সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী ও বিএনপির দুই প্রার্থী থাকায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির প্রার্থিতা নিশ্চিত না হওয়ার কারণে নেতাকর্মীরাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। আর আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী অর্থমন্ত্রীর সহোদর ড. এ কে আবদুল মোমেন মাঠপর্যায়ে উঠান বৈঠকে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সারা দেশের মতো মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনেও বিএনপি মনোনীত দুই প্রার্থী মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। এদের একজন প্রাইভেটাইজেশন কশিনের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী, অপরজন ব্যবসায়ী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির।
এ আসনে অর্থমন্ত্রীর ভাই ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আবদুল মোমেন প্রার্থী হওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীরাও এ আসনে হেভিওয়েট প্রার্থীকে দেখতে চাচ্ছেন। অপরদিকে বিগত সিসিক নির্বাচনসহ গত কয়েক বছর ধরে মাঠ চষে বেড়ানো খন্দকার মুক্তাদিরও আলাদা অবস্থান তৈরি করেছেন।
এ কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীরা যেমন অনেকটা গা-ছাড়া ভাব নিয়ে চলছেন, তেমনি টানা দুবার সিসিক নির্বাচনে বিজয়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নীরব রয়েছেন। তবে আরিফ অনুসারীরা বলছেন, যার হাতেই ধানের শীষ তুলে দেওয়া হবে, তার পক্ষেই আটঘাট বেঁধে আরিফুল হক মাঠে নামবেন।
এদিকে আরিফুল হক চৌধুরীর অনুসারীরা প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরীর সাথে প্রকাশ্যে ঘুরলেও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মুক্তাদিরকে এড়িয়ে চলছেন। নির্বাচন সামনে রেখে আরিফুল হক চৌধুরীর নীরবতাকে কৌশল হিসেবে দেখছেন বিরোধী শিবির।
টানা দুই সিটি নির্বাচনে স্থানীয় বিএনপির প্রায় সব শীর্ষ নেতার বিরোধিতার পরও মেয়র হয়ে চমক দেখিয়েছেন। তবে আরিফবিরোধীদের দাবি, ইনাম চৌধুরী না খন্দকার মুক্তাদির মনোনয়ন পাবেন তা এখনো নিশ্চিত না। ইনাম চৌধুরী হেভিওয়েট প্রার্থী, অপরদিকে খন্দকার মুক্তাদির সিসিক নির্বাচনে আরিফুল হকের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে কাজ করেছেন। এ মূহূর্তে হেভিওয়েট ইনাম চৌধুরীর পক্ষে মাঠে নামলে খন্দকার মুক্তাদির বলয় আরিফকে অকৃতজ্ঞ আখ্যায়িত করলে নিজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে। এ কারণে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত দুকূল রক্ষা করতে গিয়ে আরিফুল হক চৌধুরী নীরবতা পালন করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিএনপি নেতা বলছেন, মেয়র আরিফ চান না বিএনপির সিলেটমুখী কোনো নেতা নেতৃত্বে আসুক। ইনাম আহমেদ নির্বাচিত হলেও কেন্দ্রের রাজনীতির কারণে সিলেট থেকে দূরে থাকবেন এ ধারণা থেকেই তিনি মুক্তাদিরকে প্রার্থী হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না। এজন্য আরিফঘনিষ্ঠরা ইনাম আহমেদ চৌধুরীর জন্য কাজ করছেন।
মুক্তাদির সমর্থকদের দাবি, মুক্তাদির দীর্ঘদিন ধরে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। মাঠের নেতাকর্মীদের সঙ্গে রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। অন্যদিকে ইনাম আহমদ চৌধুরীর বাড়ি সিলেট হলেও সিলেটের সঙ্গে প্রায় সম্পর্কহীন। ফলে মুক্তাদিরকেই মনোনয়ন দেওয়ার দাবি তাদের।
তবে ইনাম আহমদ চৌধুরীর সমর্থকদের দাবি, এই আসনে সব দলই হেভিওয়েট প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়ে থাকে। এ আসন পুনরুদ্ধারের জন্য ইনাম আহমদের মতো সম্মানিত মানুষকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া প্রয়োজন।
এদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. এ কে আবদুল মোমেন মনোনয়নপত্র জমাদানের পর থেকেই একের পর এক উঠান বৈঠক করে যাচ্ছেন। দল কিংবা মহাজোটে অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায় তিনি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। সকাল থেকে রাত অবধি নেতাকর্মীদের সময় দিচ্ছেন তিনি।
এদিকে দেখা গেছে অর্থমন্ত্রীকে এড়িয়ে চলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ অনেক নেতাও ড. মোমেনের আশপাশে রয়েছেন। তাদের কথা হলো, আমরা নৌকার পক্ষে আপসহীন। আওয়ামী লীগ বড় দল হিসেবে মতবিরোধ থাকলেও নৌকা প্রশ্নে কোনো মতবিরোধ নেই।
বিএনপির প্রার্থী ইনাম আহমদ চৌধুরী বলেন, দল সিদ্ধান্ত দিলে সিলেট-১ আসনে নির্বাচন করব। যদি না দেয়, তবে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করে যাব।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, নেত্রী আমার হাতে নৌকা তুলে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী নিয়ে ৩০ ডিসেম্বর নৌকার বিজয় তুলে আনব।