বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

ডিভোর্সের পরও সুবর্ণাকে হত্যার হুমকি দিতেন শ্বশুর
নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক



বিজ্ঞাপন

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আনন্দ টিভি’র পাবনা প্রতিনিধি সুবর্ণা নদী ও ব্যবসায়ী আবুল হোসেনের ছেলে রাজীব হোসেনের বিয়ে হয় গোপনে। সবার অমতে বিয়ে হওয়ায় আবুল হোসেন এই সম্পর্ক মেনে নেননি। এ কারণেই জোর করে ছেলেকে দিয়ে ডিভোর্সও করান। এতোকিছুর পরও বসে ছিলেন না তিনি। সুবর্ণাকে প্রতিনিয়তই প্রাণনাশের হুমকি দিতেন বলে অভিযোগ করেছেন সুবর্ণার মা ও স্বজনরা।

নিহত সুবর্ণার স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাংবাদিক সুবর্ণা আক্তার নদীর এটি দ্বিতীয় বিয়ে। সুবর্ণার প্রথম স্বামী নেশায় আসক্ত হওয়ায় বিয়ের এক বছরের মাথায় ২০০৯ সালে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। এছাড়া বাল্যবিয়ে হওয়ায় তখন অল্পবয়সী সুবর্ণা তার শিশু সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। তবে কিছুদিনের মধ্যেই সব গুছিয়ে নিয়ে আবার পড়ালেখা শুরু করেন।

এর মধ্যেই ২০১৫ সালে দিকে রাজীবের সঙ্গে পরিচয় হয় সুবর্ণার। তারপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে ২০১৬ সালের ৬ জুন গোপনে কাজী অফিসে গিয়ে ৫ লাখ দেনমোহরে সাংবাদিক সুবর্ণাকে বিয়ে করেন রাজীব। বিয়ের কিছুদিন পর রাজীবের পরিবার বিষয়টি জেনে যায়। রাজীবের বাবা আবুল হোসেন ও তার মা আসলিমা হোসেন এই বিয়ে কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। তখন সুবর্ণাকে ডিভোর্স দেয়ার জন্য রাজীবকে চাপ দিতে থাকেন তার মা-বাবা। এরই মধ্যে রাজীবের বাবা তার বোনের মেয়ের সঙ্গে রাজীবের বিয়ে ঠিক করে ফেলেন। আর এ কারণেই রাজীবকে জোর করে ডিভোর্স করিয়ে নেন তার বাবা।

কিন্তু সুবর্ণা ডিভোর্স পেপারে সই না করে স্বামীর অধিকার পাওয়ার জন্য তাদের বাড়ির গেটের সামনে অনশনে বসেন। তখন রাজীবের বাবা তাদের লোকজন এবং পুলিশ দিয়ে সুবর্ণাকে জোর করে তুলে দেন। এ সময় রাজীবের বাবা সুবর্ণার নামে মিথ্যা মামলা এবং প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকেন। কিন্তু সুবর্ণা তাতে থেমে যাননি। তিনিও অধিকার আদায়ে উল্টো থানায় মামলা করতে যান। তৎকালীন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক অজানা কারণে সে মামলা নেননি। তিনি আবুল হোসেনের সঙ্গে সুবর্ণাকে লড়ার বিষয়ে সতর্ক করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

পরে সুবর্ণা তার অধিকার আদায় এবং জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে পাবনা সংবাদপত্র পরিষদে সংবাদ সম্মেলন করেন। পরে একই দাবিতে তিনি ঢাকা ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন। এরপর আবার তিনি রাজীবের বাসায় গিয়ে তার অধিকার চান। তখন রাজীব ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর সুবর্ণা অধিকার আদায় আর নিরাপত্তার জন্য কোর্টে গিয়ে মামলা করেন (মামলা নং-সিআর ২৯৭/১৭ পাবনা)।

সুবর্ণার মা মর্জিনা বেগম বলেন, ‘বিয়ের পরে রাজীব আমাদের বাড়িতে এসে থাকতো। আমার মেয়ের সংসারের যাবতীয় খরচ দিতো। আর বলতো শিগগিরই বাবা-মাকে বুঝিয়ে তাদের বাড়িতে সুবর্ণাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু রাজীবের বাবা আবুল হোসেন জোর করে ডিভোর্স করানোর পরও আমার মেয়েকে বিভিন্ন সময় প্রাণনাশের হুমকিসহ ভয়ভীতি দেখাতো। আমার মেয়ে তার অধিকার আর জীবনের নিরাপত্তার জন্য কোর্টে মামলা করে। আর এই মামলাই তার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়।

তবে রাজীবের বড় বোন শাপলা খাতুন বলেন, ‘আমার ভাই রাজীবকে জোর করে বিয়ে করেছিল সুবর্ণা। আমাদের বাড়িতে সুবর্ণা কখনও আসেনি। এছাড়া এর আগেও তার বিয়ে হয়েছিল, তার একটি সন্তান আছে। আর আমাদের পরিবারের সঙ্গে তাদের পরিবার কখনও মিলবে না। তাই আমাদের পরিবার কখনও এই বিয়ে মেনে নেয়নি। আমার বাবাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, নিহত সুবর্ণা নদী পাবনা শহরের রাধানগর মহল্লায় আলিয়া মাদ্রাসার গলিতে ভাড়া বাসায় মা ও একমাত্র শিশু কন্যা নিয়ে বসবাস করতেন। মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে প্রেসক্লাব সড়কের রানা শপিং কমপ্লেক্স থেকে তার অফিসে কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে বাসার সামনে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা দুষ্কৃতকারীরা সুবর্ণা নদীর পেটে, মাথা ও ঘাড়ে অতর্কিতভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এ সময় তার চিৎকারে বাসা থেকে মা ও মেয়ে এবং আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুবর্ণাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সাংবাদিক সুবর্ণার সাবেক শ্বশুর সিমলা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি ইড্রাল ফার্মার মালিক শিল্পপতি আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।