নিউজ ডেস্ক: ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কাজ নেই, ৩ কিলোমিটারের মধ্যে বাজার নেই, নেই বিদ্যুৎ। সেই সঙ্গে তীব্র পানিসংকট ও নিরপত্তার অভাব। দীর্ঘ ৬ মাসেও এসব সমস্যার সমাধান না হওয়ায় অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘর ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভূমিহীন পরিবারগুলো।
এরই মধ্যে আটটি পরিবার ঘর ফেরত দিতে আবেদন করেছে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা প্রশাসনের কাছে। ঘরের চাবি ও দলিল প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছেন তারা।
উপজেলার ইকরতলী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেখানের আরও অন্তত ২০-২৫টি পরিবার ঘর ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যে কারণে এই সিদ্ধান্ত
চুনারুঘাটের ইকরতলী আশ্রয়ণ প্রকল্পটি ২ একর ৬ শতাংশ সরকারি খাসজমির ওপর অবস্থিত। সেখানে সরকার ৭৪টি ঘর নির্মাণ করেছে। প্রতিটি ঘরে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। প্রতিটি ঘরে দুটি কক্ষ, রান্নাঘর ও একটি বাথরুম রয়েছে। গত ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঘরগুলোর চাবি ও কাগজপত্র ভূমিহীন ৭৩টি পরিবারকে বুঝে দেন। বাকি একটি ঘর খালি পড়ে ছিল।
ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৭৩টি পরিবারের মধ্যে বসবাস করছে মাত্র ২৪টি পরিবার। বাকি ৪৯টি ঘরেই তালা ঝুলছে। এবার এই ২৪টি পরিবারের লোকজনও ওই জায়গা ছেড়ে দেয়ার নিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরই মধ্যে সেখানকার আটটি পরিবার উপজেলা প্রশাসনের কাছে ঘর ফিরিয়ে দিয়েছে। আরও অন্তত ২০-২৫টি পরিবার ঘর ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গাজীপুর ইউপির চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির খান বলেন, ‘এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো কর্মসংস্থান নেই। যে কারণে এখানে কেউ থাকতে চান না। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের কাছে ৮-৯টি পরিবার ঘরের চাবি ও কাগজপত্র হস্তান্তর করে দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনই ভালো বলতে পারবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সত্যজিত রায় দাশ বলেন, ‘এখানের সব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। নতুন করে ১০টিসহ মোট ১৬টি টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। বিদ্যুতের সংযোগ দেয়ার কাজ চলছে। এ ছাড়া কর্মসংস্থান না থাকলেও সেখানে খাসজমিতে কৃষি, হাঁস-মুরগি পালন, মাছ চাষ করার সুযোগ করে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ঘর ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সেটি সম্পর্কে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ভালো বলতে পারবেন।’
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিল্টন পাল বলেন, বেশ কয়েকটি পরিবার ঘর ফেরত দিতে আমাদের কাছে আবেদন করেছে। আমরা তাদের আবেদন গ্রহণ করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
উপহারের ঘর: উচ্ছ্বাস থেকে ক্ষোভ
দেশে একজনও গৃহহীন থাকবে না, এমন উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়ে সরকার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য মানসম্পন্ন ঘর নির্মাণ করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়ার পর প্রশংসিত হয়েছে।
প্রথম দফায় ২৩ জানুয়ারি ৬৬ হাজার গৃহহীন পরিবারকে ঘর হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০ জুন দ্বিতীয় দফায় আরও ৫৩ হাজার ৩৪০ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে দেয়া হয় ঘর।
প্রথম পর্বে ঘর নির্মাণে বরাদ্দ দেয়া হয় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। সে সময় বেশ কিছু এলাকায় ঘর নির্মাণে ত্রুটির সংবাদ আসার পর স্থানীয় প্রশাসনের দাবির মুখে দ্বিতীয় পর্বে ঘর নির্মাণে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হয় ২০ হাজার টাকা।
তবে প্রথম পর্বের তুলনায় দ্বিতীয় পর্বের ঘরগুলোতে অনিয়মের তথ্য আসছে বেশি।
নির্মাণের সময়েই ধসে পড়ার ঘটনা ঘটেছে একাধিক এলাকায়। কোথাও কোথাও পিলার ভেঙে গেছে, কোথাও কোথাও দেয়ালে বিশাল ফাটল ধরেছে, কোথাও কোথাও মাটি ধসে গেছে বৃষ্টিতে। পলেস্তরা খসে পড়ার কথা বলছেন উপকারভোগীরা।
এই ঘরগুলো বরাদ্দ দেয়ার সময় মানুষ আপ্লুত হয়েছে, গৃহহীনরা তাদের সারা জীবনের আশ্রয়হীনতার দুঃখ ভুলে কিছুটা হলেও স্বাচ্ছন্দ্যে বাকি জীবন পার করার স্বপ্ন দেখার কথা জানিয়েছেন। তবে এসব ঘরের অনেকগুলোর করুণ চিত্রে মানুষ আবার ক্ষুব্ধ হয়েছেন আর সেটি সামাজিক মাধ্যমে তারা প্রকাশও করছেন।
গণমাধ্যমে বেশ কিছু এলাকার ঘরের দুর্দশার খবর গণমাধ্যমে আসার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পঁচটি দল গঠন করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয় গত শনিবার। দলগুলো ফিরে এসে প্রতিবেদনও দিয়েছে। তবে এখনও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। সূত্র: নিউজবাংলা