বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমদের ১০২তম জন্মবার্ষিকী আজ



বিজ্ঞাপন

জাহাঙ্গীর আলম ::

‘রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?
সেতারা, হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে?
তুমি মাস্তলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি।’

এই একটি কবিতা মুখে নিলেই যাঁর নাম মনের পর্দায় ভেসে ওঠে, তিনি বাঙালি ‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’ ফররুখ আহমদ। তাঁর জন্ম ১৯১৮ সালের ১০ জুন, (তৎকালীন যশোর জেলার অন্তর্গত) মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাঝাইল গ্রামে। সে হিসাবে আজ তাঁর ১০২তম জন্মদিন। তাঁর বাবা সৈয়দ হাতেম আলী ছিলেন একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর এবং মায়ের নাম রওশন আখতার। তাঁর কবিতায় বাংলার অধঃপতিত মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণের অণুপ্রেরণা প্রকাশ পেয়েছে। বিংশ শতাব্দীর এই কবি ইসলামি ভাবধারার বাহক হলেও তাঁর কবিতা প্রকরণকৌশল, শব্দচয়ন এবং বাক্‌প্রতিমার অনন্য বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। আধুনিকতার সকল লক্ষণ তাঁর কবিতায় পরিব্যাপ্ত। তাঁর কবিতায় রোমান্টিকতা থেকে আধুনিকতায় উত্তরণের ধারাবাহিকতা পরিস্ফুট। ‘সাত সাগরের মাঝি’ কাব্যগ্রন্থে তিনি যে কাব্যভাষার সৃষ্টি করেছেন তা স্বতন্ত্র এবং এ গ্রন্থ তার এক অমর সৃষ্টি।


১৯৪২ সালের নভেম্বর মাসে আপন খালাতো বোন সৈয়দা তৈয়বা খাতুন লিলির সঙ্গে ফররুখ আহমদের বিয়ে হয়। তাঁর নিজের বিয়ে উপলক্ষে ফররুখ ‘উপহার’ নামে একটি কবিতা লেখেন যা ‘সওগাত’ পত্রিকায় অগ্রহায়ণ ১৩৪৯ সংখ্যায় ছাপা হয়। ১৯৪৩ সালে কলকাতায় আইজি প্রিজন অফিসে, ১৯৪৪ সালে সিভিল সাপ্লাইতে এবং ১৯৪৬ সালে জলপাইগুড়িতে একটি ফার্মে চাকরি করেন তিনি। ১৯৪৫ সালে তিনি মাসিক ‘মোহাম্মদী’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তবে শেষ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে চাকরি করেন ঢাকা বেতারে। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে ফররুখ আহমদ কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে এসে ঢাকা বেতারে যোগ দেন। এখানেই প্রথমে অনিয়মিত হিসেবে এবং পরে নিয়মিত স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।

সাহিত্যের নানান শাখায় বিচরন করে তিনি রচনা করেন সনেট, হামদ-না’ত, গজল, কবিতা, নিবন্ধ, কাহিনীকাব্য, কাব্যনাট্য, ছড়া, গল্প, শিশু সাহিত্য। সাত সাগরের মাঝি, সিরাজাম মুনীরা, নৌফেল ও হাতেম, মুহূর্তের কবিতা, ধোলাই কাব্য, হাতেম তায়ী, নতুন লেখা, কাফেলা, হাবিদা মরুর কাহিনী, সিন্দাবাদ, দিলরুবা, পাখির বাসা, হরফের ছড়া, চাঁদের আসর, ছড়ার আসর, ফুলের জলসা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

১৯৬০ সালে ফররুখ আহমদ বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। কবি ফররুখ আহমদ ১৯৬৫ সনে প্রেসিডেন্ট পদক প্রাইড অব পারফরমেন্স এবং ১৯৬৬ সালে পান আদমজী সাহিত্য পুরস্কার ও ইউনেস্কো পুরস্কার। ১৯৭৭ ও ১৯৮০ সালে তাকে যথাক্রমে মরণোত্তর একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়।

ফররুখ আহমদ ১৯৭৪ সালের ১৯ অক্টোবর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।