লাতু ডেস্ক:: ‘আমার নয়নের মুখ পুইড়া গেছে দেখছি শুধু, শেষবারের মতো ছেলেটাকে ছুঁইতেও পারলাম না। ছেলে আমার আর ফোন দিয়ে বলব না বাবা টাকা পাঠাইছি, বাজারে গিয়া তুলে নিয়ো। আমার ছেলের পুড়া মুখ দেখতে হবে জানলে এমন চাকরিতে দিতাম না।’
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে নিহত তরুণ অলিউর রহমান নয়নের (২২) লাশ গতকাল সোমবার তাঁর গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কর্মধার ফটিগুলিতে নেওয়া হয়। বিস্ফোরণে ঝলসে যাওয়া ছেলের লাশ দেখে বাবা আশিক মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলেন। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে চারপাশ।
আশিক মিয়া বলেন, ‘চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে অলিউর রহমান সবার বড়। তাঁকে আদর করে নয়ন নামে ডাকত ঘরের সবাই। কাজের সন্ধানে বছরখানেক আগে পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে কাজ পেয়ে সেখানে যায়। প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা বেতন পেয়ে ছোট ভাই-বোনের খরচের জন্য বাড়িতে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা পাঠাত।’
শোকস্তব্ধ বাবা আরও বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যায় নয়ন ফোন করে বলে গারদবাজারে একটি মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের দোকানে পাঁচ হাজার টাকা পাঠিয়েছে। সেই টাকা তুলে ভাই-বোনদের জন্য খরচ করতে বলে। আমি রাতে টাকা তুলে বাড়িতে নিয়ে আসি। সকালে খবর পাই রাতেই বিস্ফোরণে নিহত হয়ে চট্টগ্রামের হাসপাতালে আমার নয়নের নিথর দেহ পড়ে আছে। তাঁর ছোট ভাই-বোনদের পড়াশোনা করানোর স্বপ্ন নিয়ে এত দূর থেকে কষ্ট করে কাজ করত।’
এদিকে সকালে বাড়িতে লাশ নেওয়া হলে এলাকার মানুষ ভিড় জমান নয়নকে শেষবারের মতো দেখতে। নয়নকে দেখে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন তাঁরা। ফটিগুলি গ্রামের মসজিদের সামনে বেলা ২টার দিকে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষ জানাজায় অংশ নেন।
উল্লেখ্য, শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় সেখানে কর্মরত শ্রমিক নয়ন মারা যান। দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে থেকে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা লাইভ করছিলেন তিনি। লাইভের ৪০ মিনিটের পর সেখানে বিস্ফোরণে নয়ন মারা যান।