অর্থনৈতিক মুক্তির তাগিদে নিত্যদিন ঘরে-বাইরে পুরুষের যেমন নিরলস সংগ্রাম চলছে,স্বাবলম্বী হওয়ার দৌড়ে তেমনি পিছিয়ে নেই নারীরাও। সংযুক্ত আরব আমিরাতের নারী উদ্যোক্তা আঁখিও সেই সংগ্রামীদের একজন।
পুরো নাম শেফালী আক্তার আঁখি। বাড়ি বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায়। তিনি ফরিদপুর কাকরধা গ্রামের মোহাম্মদ আলী হোসেন হাওলাদার ও লালবড়ু বেগমের সন্তান। কাকরধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আল হেলাল উদ্দিন কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করে গুলশান বারিধারায় একটি বায়িং হাউজে চাকরি করেন ১১ মাস। এরপর ২০০৩ সালের মে মাসে শারজাহ ফ্রি জোনের ভিসা নিয়ে প্রথম পা রাখেন আমিরাতে। একবছর কাজ করেন একটি কোম্পানির রিসিপশনে। এরপর স্বামী মাজহারুল ইসলাম মাহবুবের সহযোগিতায় শুরু করেন ক্ষুদ্র ব্যবসা।
নিজের বুদ্ধি, সাহস, মনোবল, সততা ও অদম্য ইচ্ছার সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম ধীরে ধীরে তাকে নিয়ে যায় সাফল্যের উচ্চ শিখরে। কঠোর পরিশ্রমে অসাধ্যকে সাধন করা বাংলাদেশি এ নারী উদ্যোক্তা ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন প্রবাসী নারীদের সাফল্যের মডেল। তাকে দেখে রীতিমতো অনুপ্রাণিত হন অন্যান্য নারী উদ্যোক্তা। ব্যবসা সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ ইতোমধ্যে আমিরাতে প্রবাসী বাংলাদেশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে অনেকবার বিশেষ সম্মাননা পুরস্কারও লাভ করেন তিনি। ব্যবসার পাশাপাশি শেফালী আক্তার আঁখি একজন দক্ষ ও সফল সংগঠক হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছেন।
পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অবস্থান তুলে ধরে আঁখি বলেন, ‘বর্তমানে ছেলেদের পাশাপাশি নারীদেরও কাজ করার মানসিকতা বাড়ছে। সেলাই, বুটিকসহ হাতের কাজগুলো তারা ঘরে বসেই করছে। অনেকে বলে,আমিও চাই আপনার মতো কাজ করতে। বিষয়টি আমাকে বেশ অনুপ্রাণিত করে। আমার বিশ্বাস, যারা উদ্যোগী হয়ে এগিয়ে আসবেন তারা ভবিষ্যতে অবশ্যই সফল হবেন।’
আমিরাতে সফল ব্যবসায়ী দম্পতির খ্যাতি রয়েছে মাহাবুব-আঁখি জুটির। স্বামী মাজহারুল ইসলাম মাহাবুবের বাড়ি দিনাজপুর ঘোড়াঘাট এলাকায়। তিনি আমিরাতে আসেন ১৯৮২ সালে। প্রথম এসে গার্মেন্টেসে চাকরি করেন। পরে অরিয়েন গার্মেন্টস দিয়ে শুরু করেন ব্যবসায়িক কার্যক্রম। বর্তমানে মাহবুব গ্রুপ অব কোম্পানিজ নামে আমিরাতে একটি শিল্প গ্রুপ গড়ে তুলেছেন তিনি। এই গ্রুপের ম্যানেজিং পার্টনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আঁখি। তাদের মালিকানাধীন গ্রুপের অধীনে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ওরিয়েন্ট গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি,আল বোরাক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, কামিল টেইলারিং অ্যান্ড এমব্রয়ডারি এলএলসি, জাহারাত আল বুসতান মেইন্ট অ্যান্ড ক্লিনিং। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন প্রায় ১৪৫ শ্রমিক।
কর্মনিষ্ঠায় সাফল্যের ছোঁয়া পাওয়া আঁখি বলেন,‘যখন আমিরাতে এসেছিলাম, অনেকেই অনেক মন্তব্য করেছে। কিন্তু নিজে থেমে থাকিনি। বলতে গেলে কেউ রাজি ছিল না বিদেশে আসি। শুধু নিজের জেদের ওপর নির্ভর করেই বেড়িয়ে পড়ি। ইচ্ছে ছিল কিছু একটা করে দেখাবো।’
সাফল্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সফলতা সব কিছুতেই পেয়েছি। যা চেয়েছি তার চেয়ে বেশিই পেয়েছি। ছোটবেলা ইচ্ছে ছিল সাইকেল চালানোর আর এখন ল্যান্ডক্রুজার চালাচ্ছি। দেশে-বিদেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি। সব সম্ভব হয়েছে স্বামী মাহবুবের সহযোগিতার কারণে।’
আরব আমিরাতে বসবাসের খরচ বেড়েছে উল্লেখ করে আঁখি বলেন,‘এখন কিছুটা খরচ বেড়ে গেছে সকল ক্ষেত্রে। আইডিতে নবায়ন, ব্যাংক গ্যারান্টি, লাইসেন্সে বাড়তি টাকা, ভিল্লা’র(বাসা) সামনে রাস্তা করার টাকা এগুলো দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে,ভিসা বন্ধ থাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিজ দেশের শ্রমিক না পাওয়ায় ভিনদেশি শ্রমিকের পেছনে অতিরিক্ত খরচও করতে হচ্ছে। ব্যবসায় পরিচালনার জন্য এগুলো বাড়তি চাপ। কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে।’ প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন,‘ আমিরাতে বর্তমান ব্যবসার পরিধি আর না বাড়িয়ে এবার দেশে ব্যবসা গোছানোর পরিকল্পনা করছি। দেশের প্রোপার্টিগুলো নিয়ে ভাবছি। আবাসন প্রকল্প, ইট-ভাটা চালু করবো শিগগিরই।’