যুবকটির গায়ে আনসার ব্যাটালিয়নের পোশাক। দেখতেও বেশ সুদর্শন। স্থানীয় লোকজনের কাছে সে আনসার ব্যাটালিয়নের একজন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। গত কয়েকদিন ধরে সে ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। ঘুরে বেড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে স্থানীয় লোকজনের নিকট থেকে কৌশলে বিভিন্ন কাজের কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। যারা তার কথায় ভুলেছে তাদেরকে সে বিভিন্ন রকম ফরম দিয়েছে। কিন্তু তার সেই চালাকী শেষ পর্যন্ত স্থানীয় লোকজনের কাছে ধরা পড়ে যায়।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ওই ইউনিয়নের বড়ই বাজারে সে তার কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু উপস্থিত লোকজনের এতে সন্দেহ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় ওই যুবকের কথাবার্তায় অসংলগ্নতা প্রকাশ পেলে তারা তাকে আটক করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সঞ্জয় রায় চৌধুরীকে জানায়।
এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদে একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মসূচি পালনে ব্যস্ত ছিলেন। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোসাহিদ তালুকদারও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পরে ইউপি চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের পরামর্শে উত্তেজিত জনতা ওই যুবককে দুপুর দেড়টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে নিয়ে আসেন। ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি সাথে সাথে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ধর্মপাশা থানার ওসিকে জানান।
পরে বিকেল ৫টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান ওই যুবককে ধর্মপাশা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। এ সময় তার কাছ থেকে একটি ট্যাব ও বিভিন্ন লোকজনের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি উদ্ধার করা হয়।
ওই যুবক পুলিশের কাছে নিজেকে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার বড়তলী বানিহাড়ি ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মান্নানের ছেলে নাজিম মিয়া বলে পরিচয় দেয়।
ধর্মপাশা থানার ওসি সুরঞ্জিত তালুকদার মুঠোফোনে বড়তলী বানিহাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করেন। ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান ওসিকে তাঁর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেন।
ইউপি সদস্য নুরুজ্জামান ওসিকে জানান, কয়েকদিন আগে তিনি তাদের এলাকায় রুবেল নামের ছেলেকে এরকম পোশাক পড়ে ঘুরতে দেখেছেন। কিন্তু আটক যুবক সেই ছেলে কি না তিনি স্পষ্ট করে বলতে পারেননি।
আটক যুবক নাজিম মিয়া জানায়, প্রতারণার বিষয়টি সত্য নয়। সে আনসার ব্যাটালিয়নে চাকরি করতো কিন্তু কিছুদিন আগে তার চাকরি চলে যায়। সে এ পথ ধরে সিলেট যাচ্ছিল বলে দাবি করে।
জয়শ্রী ইউপি চেয়ারম্যান সঞ্জয় রায় চৌধুরী বলেন, প্রতারণার দায়ে স্থানীয় জনতা ওই যুবককে আটকের পর আমার ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসে। স্থানীয়রা জানিয়েছে ওই যুবক যার কাছ থেকে যত পারে টাকা নিয়েছে। পরে তাকে আমরা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোসাহিদ তালুকদার বলেন, জয়শ্রী ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসার পর ওই যুবক নিজেকে শেরপুরের বাসিন্দা বলে পরিচয় দিচ্ছিল। এ সময় উত্তেজিত জনতা তাকে মারধর করতে চাইলে আমরা তাকে রক্ষা করি।
ধর্মপাশা থানার ওসি সুরঞ্জিত তালুকদার বলেন, আনসার ব্যাটালিয়ন এর পোশাক ব্যবহার ও বিভিন্ন রকম প্রতারণার অভিযোগে স্থানীয় জনতা যুবকটিকে আটক করেন।