বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

বড়লেখায় মাদ্রাসায় ক্লাসে ধুমপানের ভিডিও ভাইরাল, তোলপাড়, চার শিক্ষার্থী বহিস্কার



বিজ্ঞাপন

এ. জে লাভলু:: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় একটি মাদ্রাসায় ক্লাসে ছাত্রদের সিগারেট খাওয়ার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঘটনায় তোলপাড় চলছে। শিক্ষার্থীদের এমন কাণ্ডে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বড়লেখা পৌরশহরের পাখিয়ালায় অবস্থিত বড়লেখা মুহাম্মদিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসায় এই ঘটনাটি ঘটেছে। অবশ্য ঘটনার পর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত চার শিক্ষার্থীকে বহিস্কার করেছে। বহিস্কৃতরা হলেন, অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সাইদুল ইসলাম, আবু তাহের, রিফাত আহমদ ও তামিম আহমদ।

ভিডিওতে দেখা গেছে, ক্লাসে ব্রেঞ্চের ওপর বসে, দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছেন কয়েকজন ছাত্র। ছাত্রদের সিগারেট টানার দৃশ্যটি ধারণ করছিলেন ক্লাসের অন্য এক ছাত্র। তখন ক্যামেরার দিকে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত এক ছাত্র বিভিন্ন অশালিন মন্তব্য করতে থাকেন।

এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার দুপুরে মাদ্রাসার ছাত্রদের সাথে ছাত্রদল নেতাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসময় মাদ্রাসার সীমনা প্রাচীর ভাঙচুর করা হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে। এই ঘটনায় মাদ্রাসার ছাত্ররা ছাত্রদল নেতাদেরকে আর ছাত্রদল নেতারা শিবিরকে দোষারোপ করছেন। মাদ্রাসার ছাত্রদের দাবি, সিগারেট খাওয়ার অপরাধে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত কয়েকজন ছাত্রকে বহিস্কার করেছে। কিন্তু এই ঘটনার জের ধরে কয়েকজন ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে বহিরাগতরা মাদ্রাসায় ঢুকে তাদের ওপর হামলা করেছে। অন্যদিকে ছাত্রদল নেতাদের দাবি, এক ছাত্রকে মারধরের কারণ জানতে মাদ্রাসার অধ্যক্ষের কাছে যাওয়ায় শিবির নেতাকর্মীরা তাদের অবরুদ্ধ করে আগে হামলা করেছে। সিগারেটকাণ্ডে অভিযুক্ত কোনো শিক্ষার্থীর পক্ষে তারা মাদ্রাসায় যাননি।

মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) যোহরের নামাজের সময় বড়লেখা মুহাম্মদিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার দাখিল অষ্টম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্র ক্লাসে বসে সিগারেট পান করে। এ সময় ক্লাসের অন্য এক ছাত্র তাদের সিগারেট খাওয়ার ভিডিওটি ধারণ করে। পরে সেটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এদিকে ক্লাসে ছাত্রদের সিগারেট খাওয়ার বিষয়টি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হলে বুধবার (২ অক্টোবর) মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে শিক্ষকদের নিয়ে এক জরুরী সভা ডাকা হয়। সভায় দীর্ঘ আলোচনার পর অভিযুক্ত চার শিক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়। এদিকে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রকে মারধরের বিষয়ে জানতে বুধবার দুপুরে উপজলা বিএনপি নেতা আব্দুল কাদির পলাশ, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আরিফুল ইসলামসহ কয়েকজন মাদ্রাসায় অধ্যক্ষের কাছে যান। সেখানে তাদের মাদ্রাসার কয়েকজন ছাত্রের সাথে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। কিছুক্ষণ তাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এসময় মাদ্রাসার টিনের তৈরি সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়। এসময় উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হন।

মাদ্রাসার ছাত্র সংসদের ভিপি ও শিবির নেতা আব্দুর রহমান এবাদ বুধবার রাত সাড়ে নয়টায় বলেন, অষ্টম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্র ক্লাসে বসে সিগারেট খেয়েছেন। বিষয়টি আমরা জানার পর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মহোদয়কে অবগত করি। আজ বুধবার মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জরুরী সভা ডেকে অভিযুক্ত ছাত্রদের বহিস্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কয়েকজন ছাত্রদল নেতাসহ বহিরাগত আরও কয়েকজন মাদ্রাসায় এসে শিক্ষকদের সাথে রুঢ় আচরণ করেন। আমরা এর প্রতিবাদ করায় তখন তারা আমাদের সাথে বাজে ব্যবহার করেন। কিছুক্ষণ পর বহিরগত কয়েকজন এসে মাদ্রাসায় হামলা চালান। তারা মাদ্রাসার টিনের সীমানা প্রাচীর ভাঙচুর করেছে। মসজিদের গ্লাস ভাঙচুর করেছে। পরে মাদ্রাসার সাধারণ ছাত্ররা মিলে বহিরাগতদের প্রতিহত করেছে। এই ঘটনায় শিবিরের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আরিফুল ইসলাম বলেন, অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রকে মারধরের বিষয়ে জানতে বিএনপি নেতা আব্দুল কাদির পলাশ ভাইসহ আমরা তিন-চারজন মাদ্রাসায় গিয়েছিলাম। আমাদের কাছে অনেক ছাত্র বলেছে যে, মাদ্রসায় ছাত্রদের শিবিরের ফরম পূরণ করানো হচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে শিক্ষকদের সাথে আলাপ হচ্ছিল। এসময় শিবিরের কয়েকজন এসে আমাদের সাথে বাজে ব্যবহার করেছে। তারা আমাদের একটি কক্ষে আটকে রেখেছে। পরে আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমরা আত্মরক্ষার্থে তাদের প্রতিহত করেছি। এখন ফেসবুকে সিগারেট খাওয়ার ঘটনায় বহিস্কৃতদের ছাত্রদলের বলে অপপ্রচার করছে। তবে সিগারেটকাণ্ডে অভিযুক্তদের তিনি শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

বিএনপি নেতা আব্দুল কাদির পলাশ বলেন, মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির এনামুল এক ছাত্রকে মারধর করা হয়েছে। সে ছাত্রদলের কেউ কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে বিএনপি পরিবারের সন্তান। সে শিবিরে যোগদান না করায় তাকে মারধর করা হয়েছে শুনে মাদ্রাসায় গিয়েছিলাম। তখন শিবিরের কয়েকজন এসে আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। আমরা এখানে কেন এসেছি তারা জানতে চায়। আমাদের বেরিয়ে যেতে বলে। পরে আমাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। একপর্যায়ে তারা বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এসময় আমাদের কয়েকজন আহত হন।

মুহাম্মদিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলিম উদ্দিন বলেন, মাদ্রাসার কয়েকজন ছাত্র সিগারেট খেয়েছে। এরা একটু উশৃঙ্খল প্রকৃতির। যার কারণে আমরা জরুরী সভা ডেকে তাদের সাময়িক বহিস্কার করেছি। আমি জরুরী কাজে মৌলভীবাজারে গিয়েছিলাম। এসে শুনি, বহিরাগত কয়েকজন মাদ্রাসায় এসে হামলা করেছে। মাদ্রাসার সীমনা প্রাচীর ভাঙচুর করেছে। বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সমাধান হলে জানতে পারবেন।

বড়লেখা থানার ওসি আবদুল কাইয়ূম বলেন, মুহাম্মদিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসায় একটু বিশৃঙ্খলার খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে। শুনেছি, জামায়াত নেতা ফয়ছল আহমদ ও বিএনপি নেতা আব্দুল কাদির পলাশ বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন।