চট্টগ্রামের আলোচিত স্কুলছাত্রী তাসপিয়াকে কেউ হত্যা করেনি। ধার্ষণও করেনি। আত্মহত্যাই করেছিল সে। দীর্ঘ তদন্তের পর চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রোববার দুপুরে তাসপিয়া হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট মো. ওসমান গনির আদালতে জমা দিয়েছে।
এতে বলা হয়, তাসপিয়ার শরীরে কোনো বিষক্রিয়ার অস্তিত্ব মিলেনি। পাওয়া যায়নি ধর্ষণের কোনো আলামতও।
পানিতে ডুবে তার মৃত্যু হওয়ায় শ্বাসনালীতে কাঁদামাটি পাওয়া গেছে। যে কজন সাক্ষীর বক্তব্য নেয়া হয়েছে সবাই আত্মহত্যা বলেই সাক্ষ্য দিয়েছে বলে ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের ২ মে নগরীর পতেঙ্গা সৈকত এলাকা থেকে শানসাইন স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী তাসপিয়া আমিনের লাশ উদ্ধার করা হয় অজ্ঞাত হিসেবে।
ওইদিন দুপুরের দিকে মেয়ের লাশ পতেঙ্গা থানায় গিয়ে শনাক্ত করেন তাসপিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন।
এর আগের দিন মঙ্গলবার রাতে তাকে পতেঙ্গা সৈকতের ১৮ নম্বর ঘাটে দেখেন কিছু লোক।
এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় কথিত প্রেমিক আদনান মির্জাসহ ছয় জনকে আসামি করা হয়। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয় আরও ছয়-সাত জনকে।
আদালতে জমা দেয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ৭ জন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীর বক্তব্য এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত রিপোর্টের উপর নির্ভর করেই চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করে আদালতে জমা দেয়া হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশ- ডিবির উপ-পরিদর্শক স্বপন সরকার বলেন, ভিসেরা রিপোর্টে তাসপিয়ার শরীরে বিষক্রিয়ার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, ধর্ষণের আলামতও মিলেনি। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট তার শ্বাসনালীতে কাঁদামাটি পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে। ধারণা, পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার কারণে কাঁদামাটি শ্বাসনালীতে প্রবেশ করেছে।
মামলার সব আসামি বর্তমানে কারাগারে আছে। রিমান্ডে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
ডিবির এই তদন্ত কর্মকর্তার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সাক্ষী হিসেবে দেখানো হয়েছে, ১ মে সন্ধ্যায় সৈকতে ঘুরতে যাওয়া মো. খুদরুত ই ইলাহী, আশিকুর ইসলাম, এম এ খান আন্না, আবু তাহের, নুরুল আবছার, নুর হোসেন, বোট মাঝি লোকমান হোসেন, তৈল ব্যবসায়ী হারুণ, কৃষক মো. হোসেন ও চা দোকানদার মো. মনছুরকে। সাক্ষীর তালিকায় মোট ১৬ জনের নাম উল্লেখ করা হযেছে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, সকল কিছু পর্যালোচনা করে দেখা গেছে তাসপিয়া আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যাই তার মৃত্যুর কারণ।
এই মামলায় তাসপিয়ার কথিত প্রেমিক আদনান মির্জা ও আসিফ মিজান, যুবলীগ নেতা ফিরোজ কারাগারে আছেন।
মামলার শুরুতেই তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন সিএমপির পতেঙ্গা থানার উপপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন।
এরপর মামলাটি তদন্ত করার জন্য গোয়েন্দা পুলিশকে দেয়া হয়।
গত ২৯ জুলাই তাসপিয়ার প্রেমিক আদনানকে আদালত প্রাঙ্গণে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
১ মে নগরের গোলপাগাড় মোড় চায়না গ্রীল রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়েই সিএনজি অটোরিকশায় উঠে তাসপিয়া। এরপর সেই অটোরিকশাটি জিইসিমোড় হয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। এরপরের দিন মিলে তার লাশ।