সিলেটের সুতারকান্দি স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশনের বাঁশকল ভেঙে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে দুটি পাজেরো জিপ। গাড়ি দুটি অনুপ্রবেশ করে দ্রুত লাপাত্তা। দেশজুড়ে গুজব রটে, ‘ইলিয়াস আলী ফিরে এসেছেন’, আবার কেউ বলেছেন, ‘ঐ গাড়িতে হারিছ চৌধুরী ছিলেন’।
কালো গ্লাসে ঢাকা গাড়ি দুটি। দিনভর দেশজুড়ে গুঞ্জন। রহস্য উদঘাটনে তটস্ত গোয়েন্দা বাহিনী। ঘটনাটি ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবরের। যে গাড়ি নিয়ে এতো সব কাহিনী, পাঁচ বছর ধরে সিলেট কতোয়ালী থানার অভ্যন্তরে রোদে পুড়ছে বৃষ্টিতে ভিজছে সেই আলোচিত পাজেরো জিপ দুটি।
বিলাসবহুল জিপ দুটি অনুপ্রবেশের ঘটনায় কৌতূহলের জন্ম দিয়েছিলো, গুজব ডালপালা ছড়িয়েছিল। অনেকের মনে হয়েছিল কিছু একটা ঘটে গেছে। অবশ্য মাত্র ১৮ ঘণ্টার মাথায় খোলাসা হয়ে যায় গাড়ি দুটির ইমিগ্রেশনের বাঁশকল ভাঙার রহস্য।
গাড়ি দুটি উদ্ধারের পর বেরিয়ে আসে, শুল্ক ফাঁকি দিতেই মুলত গাড়ির মালিকদের এ উদ্ভট কৌশল। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক কাবলু মিয়া ও আসকর আলী ছিলেন গাড়ি দুটির মালিক। আমতর আলী নামে আরেক সহযোগীও ছিলেন তাদের সঙ্গে। তিনজনেরই বাড়ি সিলেটে।
এই তিন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ঢখ৭৫ঙঅএ ও খএ৫২তজঙ নম্বরের গাড়ি দুটি লন্ডন থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করান। পাজেরো জিপ দুটির মুল্য প্রায় চার কোটি টাকা। ঘটনার দিন (৩১ অক্টোবর ২০১৩) রাতেই সিলেট নগরীর উপশহর ও কুমারপাড়া থেকে জিপ দুটি উদ্ধার করা হয়। এ সময় গাড়িতে কোন চালক ও আরোহী ছিল না।
উদ্ধার করতে গিয়ে দেখা দেয় আরেক নাটকিয়তা। ইঞ্জিন চালু অবস্থায় রাখা ছিল গাড়ি দুটি। তাই গাড়িতে শক্তিশালী বোমা রয়েছে এমন ধারণা থেকে আতঙ্ক দেখা দেয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়দের মাঝে। অবশেষে র্যাব-৯ এর বোম ডিস্পোজাল টিম সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় গাড়ি দুটি উদ্ধার করে।
ভারতের সুতারকান্দি শুল্ক স্টেশন থেকে সেদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, গাড়ি দুটির আরোহীরা শুল্ক দিয়ে ছাড়পত্র নিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারকে ৪০ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকি দিতেই এ অভিনব কাণ্ড ঘটানো হয়।
কাবুল মিয়া এর আগে ২০১২ সালে আরো একটি গাড়ি নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠে। যদিও এ ব্যাপারে তখন বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনে কোন তথ্য ছিল না। মুলত সৌখিন প্রবাসীদের কেউ কেউ মাঝে মাঝে লন্ডনে নিজের ব্যবহৃত গাড়িটি সিলেটে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। আবার যাওয়ার সময় বিক্রি করে দিয়ে যান। ২০১৭ সালেও শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের অভিযানে সিলেট থেকে তিনটি গাড়ি উদ্ধার করা হয়েছিলো।
গাড়ি দুটির বর্তমান ঠিকানা সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কোতোয়ালী থানা চত্তর। পাঁচ বছর আগে উদ্ধারের পর যে জায়গায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল, এখনো সেখানেই আছে। একটুও নড়চড় হয়নি। রোদে পুড়ছে, বৃষ্টিতে ভিজছে প্রবাসীদের সখের এ গাড়ি দুটি।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম মিয়া জানান, গাড়ি দুটি উদ্ধারের পর তৎকালীন এস আই ইমরোজ তারেক বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলাটি এখনো আদালতে চলমান রয়েছে। কোটি টাকার গাড়ি দুটি নষ্ট হলেও পুলিশের কিছু করার নেই। মামলা শেষ হলে তখন আদালতের নির্দেশনা মতো ব্যবস্থা করা যাবে।