রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

শ্রীমঙ্গলে মানুষের সঙ্গে গন্ধগোকূলের বসতি
বিশেষ প্রতিবেদক

বিশেষ প্রতিবেদক



বিজ্ঞাপন

বিচিত্র এক প্রাণি গন্ধগোকূল। এটি Viverridae গোত্রের নিশাচর ও স্তন্যপায়ী প্রাণি। বাংলাদেশে ৫টি প্রজাতি গন্ধগোকুল রয়েছে এর মধ্যে ৩টি প্রজাতি প্রায় বিলুপ্তির পথে। এই প্রাণি একাকী নির্জন পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে। সাধারণত গভীর রাতে শিকার এবং খাবার সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বের হয়। তার শরীর থেকে যে গন্ধ বের হয় তা দিয়েই প্রকাশ পায় তার মন মেজাজের অবস্থা। যখন সে খুব ফুরফুরে মেজাজে থাকে বা প্রজনন সময়ে পুরুষ সঙ্গী খোঁজে তখন শরীর থেকে আতব চালের গন্ধ বের হয়। অনেক দূর পর্যন্ত এই গন্ধ পাওয়া যায় এবং আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। আবার যখন সে ভয় পায় বা ভয় দেখাতে চায় তখন শরীর থেকে পচা গন্ধ বের হয় । শরীরের গন্ধ দিয়ে মেজাজ মর্জি বোঝায় বলেই এই প্রাণির নাম গন্ধগোকূল। তবে ভয় পাওয়া সময়ের খারাপ গন্ধের জন্য খাটাসও ডাকা হয়। ইংরেজী নাম Masked Palm Civet বৈজ্ঞানিক নাম : Paguma larvata.

গভীর জঙ্গলের এই প্রাণির একটি পরিবারের সম্প্রতি দেখা মিলেছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে লোকালয়ে। উপজেলার কলেজ রোডের একটি বাড়িতে গন্ধগোকূলের এই পরিবারে ৪ টি বাচ্চাসহ ৬ জন সদস্যের একটি দলের দেখা মিলে। তবে বাড়ির মালিক এই পরিবারকে তাড়িয়ে দেননি বরং আপন করেই নিয়েছেন। বেশ কিছুদিন বাড়ির লোকজন গড়ে ঢুকেই পোলাওয়েল গন্ধ পেতেন। তারা অবাক হয়ে খুঁজতেন কোথায় রান্না হল পোলওয়ের। এক সময় তাদের মধ্যে এক ভৌতিক ভয়ের কাজ শুরু করে। অবশেষে প্রাণিটিকে দেখার পর তারা সস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।

উপজেলার কলেজরোড ওই বাড়ির পরিবারের লোকজন জানায়, তাদের ঘরের ছাদের সিলিংয়ে বাসা বেধে একটি গন্ধগকূল পরিবার অনেক দিন থেকেই আছে। সেখানে রয়েছে বড় দুটি গন্ধগকুল ও চারটি বাচ্চা। সারা দিন-রাত বাড়ির সিলিংয়ের ভেতর ছুটাছুটি করে বেড়ায়।

বাড়ির এক সদস্য মো. শরিফ বলেন, আমরা খুব বিরক্ত তবে নিরাপত্তার কথা ভেবে তাদেরকে তাড়িয়ে দিচ্ছি না। এই গন্ধগোকূলগুলোর যন্ত্রনায় বাড়িতে থাকাটা কঠিন হয়ে পড়ছে। বন বিভাগ কিংবা বন্যপ্রাণি সেবা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বনে ছেড়ে দিয়ে আসার ব্যবস্থা করব। বন্যপ্রাণিদের তো মারতে পারি না। তাই কষ্ট হলেও তাদের সঙ্গেই বাস করছি।

বাংলাদেশ বন্যপ্রাণি সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব জানান, আমরা এ বিষটি জেনেছি চেষ্টা করা হচ্ছে উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করার। গন্ধগোকূলগুলো বাড়ির টিনের ছাদের নিচের সিলিংয়ের ভেতরে থাকায় তাদেরকে ধরাটা সহজ নয় ধরতে গেলেই পালিয়ে যাবে। বাড়ির সদস্যরা মিলে গন্ধগোকূলের দুটি বাচ্চা ধরে খাঁচায় রেখেছেন। আমরা চেষ্টা করছি এই বাচ্চার মাধ্যমে বড় দুটি গন্ধগোকূলকে উদ্ধার করার। এরপর তাদের বনে ছেড়ে দেয়া হবে।

বন্যপ্রাণি সংরক্ষক ও সেবক তানিয়া খান জানান, গন্ধগোকুল ইঁদুর, আম, কফি বীজ, আনারস, তরমুজ, কলা, ছোট পাখি, টিকটিকি, ছোট সাপ, ব্যাঙ, শামুক ইত্যাদি খেতে পছন্দ করে। এরা গভীর বনের প্রাণি তবে অনেক সময় মানুষের কাছাকাছি আসে। বিশেষ করে পরিত্যক্ত ঘরে এরা মাঝে মাঝে বাসা করে। এরা দেখতে অনেকটা বিড়ালের ন্যায় তবে লেজ লম্বা শরীরের লোম অনেকটা বাদামী বর্ণে তবে সারি সারি কালো ছোপ ছোপ দাগও থাকতে পারে। লম্বায় ১৬-৩৪ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে এরা বিপন্ন অবস্থায় আছে।