আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরাসরি ভোট যুদ্ধে চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত বৃহত্তর সিলেটে প্রয়াত হেভিওয়েট দুই মন্ত্রীর স্ত্রীর। দুইজনই বর্তমান সরকারের সংসদ সদস্য এবং স্বামীর স্থলাভিষিক্ত হয়ে জনসেবায় নিয়োজিত। একজন সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনের ৮ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্ত ও অপরজন মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর) আসনের একাধিকবারের সংসদ সদস্য সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর স্ত্রী সৈয়দা সায়রা মহসিন। দুজনই আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
জাতীয় নেতা, বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান এবং ৮ বারের সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত পরলোক গমনের পর তার নির্বচানী এলাকার হাল ধরেন জয়া সেনগুপ্ত। ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ উপনির্বাচনে জয়া সেন এমপি নির্বাচিত হন। সেই থেকে ফরিদপুরের মেয়ে হাওরের ঢেউয়ের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে ঘুরছেন দিরাই-শাল্লার গ্রামে গ্রামে। যদিও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্তত অর্ধডজন প্রার্থীদের চাপে রয়েছেন। এসব প্রার্থীরা একাট্টা হয়ে জয়া সেনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নিজেরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। আবার তারা দলীয় মনোনয়ন ক্রয় করে জমাও দিয়েছেন।
অন্যদিকে জীবনে প্রথম রাজনীতিতে নেমেই ভোট যুদ্ধে লড়তে হয়েছে জয়া সেনকে। উপনির্বাচনের সবদলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলেও স্বতন্ত্র এক প্রার্থীর কাছে ঘাম ঝরাতে হয়েছে তার। নৌকা প্রতীক নিয়ে ড. জয়া সেনগুপ্ত ৯৬ হাজার ২৬০ ভোট পেয়ে সেই নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। তার নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রবাসী ছায়েদ আলী মাহবুব হোসেন রেজু সিংহ প্রতীকে পেয়েছিলেন ৪২ হাজার ১৭০ ভোট। আসন্ন নির্বাচনে ড. জয়াসেন গুপ্ত আবারো প্রার্থী।
জয়া সেনের শৈশব কৈশোর কেটেছে ফরিদপুরের ভাঙা উপজেলার মালি গ্রামে। ভাঙা এলাকার বনেদি পরিবারের সন্তান জয়া সেন লেখা পড়া শেষে প্রথম কর্ম জীবন শুরু ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজের প্রভাষক হিসেবে। সর্বশেষ তিনি ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচীর প্রধান ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে বাবা-মায়ের সঙ্গে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন পিতার আদিনিবাস কলকাতায়। কলকাতাতেই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন জয়া সেন। সুরঞ্জিত সেনের ৮ বারের সংসদ সদস্য হওয়ার পিছনে জয়া সেনেরেই অনন্য অবদান ছিল।
ড. জয়া সেনগুপ্তের মতে ‘দুর্গম হাওর এলাকার অবকাঠামো উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সবধরনের উন্নয়নে তার স্বামী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সম্পৃক্ত ছিলেন। তার অনেক স্বপ্ন ও উন্নয়ন তার মৃত্যুতে অসমাপ্ত রয়ে গেছে। যে সময়টুকু তিনি পেয়েছেন, তা পর্যাপ্ত ছিলনা। আগামীতে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা সুযোগ দিলে হাওরবাসীর উন্নয়নে কাজ করবেন।
মৌলভীবাজার মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর) আসনের এমপি ছিলেন সৈয়দ মহসিন আলী। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি গত ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ঐ বছরেরই ৮ ডিসেম্বরের উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দিলে প্রার্থী হন তাঁর স্ত্রী সৈয়দা সায়রা মহসিন। উপ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। সেই থেকে স্বামীর রেখে যাওয়া অসম্পূর্ণ কাজ বাস্তবায়নে লড়ছেন সায়রা মহসিন। আসন্ন নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। দলীয় মনোনায়ন সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। তার আসন থেকে আওয়ামী লীগের আরো ৭ প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে সৈয়দা সায়রা মহসিন আসন্ন নির্বচানের আওয়ামী লীগের মনোনয়নের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। তাঁর মতে, সভাপতি শেখ হাসিনা অতীতের মতো তাকে জনগণের সেবায় কাজ করার সুযোগ দিবেন।
উল্লেখ্য, পুনঃতফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৮ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ২ ডিসেম্বর। ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে। আর ভোটগ্রহণ ৩০ ডিসেম্বর।