সাইফুল্লাহ হাসান :: ডুলাহাজারা ও গাজীপুরের পর মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলা এলাকায় হবে দেশের তৃতীয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। পাথারিয়া হিলস্ রিজার্ভ ফরেস্টের জুড়ী রেঞ্জের আওতায় লাঠিটিলা বিটের একাংশ জুড়ে স্থাপনা কার্যকর হবে।
সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাঠিটিলা বন বিটে ৫ হাজার ৬শত ৩১ একর বনের জায়গা আছে। তার মধ্যে প্রায় এক হাজার একর জায়গা বন জাগিদারদের আওতায় চলে গেছে। এক সময় বন বিভাগ ৩৮টি পরিবারকে ৪টি গ্রামে বিভক্ত করে জায়গা দিয়েছিল তাদের গাছ বাগান পরিচর্যার জন্য। সেখান থেকে বেড়ে এখন ৩০৩টি পরিবারে পরিনত হয়েছে। এভাবে আরো দুই চার বছর থাকলে তাদের পরিবারের সংখ্যা বেড়ে হয়তো সম্পূর্ণ বন বেদখলে চলে যাবে।
লাঠিটিলা বনকে ১৯২০ সালে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
বন বিভাগের সূত্রে জানা যায়, কোর সাফারির জন্য ২৩৬ একর, ইকো ভিলেজের জন্য ৬৩৯ একর, এলিপেন্ট অর্পানেজের জন্য ৫ একর, পার্কিং এরিয়ার জন্য ৫ একর, সাফারি কিংডমের জন্য ৬৪ একর, সম্পূর্ণ সাফারির জন্য মোট ভূমি নেওয়া হবে ৯৫৯ একর জায়গা।
মূলত ৫ হাজার ৬শত ৩১ একর ভূমির মধ্যে ৪ হাজার ৬শত ৭২ একর জায়গা থাকবে জীববৈচিত্র্যের জন্য সংরক্ষিত। বন যেভাবে আছে সেভাবে থাকবে। সেখানে কোনভাবে স্থাপনা গড়ে উঠবে না, আলাদাভাবে স্পেশাল ফোর্স দিয়ে রক্ষা করা হবে।
মৌলভীবাজারের ৬০ কি.মি. উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সিলেট বন বিভাগের জুড়ী ফরেস্ট রেঞ্জের লাঠিটিলা পাথারিয়া হিল রিজার্ভ ফরেস্টের একটি অংশ।
২০১৫ সালের সর্বশেষ পরিমাপ অনুযায়ী, বর্তমানে সংরক্ষিত বনটির আয়তন ৮০ বর্গ কি.মি.। এরমধ্যে লাঠিটিলার আয়তনই ২০ বর্গ কিলোমিটার।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, মূলত এটা বন বিভাগ অনেক যাচাই করে স্থান নির্ধারণ করেছে। এখানে কোন বন্যপ্রাণি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোন আশঙ্কা নেই। যদি বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষনের কোন বিপর্যয় ঘটতো তাহলে সর্বপ্রথম আমি অমত পোষণ করতাম। যেখানে সাফারি পার্ক হবে সেখানে লোকালয়, বর্তমানে কোন বন্যপ্রাণী নেই সুতরাং অন্যত্র পালাবে কোথায়! বনের ভারসাম্য ফিরানোর জন্য ইকো ভিলেজ করা হবে।
তিনি বলেন, সরকারি একটা প্রকল্প অনেক যাচাই বাছাই করে দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণ করে একটা চিন্তা করা হয়, সেখানে ভুল কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। এখানে অনেকে অনেক কিছু বলছে, বনকে ধ্বংস করে নাকি সাফারি পার্ক হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে পর্যবেক্ষণ করে কেউ কথা বলে না। আসলে বনকে রক্ষা করার জন্য সাফারি পার্ক হচ্ছে।
তিনি বলেন, বনের সামান্য একটা জায়গা সাফারি পার্কের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। মূলত প্রাকৃতিক বন রক্ষা করার জন্য এই প্রকল্পের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বন বনের মতো থাকবে, বন ধ্বংস করে এসব পরিকল্পনা করা হয়নি।
এ বিষয়ে বিএসএম সাফারি পার্কের টিম লিডার ড. তপন কুমার দে বলেন, শুধু লোকালয়ে যে জায়গাটুকু আছে সেখানে নির্মাণ হবে সাফারিপার্ক। এতে বাকি বনটাতে কোন প্রভাব পড়বে না। সবার আগে পরিবেশ গত দিকগুলো বিবেচনা করা হবে। মূলত বনের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্য সাফারিপার্ক করার সিদ্ধান্ত করা হয়েছে।
এদিকে রোববার (৩০ আগস্ট) জুড়ী উপজেলায় মৎস্য সপ্তাহ উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, পাথারিয়া পাহাড় ও সংলগ্ন বন ও বন্যপ্রাণী সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণের স্বার্থেই লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক স্থাপন করা হবে। এক্ষেত্রে এখানে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ না করে এবং সকলের জন্য কল্যাণকর ব্যবস্থা রেখেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এখানে সাফারি পার্ক নির্মিত হলে মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।
মন্ত্রী বলেন, স্থানীয় জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলেও পরিবেশবাদী দাবিকারী কেউ কেউ এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, স্থানীয় জনগণকে উস্কানি দিচ্ছে। স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়েই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নামে এখানে সাফারি পার্ক স্থাপন করা হবে।