নিজস্ব প্রতিবেদক:: মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের টেকাহালী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া নৈশপ্রহরী বশির উদ্দিনের এক বছর এক মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে অব্যাহতিপত্র আদায় করলেন প্রধান শিক্ষক প্রণয় রঞ্জন দাস। রোববার স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় বশির উদ্দিন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বুঝে পেয়ে চাকুরির অব্যাহতি পত্রে স্বাক্ষর ও ইউএনও বরাবর প্রেরিত অভিযোগ প্রত্যাহার করেছেন।
এদিকে চলিত বছরের মার্চে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় ‘বড়লেখায় চাকরি দিয়ে নৈশপ্রহরীকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ’ শিরোনামে একটি সংবাদ ছাপা হলে প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলে টনক নড়ে। সমাজ হিতৈশী ব্যক্তিরা চাকরিচ্যুত ভোক্তভোগি নৈশপ্রহরী বশির উদ্দিনের বিষয়টি সমাধানের জোর প্রচেষ্টা চালান।
ভোক্তভোগি বশির উদ্দিনের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, টেকাহালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রণয় রঞ্জন দাস ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নৈশপ্রহরী পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন। এই পদে বশির উদ্দিন আবেদন করেন। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও প্রধান শিক্ষক প্রণয় রঞ্জন দাস অনুদানের নামে ৩ লাখ টাকা ঘুস নিয়ে তাকে চাকুরি দেন। ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বশির উদ্দিন নৈশপ্রহরী পদে যোগদান করেন। ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত বশির উদ্দিন প্রায় দেড় বছর বিনা বেতনে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধান শিক্ষকের প্রত্যয়নপত্রে জনতা ব্যাংকে তার নামে ব্যাংক একাউন্টও খোলা হয়। এমপিওভুক্তিতে জাতীয় পরিচয়পত্রের বয়স সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিলে একপর্যায়ে বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ ছাড়াই তাকে স্কুল থেকে বের করে দেন প্রধান শিক্ষক প্রণয় রঞ্জন দাস।
প্রধান শিক্ষক প্রণয় রঞ্জন দাস জানান, বিধিমোতাবেক বশির উদ্দিনকে নৈশপ্রহরী পদে চাকুরি দেন। কিন্তু বয়স জটিলতার কারণে তার এমপিও হয়নি। কখনও হওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তাকে বিদায় দেন। তার নিয়োগে কোনো টাকা পয়সা নেওয়া হয়নি। বিদ্যালয় বিরোধী একটি চক্রের প্ররোচণায় সে স্কুলের সভাপতি ও আমার বিরুদ্ধে ঘুস আদায়ের অভিযোগ তুলে। অবশেষে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থতায় তিনি তাকে ১১ মাসের সরকারি ও স্কুল বেতনের ১ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রদান করেছেন। স্থানীয় সমাজসেবক নুরুল ইসলাম, ইমরান হোসেন, আব্দুল গনী, ইসলাম উদ্দিন, তাজুল ইসলাম প্রমুখের উপস্থিতিতে সেও স্বেচ্ছায় অব্যাহতিপত্র প্রদান করেছে।
বশির উদ্দিন জানান, প্রধান শিক্ষক প্রণয় রঞ্জন দাস তার স্কুল থেকে তাকে শিক্ষাগত যোগ্যতার অষ্টম শ্রেণি পাশের সনদ দেন। সভাপতি ও তিনি টাকা নিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকুরি দেন। এমপিওভুক্তির জন্য আরো টাকা চান। আমি দরিদ্র মানুষ, আর টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় প্রায় দেড় বছর বিনা-বেতনে খাটিয়ে হঠাৎ একদিন স্কুল থেকে তাকে বের করে দেন। আমি অনেকের কাছে বিচারপ্রার্থী হই। ৪ লাখ টাকার দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করি। অবশেষে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পেয়ে অব্যাহতিপত্র ও অভিযোগ প্রত্যাহার করেছি।
ইউএনও নাজরাতুন নাঈম জানান, নৈশপ্রহরীর অভিযোগটি তদন্তের জন্য ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। ওই কমিটি এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়নি। তবে স্থানীয় সমাজ হিতৈশী ব্যক্তিরা রোববার সমঝোতায় বিষয়টি নিষ্পত্তি করেছেন বলে শুনেছেন। কাগজপত্র দেখে এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।