রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

হবিগঞ্জে ৫০৮ বছরের ইতিহাস যে মসজিদকে ঘিরে



বিজ্ঞাপন

নিউজ ডেস্ক: নাম শংকরপাশা শাহী জামে মসজিদ। এ মসজিদ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রাজিউড়া ইউনিয়নের উচাইল গ্রামে অবস্থিত। এক চালা মসজিদটি ১৫১৩ সালে নির্মিত হয়েছে। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ একই মাপের। সামনের বারান্দার প্রস্থ তিন ফুটের সামান্য বেশি। এতে চারটি গম্বুজ রয়েছে।

মূল ভবনের উপর একটি বিশাল গম্বুজ ও বারান্দার উপর রয়েছে তিনটি ছোট গম্বুজ। মসজিদে মোট ১৫টি দরজা ও জানালা রয়েছে, যা পরস্পর সমান আকৃতির প্রায়। পূর্ব-উত্তর-দক্ষিণ এই তিন দিকের দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় পাঁচ ফুট এবং পশ্চিমের দেয়ালটি প্রায় ১০ ফুট। এতে মোট ছয়টি কারুকার্য শোভিত স্তম্ভ রয়েছে, প্রধান কক্ষের চারকোণে ও বারান্দার দুই কোণে। উপরের ছাদ আর প্রধান প্রাচীরের কার্নিশ বাঁকানোভাবে নির্মিত।


মসজিদের দক্ষিণ পার্শ্বে একটি বড় দীঘি রয়েছে। মসজিদের ভেতর ও বাইরের দেয়াল নিখুঁত কারুকার্য খচিত, যা বর্তমান সময়ে বিরল। পাশে বেশ কয়েকটি খেজুর গাছ রয়েছে। আছে কবরস্থান। প্রতিদিন এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা এসে মসজিদটি দেখে যান। এছাড়া শহরের আদলে এখানে মুসল্লীদের জন্য ওযুখানার ব্যবস্থা রয়েছে। দেখতে আসা পর্যটকদের অভিযোগ, মসজিদের গা ঘেঁষে লাগানো বারান্দার জন্য সৌন্দর্য অনেকটাই ম্লান হয়ে পড়েছে। কিন্তু কালের সাক্ষী হয়ে থাকা মসজিদটি সংস্কারহীন।

বন গবেষক মো. আহমদ আলী জানান, জেলার শায়েস্তাগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার ও জেলা শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে প্রবেশ করা যায় উচাইল গ্রামে। গ্রামে রয়েছে সুলতানী আমলের একটি মসজিদ। এ মসজিদটিকে লোকজন বলে থাকে উচাইল শংকরপাশা শাহী গায়েবী মসজিদ। মসজিদটি সংস্কারের জন্য দ্রুত সরকারি বরাদ্দ প্রয়োজন।

বিশিষ্ট গবেষক ও ইতিহাসবিদ মো. মোশারফ হোসেন শাহজাহানের রেখে যাওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, মসজিদটি নির্মাণ করেন সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হযরত শাহ মজলিস আমিন (রঃ)। উৎকীর্ণ শিলালিপিতে মসজিদের নির্মাণ সাল রয়েছে ১৫১৩। এ হিসাবে ৫০৮ বছর চলছে।

বাংলায় বিশেষ করে সুলতানী আমল ও মোঘল আমলে নির্মিত হয় বহু মসজিদ। ব্রিটিশ আমলে পৃষ্ঠপোষকতাহীনতার অভাবে মসজিদগুলো সংস্কারহীন হয়ে পড়ে। ইংরেজদের অত্যাচারের শিকার হয় মুসলমানরা। এক সময় ওই মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় বিরান ভূমিতে পরিণত হয়ে জঙ্গল বেষ্টিত হয়ে পড়ে। পুনরায় মুসলমানদের জাগরণকালে এলাকাগুলোতে বসবাস শুরু হয় আবার। জঙ্গলগুলো আবাদ করতে গিয়ে বের হয়ে আসে অনেক মসজিদ।

এর মধ্যে উচাইল গ্রামে এ মসজিদটি ছিল। তার পর থেকে লোকজন মসজিদটিকে শংকরপাশা গায়েবী মসজিদ বলে জানে। বর্তমানে মসজিদটি কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের বড় অভাব দেখা দিয়েছে। স্থানীয় লোকজনের দাবি, সুলতানী আমলের এ মসজিদটিকে সংস্কার করা জরুরি। কিন্তু পরিকল্পনামাফিক সরকারি বরাদ্দ আসছে না। মসজিদখানা দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজনের আগমন ঘটে। শায়েস্তাগঞ্জ ও হবিগঞ্জ শহর থেকে বিভিন্ন যানবাহন যোগে সেখানে যাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘হবিগঞ্জের শংকরপাশা শাহী মসজিদ স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম নিদর্শন। এটি হবিগঞ্জ জেলার উচাইল গ্রামে অবস্থিত। চমৎকার নির্মাণশৈলীর মসজিদটি নির্মাণ শুরু করেন হযরত শাহ মজলিস আমিন (রঃ)। তিনিই প্রথম মসজিদ স্থাপন করেন এখানে। পরবর্তীতে এই মসজিদের সুদৃশ্য ইমারত বা ভবন নির্মাণ করা হয় বাংলার স্বনামধন্য শাসনকর্তা সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলে। এ মসজিদ কালের সাক্ষী। মসজিদখানা সরকারিভাবে রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানাই।’


মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি হাজী সাইদুল হক ও সেক্রেটারি তালুকদার মাসুক জানান, এরশাদ সরকারের আমলে দুইবার মসজিদের গম্বুজ উন্নয়ন করা হয়েছিল। পরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকে প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার টাকার বরাদ্দে কিছু কাজ করানো হয়। এছাড়া সাবেক জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের মাধ্যমে এক লাখ টাকার বরাদ্দে ওযুখানা সংস্কার করা হয়েছে।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, ‘উচাইল শংকরপাশা শাহী জামে মসজিদ পরিদর্শন করেছি। মসজিদের দেয়াল নিখুঁত কারুকার্য খচিত, যা বর্তমান সময়ে বিরল। এ স্থানটি আকর্ষণীয় হিসেবে গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেছি।’