জহিরুল আবেদীন জুয়েল:
রাত দুটো বেজে বিশ মিনিট। প্রতিদিনকার মতোই এ সময়ে বিছানায় শুতে যাই। হঠাৎ আমার স্ত্রীর মোবাইলে রিং বেজে উঠলো। চমকে উঠলাম, এতো রাতে কার ফোন!! স্ক্রিনে চোখ রেখেই দেখি পাশের ফ্ল্যাটের নজরুল ভাইয়ের স্ত্রী ফোন করেছেন। ভাবী উদ্বিগ্ন, নজরুল ভাই হঠাৎ অনেক অসুস্থ। অতো কথা শোনার সময় নেই, তাড়াহুড়ো করে চলে গেলাম তাদের ফ্ল্যাটে। নজরুল ভাই বমি করছেন, প্রেশার হাই। তিনি এমনিতেই ডায়াবেটিসের রোগী।
তাৎক্ষণিক গ্রামীণফোনে ডাক্তার হেল্পলাইনে কল দিলাম। তাঁর কাছ থেকে প্রাথমিক পরামর্শ নিলাম। কিন্তু তিনি একটা ঔষধ দিয়েছেন সেটি কেনার মতো কোনো ফার্মেসিও খোলা নেই। ডাকা হলো বিল্ডিংয়ের মালিককে। তিনিও এলেন। প্রেশার আবার মাপা হলো, আরো বেড়ে গেলো। এবার আর দেরি না করেই বেরিয়ে পড়লাম হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। ইতোমধ্যে ৪/৫ বার বমি করে ফেলেছে, চোখ খুলতে পারছেন না- সব নাকি ঘুরছে। গন্তব্য বারডেম হাসপাতাল।
বারডেমে যখন পৌঁছলাম তখন ঘড়িতে তিনটা পনেরো। গাড়ি থেকে নেমে আবারো বমি। এবার শরীর পুরো নিস্তেজ! কোনোরকমে হুইল চেয়ারে বসিয়ে জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলাম। ওখানে ঢুকেই আবারো বমি। ডাক্তার সাহেব বিজি, একজন রোগীর স্বজনের সঙ্গে কথা বলছেন। দৌঁড়ে গিয়ে কর্তব্যরত ডাক্তার সাহেবকে জানালে তিনি বললেন, উনাকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াকে নিয়ে যান। আমি বললাম, উনার প্রেশার হাই, বারবার বমি করছে। একেবারে নিস্তেজ হয়ে গেছে, একটু দেখতেন যদি! তিনি ঘাড় উঁচু করে বললেন, ‘আমার কথা বুঝেননি? উনার হার্টে সমস্যা থাকতে পারে, যেখানে বললাম সেখানে নিয়ে যান।’
অবস্থা বেগতিক উভয় দিকে- রোগীর শারীরিক নিস্তেজতার কারণে বারডেমের জরুরি বিভাগ থেকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াকের জরুরি বিভাগে নেয়াটা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে । অন্যদিকে ডাক্তারও চিকিৎসা করবেন না- তাঁর কাছ থেকে মানবিকতার চিহ্নটুকু পেলাম না। অথচ কর্তব্যরত নার্স এগিয়ে এসেছিলেন রোগীর ডায়াবেটিস মাপতে। যখন শুনলেন ডাক্তার সাহেব ইব্রাহিম কার্ডিয়াকের কথা বলেছে তিনিও চলে গেল।
এ অবস্থায় আবারও গেলাম ডাক্তারের কাছে, বললাম আপনি একটু চেক করে দেখুন বমিটা কেন হচ্ছে, আর আমরাও তাকে নেয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। তাঁর উত্তর ‘তাহলে অপেক্ষা করুন, আমি রেফার করে দিচ্ছি।’ তার মানে তিনি এবার কাগজে কলমে আমাদের বাইরে পাঠাবেন। অসহায় আমরা। বেরিয়ে পড়লাম তার রুম থেকে। সাথে ছিলেন আমাদের বাসার মালিক। তাকে বললাম, চলুন আরেকবার চেষ্টা করে দেখি অন্তত ডায়াবেটিস কত সেটা জানতে পারি কিনা। আবারো অসহায়ের মতো ডাক্তারের কাছে বললাম, ডায়াবেটিস কি মাপার ব্যবস্থা করা যায়? তখন তিনি কলম দিয়ে ঘটাঘট কয়েকটি টেস্ট লিখে দিলেন। দৌঁড়ে গেলাম দোতলায় টাকা জমা দিতে। রিসিট নিয়ে আসার পর শুরু হলো চিকিৎসা। দেখা গেল রোগীর শুধু প্রেশার হাই আর বমি হচ্ছে। অন্যসব নরমাল। ডাক্তার চেকআপ করার পর গেলাম তার পিছু পিছু।
তিনি বললেন, টাকাপয়সা আছে? ভর্তি করাতে পারবেন?
যেহেতু আমরা তাঁর নিকট অসহায় মানুষ, তাই নিচু স্বরে বললাম- জ্বি আছে।
তাহলে দোতলায় গিয়ে ১০,০০০ টাকা জমা দিয়ে রিসিট নার্সকে দেখান ভর্তি নিয়ে নেবে।
অবশেষে ভর্তি হলো… চিকিৎসা হলো… রোগীও সুস্থ প্রায়।
আমার মনে প্রশ্ন, জনাব ডাক্তার এতো জ্ঞানী মানুষ ছিলেন যে দূর থেকেই রোগীর হার্টে সমস্যা পেয়ে গেলেন। কী করে? তবে পরে আর হার্টের কোনো সমস্যা নেই কেন? আমাদের মতো অসহায় রোগীদের কেন এতো অবহেলা করেন ডাক্তার সাহেবেরা?
(ফেসবুক থেকে নেওয়া)