মদীনার মসজিদে নববীতে সবুজ গম্বুজের নিচে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তার কবরটি বর্তমানে চারদিকে সুরক্ষিত বেষ্টনীতে আবদ্ধ। ফলে সরাসরি দেখার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু, এই কবর যিয়ারত করতে প্রতিনিয়ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য মুসলমান ছুটে আসেন রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কর্মময় জীবনের শেষ ১০ বছরের অবস্থানস্থল মদীনাতুল মুনাওয়ারায়।
এ নিবন্ধে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কবর সম্পর্কিত সাধারণের অজানা ছয়টি তথ্য পেশ করা হলো—
১. প্রবেশ পথে সোনালী গ্রিলের বেষ্টনী
রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং খলীফা হযরত আবু বকর (রা.) ও হযরত উমর (রা.)- এর কবরের কামরাটির প্রবেশ পথ স্থায়ীভাবে সোনালী গ্রিলে তৈরি বেষ্টনী দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহর (সা.) কবরের কামরায় প্রবেশের এখন কোনো সুযোগ নেই।
২. আয়েশার (রা.) ঘর
রাসূলুল্লাহকে (সা.) তার ইন্তেকালের পর উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়েশার (রা.) ঘরে দাফন করা হয়। অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহর (সা.) কবরের কামরাটি হযরত আয়েশার (রা.) ঘর ছিল। রাসূলুল্লাহর (সা.) অন্যান্য স্ত্রীর মতোই মসজিদে নববীর আঙ্গিনায় অবস্থিত ছোট এই ঘরটিতে আয়েশা (রা.) বসবাস করতেন। এই কামরাগুলো তখন মূল মসজিদ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহর (সা.) কবর মসজিদে নববীর মূল মসজিদের অভ্যন্তরে সংযুক্ত হয়।
৩. গ্রিলের তিন ছিদ্রপথ
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কবরগাহের কক্ষটি চারপাশে বেষ্টনীতে আবদ্ধ থাকায় রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং তার দুই সঙ্গীর কবর বাইরে থেকে দেখার কোনো সুযোগ নেই। শুধু কামরাটির প্রবেশ পথের গ্রিলে তিনটি ছিদ্র পথ রয়েছে, যা দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং তার দুই সঙ্গীর কবর সরাসরি দেখা যায়। বাম থেকে প্রথম বড় ছিদ্রপথ দিয়ে রাসূলুল্লাহর (সা.) কবর, মাঝের ছিদ্রপথে হযরত আবু বকরের (রা.) কবর এবং সর্বডানের ছিদ্রপথে হযরত উমরের (রা.) কবর দেখা যায়।
৪. দেওয়ালে ঘেরা
রাসূলুল্লাহর (সা.) কবরগাহের দেয়াল কালো পাথরে তৈরি এবং এই দেয়াল রাসূলের ও তার দুই সঙ্গীর কবরকে আবেষ্টন করে রেখেছে। ৯১ হিজরিতে খলিফা হযরত উমর ইবনে আবদুল আযীযের (র.) দেয়াল নির্মাণ করেন, যাতে কেউ রাসূলের কবরগাহে প্রবেশ করতে না পারেন।
৫. মাটির গভীর থেকে পরিবেষ্টন
সুলতান নূরউদ্দীন জঙ্গী গলিত সীসা দিয়ে রাসূলুল্লাহর (সা.) কবরের চারপাশকে মাটির গভীর থেকে আবদ্ধ করে দেন। বিভিন্ন সময়ে দুষ্কৃতিকারীরা কবর থেকে রাসূলুল্লাহর (সা.) লাশ চুরি করার চেষ্টা করলে সুলতান এই বেষ্টনী তৈরি করেন।
৬. ইন্তেকালের স্থানেই শায়িত
রাসূলুল্লাহ (সা.) যে জায়গাতে ইন্তেকাল করেছেন, ঠিক সে জায়গাতেই তাকে কবর দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহর (সা.) ইন্তেকালের পর অনেকেই তাকে তার মিহরাবের কাছে কবর দেয়ার কথা বলে আবার অন্যরা তাকে জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে দাফনের পরামর্শ দেন। কিন্তু, হযরত আবু বকর (রা.) বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছেন একজন নবী যেখানেই ইন্তেকাল করেন, সেখানেই তাকে দাফন করতে হয়। হযরত আবু বকরের (রা.) এ কথা অনুযায়ী তখন আয়েশার (রা.) কামরায় রাসূলুল্লাহর (সা.) ইন্তেকালের স্থানেই কামরার মেঝেতে কবর খনন করা হয় এবং এই কবরেই তাকে দাফন করা হয়।