সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

পলাতক খুনিরা কে কোথায়…
খবর: জাগো নিউজ

খবর: জাগো নিউজ



বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১২ খুনির মধ্যে ছয়জন পলাতক। এই ছয় খুনির মধ্যে দুজন কোন দেশে অবস্থান করছেন তার সঠিক তথ্য কেউ জানে না। এরা হলেন খন্দকার আবদুর রশিদ ও আবদুল মাজেদ।

এই দুজন এখন কোথায়, কী অবস্থায় আছেন তা শনাক্ত করতে না পারায় গত ১ আগস্ট ক্ষোভ প্রকাশ করে সংসদীয় কমিটি। এ জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দায়ী করা হয়। ওইদিন সংসদ ভবনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শেষে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার তাগিদ দেয়া হয়। পাশাপাশি বিদেশে বসবাসকারী চিহ্নিত হত্যাকারীদের ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত যেন স্বাভাবিকভাবে বসবাসের পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট দেশে কারান্তরীণ রাখা হয়, সে বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারকে অনুরোধ জানানোর সুপারিশ করা হয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তা ও সৈনিকের হাতে সপরিবারে হত্যার শিকার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ওই সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।

পলাতক খুনিরা কে কোথায়

সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ জনের মধ্যে ২০১০ সালে পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর হয়। বাকিদের একজন জিম্বাবুয়েতে মারা যান এবং ছয়জন পলাতক।

পলাতক ছয়জন হলেন- আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এম রাশেদ চৌধুরী, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আব্দুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন।

এদের মধ্যে চারজনের সম্ভাব্য অবস্থান হলো- কানাডায় নূর চৌধুরী। যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রাশেদ চৌধুরী। মোসলেম উদ্দিন জার্মানিতে ও শরিফুল হক ডালিম স্পেনে।

চারজনের অবস্থানই ‘সম্ভাব্য’ বলে জানিয়েছে ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। তাদের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড এলার্ড জারি করা আছে।

স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন এনসিবির সহকারী মহাপুলিশ পরিদর্শক।

খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মঙ্গলবার আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘পলাতক ছয়জনের মধ্যে একজন জিম্বাবুয়েতে মারা গেছেন। দুজন বারবার অবস্থান পরিবর্তন করছেন। শুধু দুজনের বিষয়ে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে। তাদের একজন যুক্তরাষ্ট্র এবং আরেকজন কানাডায়। তাদের ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীসহ সরকারি পর্যায়ে এ বিষয়ে যোগাযোগ অব্যাহত আছে।’

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় পালিয়ে থাকা দুই খুনিকে ফিরিয়ে আনা এখন কঠিন হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক। সোমবার (১৩ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এ কথা জানান।

বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থাকা খুনিদের বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘আমাদের কাছে থাকা তথ্য যদি আমরা প্রকাশ করি তবে তারা জেনে গেল। তাদের অবস্থান তারা পরিবর্তন করবে। সেক্ষেত্রে আমরা যে তথ্যের ভিত্তিকে এগোচ্ছি, সেই তথ্য আর সঠিক থাকবে না। আমার মনে হয়, পরিষ্কারভাবে আমরা তাদের পিন ডাউন করতে পারব, তখনই আপনারা এই প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করলে ভালো হয়। সেজন্য আমি ওই প্রশ্নে যাব না।’

উল্লেখ্য, এ হত্যাকাণ্ডের বিচারে পদে পদে বাধা আসে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরপরই দায়মুক্তি (ইনডেমনিটি) অধ্যাদেশ জারি করা হয়। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর দায়মুক্তি আইন বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার। ওই বছরের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন।

১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর তত্কালীন ঢাকার দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় দেন। নিম্ন আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল ও মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণের শুনানি শেষে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট দ্বিধাবিভক্ত রায় দেন। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চ ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে তিনজনকে খালাস দেন। এরপর ১২ আসামির মধ্যে প্রথমে চারজন ও পরে এক আসামি আপিল করেন। কিন্তু এরপর ছয় বছর আপিল শুনানি না হওয়ায় আটকে যায় বিচার-প্রক্রিয়া।

দীর্ঘ ছয় বছর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আপিল বিভাগে একজন বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলাটি আবার গতি পায়। ২০০৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির লিভ টু আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। আপিলের অনুমতির প্রায় দুই বছর পর ২০০৯ সালের অক্টোবরে শুনানি শুরু হয়। ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া পাঁচ আসামির আপিল খারিজ করেন। ফলে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে হাইকোর্টের দেয়া ১২ খুনির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে। এর মধ্য দিয়ে ১৩ বছর ধরে চলা এ মামলার বিচার-প্রক্রিয়া শেষ হলে দায়মুক্ত হয় বাংলাদেশ। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ ও মুহিউদ্দিন আহমেদের ফাঁসি কার্যকর হয়। ওই রায় কার্যকরের আগেই ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আজিজ পাশা।