান সূর্য প্রতীক নিয়ে মোকাব্বির খান নির্বাচন করছেন বলে শুনেছি। কিন্তু এখনো তাঁকে দেখার সুযোগ হয়নি।’