ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ঘাতকের নাম এনা পরিবহন। মহাসড়কে দুর্ঘটনার কারণে বারবার খবরের শিরোনাম হচ্ছে এনা পরিবহন। ঢাকা থেকে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার রুটে চলাচলকারী এনা পরিবহনের বাসগুলো প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এসব দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল যেমন দীর্ঘ হচ্ছে তেমনি আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছে অনেকে।
গতকাল বুধবারও (২৯ আগস্ট) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে এনা পরিবহনের বাসের তিন যাত্রী এবং নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় এনার বাসের চাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন।
একদিনে পাঁচ প্রাণ কেড়ে নেয়ার এমন ঘটনায় আবারও সমালোচিত হয়েছে এনা পরিবহন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিন্দার ঝড় বইছে এনা পরিবহনের বিরুদ্ধে।
অবশ্য দুর্ঘটনার কারণে নিজেদের কিছুটা বদনাম থাকার কথা স্বীকারও করেছেন এনা পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক আতিকুল আলম।
এদিকে গেল ট্রাফিক সপ্তাহে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে যেসব যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে তার মধ্যে এনা পরিবহনের বাস ২০ শতাংশ বলে জানিয়েছেন খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হোসেন সরকার।
যদিও আতিকুল আলমের দাবি, ট্রাফিক সপ্তাহে এনা পরিবহনের সব বাসের কাগজপত্রই বৈধ ছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৩৬ কিলোমিটার অংশে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে বেশিরভাগ দুর্ঘটনাই জেলার সরাইল ও বিজয়নগর উপজেলার অংশে ঘটে থাকে। মূলত চালকদের অদক্ষতা, ওভারটেকিং আর বেপরোয়া গতিই এসব দুর্ঘটনার কারণ বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।
এছাড়া ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বেশ কিছু বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে। এ বাঁকগুলো সতর্কতার সঙ্গে অতিক্রমের নির্দেশনা থাকলেও চালকরা সেই নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ মহাসড়ক দিয়ে শ্যামলী পরিবহন, ইউনিক পরিবহন, হানিফ পরিবহন ও এনা পরিবহনের বাসগুলো দ্রুত গতিতে চলে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি গতিতে চলে এনা পরিবহনের বাস। যাত্রীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার নামে ওভারটেকিং করে এনার বাসগুলো দ্রুতগতির প্রতিযোগিতায় নামে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গেল কয়েক বছরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে যে কয়েকটি দুর্ঘটনার কারণে এনা পরিবহন বেশি সমালোচিত হয়েছে তার মধ্যে ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সরাইল উপজেলার গোগদ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারানো বাসের চাপায় তিন নারী পথচারী নিহত, ২০১৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বিজয়নগর উপজেলার শশই এলাকায় বাসের চাপায় মাইক্রোবাসের ৮ আরোহী নিহত এবং সর্বশেষ গতকাল বুধবার সরাইল উপজেলার বৈশ্বামুড়া এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে তিনজন যাত্রী নিহত ও নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার আমতলা এলাকায় এনা পরিবহনের বাসের চাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহতের ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
দুর্ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে এনা পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক আতিকুল আলম বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সড়কে আমাদের গাড়ি দুর্ঘটনার কারণে একটু বদনাম ছিল। সেজন্য আমাদের প্রতিটি গাড়ির পাম্পের গোড়া সিল মেরে লক করে দেয়া হয়েছে যেন গতি ৮০’র বেশি না ওঠে। যেহেতু সড়কে ৮০’র উপরে গাড়ি চালালে মামলাও হয় সেজন্য গতিসীমা ৮০ নির্ধারণ করে দিয়েছি। এছাড়া ২০ লাখ টাকা খরচ করে ব্র্যাকের কাছ থেকে আমাদের ৪শ’ চালককে প্রশিক্ষণ করিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি চালককে আমরা গাড়ি ছাড়ার আগে বলছি যেন গাড়ি আস্তে চালায়। তারপরও সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে এ জন্য আমি নিজেই কষ্ট পাচ্ছি। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি দুর্ঘটনা রোধ করতে ‘
অপরদিকে খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি মো. হোসেন সরকার বলেন, বেপরোয়া গতির কারণেই এনা পরিবহনের বাসগুলো দুর্ঘটনার শিকার হয়। গতকালের দুর্ঘটনাও বেপরোয়া গতির কারণেই ঘটেছে। আমরা দুর্ঘটনার পর এনার চালকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নিচ্ছি, বাসগুলোর বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছি।