আয়ারল্যান্ডে কঠিন এক সঙ্কটে বাংলাদেশি মোহাম্মদ দেলোয়ার ও তার পরিবার। একদিকে তার অসুস্থ সন্তান। অন্যদিকে ঘরে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী। এ অবস্থায় তাদেরকে দেখাশোনা করার কেউ নেই। উপায়হীন হয়ে দেলোয়ার বাংলাদেশে অবস্থানকারী তার শাশুড়িকে আয়ারল্যান্ডে নেয়ার চেষ্টা করেন। বার বার তার আবেদন ফেরত দেয় আয়াল্যান্ডের দিল্লি দূতাবাস। এ অবস্থায় কঠিন এক সঙ্কটের মুখে তিনি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আইরিশ টাইমস।
দেশটির কর্ক শহরে বসবাস করেন বাংলাদেশি দম্পতি মোহাম্মদ দেলোয়ার এবং সুমাইয়া রশিদ সামান্তা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি শাশুড়ি সালমা রশিদের জন্য ভিজিটর ভিসার আবেদন করেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে দিল্লিতে অবস্থিত আয়ারল্যান্ডের দূতাবাস তার আবেদন বার বার না-মঞ্জুর করছে। নিরুপায় দেলোয়ার এখন আইরিস সরকারের কাছে ভিসা মঞ্জুরের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
আইরিস টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দেলোয়ার জানান, তার স্ত্রী সামান্তা গর্ভবতী। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তিনি দ্বিতীয় সন্তানের মা হতে চলেছেন। ডায়াবেটিস বেড়ে যাবার কারণে সামান্তা মাতৃত্বজনিত নানান জটিলতায় ভুগছেন। এর ওপর এক বছর বয়সী ছেলের জন্মগত কিডনির সমস্যা থাকায় একই সময়ে তারও অস্ত্রোপচার করা হবে। সব মিলিয়ে এসময় শিশুটিকে দেখাশোনা করার মতো কাউকে প্রয়োজন। এজন্য তারা ভিজিটর ভিসায় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তার শাশুড়ি সালমা রশিদকে আয়ারল্যান্ডে নিয়ে যেতে চান। এজন্য অক্টোবরের মাঝামাঝি অবেদনও করেন আয়ারল্যন্ডের দিল্লি দূতাবাসে। সেখানে বাংলাদেশিদের ভিসার আবেদনও তদারক করা হয়। তবে সমস্ত সঠিক তথ্য দেয়া সত্ত্বেও দূতাবাসের পক্ষ থেকে এই দম্পতিকে জানানো হয়, পর্যাপ্ত অর্থের নথি দিতে না পারায় তাদের আবেদনটি না-মঞ্জুর করা হয়েছে। এছাড়া ভিসা আবেদন না-মঞ্জুর করার আরেকটি কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সালমা রশিদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পেশাগত ঘাটতি রয়েছে।
এরপর দেলোয়ার হোসেন দম্পতি সালমা রশিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২৬ হাজার ইউরো দেখিয়ে পুনরায় আবেদন করেন। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, সালমা রশিদ বিবাহিত জীবনে সুখী এবং বাংলাদেশে তার ১৫ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। যার কারণে তাকে বাংলাদেশে ফেরত যেতে হবে। দিল্লি দূতাবাসের ভিসা অফিসারকে লেখা এক চিঠিত তিনি বার বার উল্লেখ করেন, আমার ছেলের স্বাস্থ্যগত অসুস্থতা এবং একই সময় আমার স্ত্রীর দ্বিতীয় সন্তান জন্মদানের কারণে আমাদেরকে সহায়তা করতেই মূলত তিনি আয়ারল্যান্ড আসবেন। এছাড়াও ভিসা বাতিল হওয়ায় তার পারিবারিক চিকিৎসকের পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ কর হয়। এ বিষয়ে একটি চিঠি এবং কর্ক ইউনিভার্সিটি ম্যাটার্নিটি হাসপাতালের পক্ষ থেকে সামান্তার মাতৃত্বকালীন ঝুঁকির বিষয়গুলো তুলে ধরে একটি চিঠি দেন। তিনি আরো বলেন, আমি নিশ্চিত করছি যে, ভিসায় উল্লেখ করা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তিনি বাংলাদেশে ফিরে যাবেন। তিনি আয়ারল্যান্ডের সরকারি অর্থের ব্যবহার করবেন না।
দেলোয়ারের ওই শিশু সন্তানের অপারেশনের চারদিন আগে গত ১২ই নভেম্বর এই আবেদনও প্রত্যাখ্যান করেন ভিসা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, যার জন্য আবেদন করা হয়েছে তিনি ভিসার মেয়াদ পরবর্তীতেও আয়ারল্যান্ডে থেকে যাওয়ার বাস্তবিক ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়াও তার শাশুড়ির ব্যাংক একাউন্টে হঠাৎ করে প্রচুর অর্থের উৎস কি সে সম্পর্কেও পরিষ্কার ধারণা দেয়ার অনুরোধ করেন। এর জবাবে দেলোয়ার আইরিশ টাইমসকে বলেন, এ অর্থ তার নিজের কিছু জমানো অর্থ ও তার শ্বশুরের জমানো অর্থ। গত সপ্তাহে যখন লেডিস চিলড্রেন হাসপাতালে তার সন্তানের অপারেশন চলছিল তখন ফোনে দেয়া সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন দেলোয়ার। টানা ৫ ঘন্টা চলে ওই অপারেশন।
দেলোয়ার হোসেন জানান, আমার শাশুড়ি এদিন আমাদের পাশে থাকবেন বলে আশা করেছিলাম। পরিবারের দেখাশোনার জন্য আমাকে হয়ত চাকরিটি ছেড়ে দিতে হতে পারে। কিন্তু তারপর কি হবে? আমার স্ত্রী এখন বলছেন, আমাদের আয়ারল্যান্ডে চলে আসাটা বড় ভুল ছিল। রাস্তায় কুকুর নিয়ে যখন মানুষ হেঁটে যায়, তা দেখে আমার স্ত্রী আমাকে বলেন, এখানে আমাদের পরিবারের থেকে এই কুকুরগুলোর সঙ্গেও বেশি ভালো আচরণ করা হয়।
ভারতে অবস্থিত আয়ারল্যান্ডের দূতাবাসের পক্ষ থেকে দেলোয়ার হোসেনকে নতুন করে আবেদন জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে আয়ারল্যান্ডের বিচার বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেছেন, তারা কোন ব্যক্তিবিশেষের ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করবেন না। তিনি বলেন, ব্যক্তিবিশেষের ‘মেরিটের’ ওপর নির্ভর করে সব ভিসা বিবেচনা করা হয়। স্বল্প মেয়াদের শতকরা ৯০ ভাগ ভিসা সারাবিশ্বের জন্য অনুমোদন করা হয় ২০১৭ সালে। তিনি আরো বলেন, আইরিস ন্যাচারালাইজেশন অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস জরুরি ঘটনাগুলোকে প্রধান্য দেয়। এর ফলে দেলোয়ার হোসেন যদি নতুন করে আবেদন করেন, তাহলে তারা তা অগ্রাধিকার দেবেন।