বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

জুড়ীতে ব‌্যাটারিচালিত রিকশার ‘দৌরাত্ম‌্য’, দিতে হয় মোটা অংকের মাসোহারা



বিজ্ঞাপন

সাইফুল্লাহ হাসান :: মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় দিনে দিনে বেড়েই চলেছে অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরও এই বাহন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সচেতন মহলের অভিযোগ—থানা পুলিশকে ম‌্যানেজ করেই সড়ক-মহাসড়কে এই বাহনের দৌরাত্ম‌্য চলছে। প‌্যাডেলচালিত রিকশার চেয়ে দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে এই বাহন চলার কারণে মুহূর্তেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। ঘটছে অঙ্গহানি থেকে শুরু করে প্রাণহানিরও।


উপজেলার বাছিরপুর এলাকার শফিক নামের এক অটোরিকশা চালক জানান, জুড়ীতে ৩ শতাধিক ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে। এসব ব‌্যাটারিচালিত রিকশাচালকের রয়েছে মোট ৬টি সমিতি। ফি দিয়ে সমিতিতে নিবন্ধন করতে হয়। প্রতিদিন সমিতিতে ১০ টাকা করে জমা দিতে হয় তাদের।

জুড়ী নিউ মার্কেটের সম্মুখের অটোরিকশা স্ট্যান্ডের এক রিকশাচালক বলেন, ‘রিকশা কিনে সড়কে চালাতে হলে সমিতিতে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে জমা দিতে হয়। পরে এখান থেকে ১ হাজার টাকা থানাকে দিতে হয়। প্রতি মাসে সমিতিতে ১০০ টাকা করে চাঁদা আমরা দেই। এখান থেকে সমিতি ৭০ টাকা করে থানা পুলিশকে দেয়।’

উপজেলার বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন স্ট্যান্ডের রিকশাচালক সমেদ মিয়া বলেন, ‘আমাদের সমিতিতে রিকশা রেজিস্ট্রেশন করতে হলে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়। এখান থেকে সমিতি সভাপতি ২ হাজার টাকা থানাকে দিয়ে দেন। থানাকে না দিলে রিকশা চলাচলের অনুমতি পাওয়া যায় না।’

সমেদ মিয়া আরও বলেন, ‘এছাড়া প্রতি মাসে ১৫০ টাকা করে সমিতিতে আমরা চাঁদা দেই। এর মধ্যে ১০০ টাকাই দিতে হয় থানাকে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অটোরিকশা সমিতির একজন সভাপতি বলেন, ‘ব‌্যাটারিচালিত অটোরিক অবৈধ, কিন্তু পেটের দায়ে বাধ্য হলে চালাতে হয়।’ তিনি বলেন, ‘পুলিশকে চাঁদা দিতে হয়। আমরা চালকদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে চাঁদা নেই, সেখান থেকে ৭০ টাকা প্রশাসনকে দিয়ে দেই। এখন আর সেরকম দেই না আমরা। অনুমোদনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটা প্লেট দেওয়া হয় চালকদের। ওই প্লেট রিকশার পেছনে লাগানো থাকে।’

এই সভাপতি আরও বলেন, ‘আগে থানার এক স্যারকে টাকা দেওয়া লাগতো। এখন আর রেট করে টাকা দেই না। চা-নাস্তার জন‌্য কিছু টাকা দিলেই চলে।’ তবে, পুলিশের কার কাছে টাকা দেন নাম বলতে রাজি হননি তিনি।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী মেহেদী হাসান মারুফ বলেন, ‘জুড়ী বাজারে এখন ব‌্যাটারিচালিত রিকশার দৌরাত্ম‌্য চলছে। এই রিকশাগুলো নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে। রিকশাগুলো মোটরচালিত হওয়ায় দ্রুত গতিতে চলে। বেপরোয়া গতিতে চলার কারণে প্রায় দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়।’


সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সংগঠক আশরাফুজ্জামান রিশাদ বলেন, ‘এই রিকশাগুলোর ওপর উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবু প্রকাশ্যে বাজারে দিব্যি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কয়েক সহস্রাধিক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এই বাহন নিয়ন্ত্রণে উপজেলা কর্তৃপক্ষ কিংবা পুলিশ বিভাগের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না উদ্যোগ।’ দ্রুত ব‌্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান তিনি।

জুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশার বিষয়ে উপজেলা পরিষদের মিটিংয়ে কথা হয়েছে।’ পুলিশকে টাকা দেওয়ার অভিযোগকে তিনি সম্পূর্ণ ‘ডাহা মিথ্যা’ ও ‘ভুয়া’ বলে অভিহিত করেন।