লাতু ডেস্ক:: আকস্মিক লন্ডন (যুক্তরাজ্য) সফরে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। গত রোববার তিনি লন্ডনে এসে পৌঁছান বলে বিএনপির একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সিসিক মেয়র আরিফের এই লন্ডন সফরকে ঘিরে নানা কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে; সামনে এসেছে বিভিন্ন প্রশ্নও। সিটি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সময় হঠাৎ করে কেনো তিনি লন্ডন এসেছেন? দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনে প্রার্থী হতে ‘গ্রিন সিগনাল’ পাওয়াই কী তার মূল লক্ষ্য?
বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা বলছেন, মাঠের রাজনীতির চতুর এই নেতা স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হবার জন্যই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে ধর্না দিতেই তিনি লন্ডনে এসেছেন। দল অংশগ্রহণ না করলেও আরিফ তার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বুঝাতে সক্ষম হবেন তিনি স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হলেও তার বিজয় প্রায় নিশ্চিত। এ কারণেই তার লন্ডন মিশন! দু-একদিনের মধ্যেই তিনি তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করতে পারেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
গত সোমবার সিলেটসহ দেশের পাঁচটি সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করেছে ইসি। সে হিসেবে আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ভোটগ্রহণের কথা রয়েছে। তবে এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না বলে অফিসিয়ালি আগাম ঘোষণা দিয়েছে দলটি। তাই ওই নির্বাচনে দল (বিএনপি) যদি অংশ না নেয় তাহলে সিসিকের জনপ্রিয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কী ফের মেয়র প্রার্থী হবেন-এমন প্রশ্নও জনমনে। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও নির্বাচন নিয়ে ভাবছেন। দল সিটি নির্বাচনে না গেলে তার করণীয় কী- এমন পথও খুঁজছেন তিনি?
নির্বাচনকে সামনে রেখে লন্ডনে অবস্থারত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে দেখা করার জন্য সিলেট সিটি মেয়র বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী লন্ডনে পৌঁছেছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট জেলা বিএনপির এক সিনিয়র নেতা তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে দল (বিএনপি) সিটি নির্বাচনে অংশ না নিলে তার কি (আরিফুল হক চৌধুরী) স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়া উচিত; এমন পরামর্শ নেওয়ার জন্যই আরিফ লন্ডনে এসেছেন-আরিফ ঘনিষ্ঠ সূত্র এমনটাই দাবি করেছে। তাদের ভাষ্য, সিসিক মেয়র আরিফ নগরের ব্যাপক উন্নয়নযজ্ঞ করার কারণে তার ভোট ব্যাংক বেশ মজবুত রয়েছে। তাই এ নির্বাচনে প্রার্থী হলে আরিফের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্যই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করার জন্যই মূলত আরিফের লন্ডন সফর! দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ‘সবুজ সংকেত’ পেলেই তিনি স্বতন্ত্রভাবে ফের মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন-এটা প্রায় নিশ্চিত!
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট সিটি কর্পোরেশনের টানা দুইবারের মেয়র তিনি; বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাও। নগরে নানামুখি উন্নয়নযজ্ঞ চালিয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে আসেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। সিলেট নগরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, রাস্তা সম্প্রসারণ, ছড়া-খাল উদ্ধার করে নগরবাসীর নজর কাড়েন তিনি।
২০০৩ সালে সিটির কমিশনার নির্বাাচিত হয়ে আািরফুল হক তকমা লাগান জনপ্রতিনিধির। মাঝখানে এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন। কারাবাসের পর ২০১৩ সালের ১৫ জুন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আরেক জনতার মেয়রখ্যাত সিলেট আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা প্রয়াত বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ওই নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরী ‘পরিবর্তনের’ শ্লোগান তুলে কামরানকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন।
এরপরই আরিফ নগরের উন্নয়নে মনোযোগী হন। বিরোধী দলের মেয়র হলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সার্বিক সহযোগিতায় সিলেটের উন্নয়নযজ্ঞে নিজেকে নিয়োজিত করেন। আওয়ামী লীগের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আব্দুল মুহিতও সিলেটের উন্নয়নে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বরাদ্দ দেন। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আরিফুল হক চৌধুরী উন্নয়ন কাজ করে নগরবাসীর প্রিয়ভাজনে পরিণত হন। যে ধারা আজও অব্যাহত রেখেছেন সিলেটের মেয়র বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা।
২০১৮ সালের ৩০ জুলাই আবারও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দিতা করেন আরিফুল হক চৌধুরী। ওই নির্বাচনেও তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক মেয়র ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি (প্রয়াত) বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ২০১৮ সালের এ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে বিজয় মুকুট পড়েন বিএনপি‘র কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। বিরুদ্ধ স্রোতে চমক দেখিয়ে দলীয় হাইকমান্ডের ‘গুডবুকে’ স্থান করে নেন তিনি।