ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাবনা-৪ আসন। ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া উপজেলা নিয়ে এই আসনটি গঠিত।
ঈশ্বরদী জংশন, ইপিজেডের পাশাপাশি নির্মাণাধীন দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে আসনটির গুরুত্ব বেড়েছে বহুগুণ।
জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগের হাই-প্রোফাইল মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হওয়ার পরের দিন ধানমন্ডি কার্যালয় থেকে পাবনা- ৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, সাবেক এমপি পাঞ্জাব আলী বিশ্বাস, এডভোকেট রবিউল, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম লিটন, ঈশ্বরদীর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান বিশ্বাস এবং ডিজিএফ আইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব) নজরুল ইসলাম রবিসহ আটজন।
মনোনয়ন ফরম কিনতে ঢাকায় অবস্থান করছেন ভূমিমন্ত্রীর মেয়ে মেহজাবিন শিরিন এবং মেয়ে জামাই আবুল কালাম আজাদ মিন্টুও।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান এমপি ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশী।
প্রবীণ এই নেতা নৌকা প্রতীকে চার বার বিজয়ী হলেও বর্তমানে পরিস্থিতি ভিন্ন। পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও দলের ত্যাগী নেতাকর্মীকে অবমূল্যায়নের অভিযোগ উঠেছে।
এতে করে এ আসনে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফের মনোনয়ন।
এ প্রসঙ্গে আটঘড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম রতন বলেন, নৌকার প্রশ্নে আমাদের কোনো অস্বস্তি নেই। তবে, দীর্ঘদিন একক নেতৃত্ব থাকায় এবং ক্ষমতার দম্ভে দলীয় নেতাকর্মীদের অবহেলা, অবমূল্যায়ন এবং হয়রানির কারণে কর্মীদের মধ্যে হতাশা রয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দলের অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। আগামী নির্বাচনে দলীয় হাইকমান্ড এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই মনোনয়ন দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ইসাহাক মালিথা বলেন, দলীয় কমিটি করার ক্ষেত্রে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে স্বজনপ্রীতি, পরিবারতন্ত্রের কমিটি করা হয়েছে। অযোগ্যদের পদায়নে দলীয় নেতারা বাধা দিলেও ভূমিমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তে হাইব্রিড কমিটি করা হয়েছে। একারণে দলীয় কর্মীরা পরিবর্তন চাইছেন।
তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ।
নিজেকে পাবনা-৪ আসনে অপ্রতিদ্বন্দ্বি দাবি করে আগামী নির্বাচনেও মনোনয়নের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, বিগত সময়ে এই আসনে (ঈশ্বরদী-আটঘড়িয়া) যে বিস্ময়কর উন্নয়ন হয়েছে তাতে এ এলাকার মানুষ বার বার আমাকে নির্বাচিত করেছে। আগামীতে সে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে জনগণ নৌকাতেই আস্থা রাখবে।
মন্ত্রী আরো বলেন, যেখানে আমি নির্বাচনে মনোনয়ন চাইছি, সেখানে অন্য কে মনোনয়ন চাইল দেখার বিষয় না। আর্থিক সুবিধা নিয়ে দলের অনেক নেতা বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
মনোনয়ন নিয়ে ‘গৃহদাহ’ রয়েছে মন্ত্রীর নিজ পরিবারেও। নৌকার মাঝি হতে চাইছেন মন্ত্রী কন্যা মেহেজাবিন শিরীন ও মেয়ে জামাই আবুল কালাম আজাদ মিন্টুও।
এক পরিসংখ্যনে দেখা গেছে, ১৯৯১ সালে আসনটিতে বিএনপির সিরাজুল ইসলাম সরদার নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ ও ২০০১ সালে সিরাজ সরদার বিএনপির মনোনয়ন পেলে, বিদ্রোহী প্রার্থী হন কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব। ২০০৮ সালেও হাবিব বিরোধীতা করেন বিএনপি প্রার্থীর। বিএনপির দলীয় কোন্দলে প্রতিবারেই ‘সহজ’ জয় পায় আওয়ামী লীগ।
তবে এই পরিস্থিতির উত্তরণ চান বিএনপির তৃণমূল কর্মীরা।
দলের ত্যাগী নেতাদের মতামত গুরুত্ব পেলে আসনটিতে কোন্দল কাটিয়ে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বিএনপি নেতারাও।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু বলেন, ঈশ্বরদী আটঘড়িয়া বিএনপির ঘাঁটি। বেঈমানি ও বিশ্বাস ঘাতকতার কারণে আমরা বার বার আসনটি হারিয়েছি।
তিনি বলেন, বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামে অবদান বিবেচনায় মনোনয়ন দিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এ অঞ্চলের মানুষ ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করবে।
এদিকে, এ আসনে জামায়াতের জেলা আমীর আবু তালেব মন্ডলকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি।
ঈশ্বরদীর ও আটঘরিয়া উপজেলার দুই পৌরসভা ও ১২ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত পাবনা-৪ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৫৪ জন।
গত ৮ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।