সৌদি আরবে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা বন্ধ করছে দেশটির সরকার। মূলত সৌদিকরণে এ ধরনের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া দেশটির নাগরিক নন এমন কোনো ব্যক্তি আকামার বাইরে কাজ করতে পারবেন না।
একটা সময় আকামার বাইরে কাজ করার সুযোগ ছিলো প্রবাসীদের। দেশটিতে সরকারের ‘সৌদিকরণ’ ঘোষণার পর থেকে এখন এই সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ঘোষণার আগেও আকামার বাইরে অতিরিক্ত কাজ করা রাষ্ট্রীয়ভাবে অবৈধ হলেও এই বিষয়ে কোনো প্রকার কড়াকড়ি আরোপ করা হত না।
তবে সম্প্রতি ১২টি পেশায় কাজ নিষিদ্ধ করায় প্রবাসী ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। এসব পেশায় তারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছিলেন। অন্য পেশায় কাজ করায় সৌদি সরকার তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং নিজ দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। এদের একটি বড় অংশ তথাকথিত ‘ফ্রি ভিসা’ তে সে দেশে গেছেন।
জানা গেছে, এর আগে সৌদির নাগরিকরা প্রচুর অর্থ ব্যয় করতো নিজেদের জীবনযাপনে, কিন্তু এখন সেই অবস্থা আর নেই। কারণ দেশটির বেশিরভাগ নাগরিকেরই অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা চলছে। তাই শুধু বাংলাদেশই নয়, সেখান থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন অন্য দেশের নাগরিকরাও।
প্রবাসীদের জন্য নিষিদ্ধ কর্মক্ষেত্রগুলো হলো ঘড়ি, চশমা, ওষুধ, বৈদ্যুতিক ও ইলেক্ট্রনিক, প্রাইভেটকারের খুচরা যন্ত্রাংশ, ভবন নির্মাণের উপাদান, কার্পেট, অটোমোবাইল, ফার্নিচার, প্রস্তুতকৃত তৈরি পোশাক, শিশু ও পুরুষদের পোশাক, চকলেট ও মিষ্টির দোকান।
এসব কর্মক্ষেত্রের একটি বড় অংশ পরিচালিত হতো প্রবাসী শ্রমিকদের দিয়ে, যার মধ্যে বাংলাদেশি এবং ভারতের নাগরিকদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে গণহারে দেশে ফেরা শুরু করেছে পুরুষ শ্রমিকরা। তাদের মধ্যে অনেকেরই আকামার মেয়াদ ছিলো, আবার কারো আকামা ছিলো না।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের কেউ কেউ বাইরে অতিরিক্ত আয় হিসেবে কোনো কোনো শপিং মলের সামনে গাড়ি পরিষ্কারের কাজ করতেন। প্রবাসীদের এই ধরনের কাজ সে দেশে অবৈধ বলে গণ্য করা হয়। তাই পুলিশের চোখে পড়লে তাদের ধরে নিয়ে যায় এবং দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ডিপোর্ট সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়।
সর্বশেষ সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন ৮০ জন শ্রমিক। ১৭ অক্টোবর দুপুরে সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তারা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, তাঁরা সবাই সৌদি আরবের দাম্মামের ডিপোর্ট সেন্টারে (সফর জেলে) দেশে ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন।
এ নিয়ে এ মাসে দেশে ফিরলেন ৫৫৮ জন শ্রমিক। এর আগে ১০ অক্টোবর ১০৭ জন, ৭ অক্টোবর ১১০ জন, ৫ অক্টোবর ১১৭ জন এবং ৩ অক্টোবর ১৪৪ জন পুরুষ শ্রমিক দেশে ফেরেন। তবে এর বাইরে আরো কয়েকটি ফ্লাইটে সৌদি আরব থেকে পুরুষ শ্রমিকদের ফেরত আসার খবর বিভিন্ন অসমর্থিত মাধ্যম থেকে জানা গেছে।
এদিকে, সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকরা আকামায় (কাজের অনুমতিপত্র) উল্লেখিত পেশা ও যে কোম্পানি বা মালিকের অধীনে কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট করা আছে সেখানে কাজ করেনি। অন্য স্থানে বা অন্য পেশায় কাজ করায় সৌদি সরকার তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে এবং তাদের দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে।
বর্তমানে যেকোনো অভিবাসীকে এসব পেশায় নিয়োজিত পাওয়া গেলে তাদের অবৈধ বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া আগে নিষিদ্ধ সবজি বিক্রির দোকানে বাংলাদেশিরা কর্মরত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। অবৈধ শ্রমিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সৌদি সরকারের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ।’