রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

পলক ফেলতেই গায়েব ভবনগুলো
খবর: জাগো নিউজ

খবর: জাগো নিউজ



বিজ্ঞাপন

শরীয়তপুরে পদ্মার ভাঙনে একে একে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ভিটেমাটি, বাড়িঘরসহ নানা স্থাপনা। গত দেড় মাসে নড়িয়ায় সাড়ে তিন হাজার ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়েছে। গৃহহীন হয়েছে কয়েক হাজার পরিবার।

সোমবার অবশেষে পদ্মায় বিলীন হয়ে গেল ৫০ শয্যার নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ভবনের উত্তর দিকের অর্ধেক পদ্মায় ধসে পড়ে।

এর আগে সকাল থেকে ভবনের নিচের মাটি সরতে থাকে। বিকেল ৪টা থেকে ধীরে ধীরে নদীর দিকে ঝুঁকতে থাকে ভবনটি। দুই ঘণ্টার মাথায় ভবনটি পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়।

জানা গেছে, ২০১১ সালে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনটি নির্মাণের পর ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। আজ ভবনটি ধসে পড়ে। ভবনটি ধসে পড়ায় মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপর ১০টি ভবন।

এদিকে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরাতন ভবনেও বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। আতঙ্কে রয়েছে রোগী ও আশপাশের এলাকার লোকজন। সেই সঙ্গে আতঙ্কে হাসপাতাল ছেড়ে দিয়েছে রোগীরা।

স্থানীয়রা জানায়, গত দেড় মাসের ব্যবধানে নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের কেদারপুর, দক্ষিণ কেদারপুর, চর নড়িয়া, চর জুজিরা, পাঁচগাঁও, চন্ডিপুর গ্রাম, মোক্তারের চর ইউনিয়নের ইশ্বরকাঠি, শেরআলী মাদবরের কান্দি গ্রাম ও নড়িয়া পৌরসভার বৈশাখী পাড়া, বাঁশতলা ও পূর্ব নড়িয়া গ্রামের প্রায় সাড়ে তিন হাজার ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির নদীর পেটে চলে গেছে। পলক ফেলতেই গায়েব হয়ে যায় ভবনগুলো।

এর মধ্যে গাজী কালুর মেহমান খানা চারতলা বিলাসবহুল বাড়ি, তারা মিয়ার তিনতলা বাড়ি, হাফিজ কমিশনারের তিনতলা বাড়ি, নুর হোসেন দেওয়ানের তিনতলা বিলাসবহুল বাড়ি নদীগর্ভে চলে যায়।

এছাড়া নদীগর্ভে চলে গেছে মমিন আলী বেপারীর দুটি দোতলা ও একটি একতলা বাড়ি, জানে আলমের দোতলা বাড়ি, খোরশেদ বেপারীর দোতলা বাড়ি, মোহাম্মদ দিলু খার দোতলা পাকা বাড়ি, পলাশ বেপারীর দোতলা বাড়ি, জব্বার খানের দোতলা বাড়ি, আজাহার খানের দোতলা বাড়ি, জাহাঙ্গীর দেওয়ানের দোতলা বাড়ি, কুদ্দুস ঢালীর দোতলা বাড়ি, বেপারী মঞ্জিল নামে দোতলা বাড়ি ও অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদের দোতলা বিলাসবহুল বাড়ি।

কেদারপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইমাম হোসেন দেওয়ান বলেন, গত কয়েক বছরের ভাঙনে আমাদের দেওয়ান বংশের প্রায় ২৫ একর সম্পত্তি নদীগর্ভে চলে গেছে। সর্বশেষ এ বছর কয়েকটি বিলাসবহুল বাড়ি ও মূলফতগঞ্জ বাজারের দুটি বহুতল ভবনসহ ৪০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সর্বনাশা পদ্মা আমাদের নিঃস্ব করে দিয়েছে।

মুলতাফগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, পদ্মার কাছে কিছুই টিকছে না। সব গুঁড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাজার বিলীন হওয়ায় ১০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি।

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, পদ্মা নদীর গর্ভে চলে গেছে সাধুর বাজার, ওয়াপদা বাজার ও মূলফৎগঞ্জ বাজারের অর্ধেক এবং নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাড়ে তিন হাজার পরিবার। ভাঙনকবলিত মানুষের মাঝে হাহাকার চলছে।