মাহমুদ এইচ খান:
শিরোনামটা কেমন হয়ে গেল না? কিন্তু প্রসঙ্গ তেমন নয়। শুরুটা মানুষের স্বাভাবিক একটা বৈশিষ্ট্য দিয়েই করবো, তার পর তার উপর আলোকপাত হবে। স্বার্থপরতার নিয়ে আমাদের উপলব্ধি রয়েছে। একজন স্বার্থপর মানুষও স্বার্থপরতার শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা উপলব্ধি করে। আবার যার দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হয় তাকে গালি দেয়। কিন্তু নিজেকে বুঝে না। এই না বুঝাই আমাদের সমাজে বিষধর সাপের মতো শান্তিকে ধ্বংসন করছে। আমি আমার স্বার্থ হাসিলে মরিয়া, সে তার স্বার্থ হাসিলে মরিয়া, সবই এক অপরের ক্ষতির মধ্য দিয়ে হাসিল হচ্ছে। নিজেকে রক্ষা না করে অন্যকে আঘাত করার চেষ্টায় রয়েছে উভয়ই। তার বিপরীতে একজন নিঃস্বার্থ মানুষ কেমন থাকতে পারে?
কারো কাছে মৃদু কথা আর তেল দিয়ে নিজেকে উপস্থাপনে না করলে শত ভালো কাজের মূল্যায়ন পাবেন না সে। আর তা পারলে তার সামগ্রিক মন্দটাও ভালো হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। অথচ আত্মকেন্দ্রিক মানুষগুলোই ‘বিচক্ষণতা’র কথা বলে, নিজেকে শুদ্ধশীল প্রমাণ করতে চায়। কিন্তু বাস্তবতায় এসো তারা অমানবিকতার চরম সীমায় দাঁড়িয়ে মুখোশের আড়ালের মানুষটার পরিচয় দিয়ে যায়। তাদের আমরা ভালো ভাবলেও তারা ছদ্মবেশী স্বার্থপর। অবশ্য বুলিতে আহা কি শুদ্ধ নীতি তাদের। ভাবতেই অবাক লাগে।
স্বার্থের জন্য পেছনের একটা দিনও ভুলে যায় তারা, ভুলে যায় তার প্রতি আপনার সহানুভূতি, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। আপনার নিরঙ্কুশ আবদার তখন তার কাছে বিরক্তিকর। কারণ আপনার প্রয়োজন ওই ১ দিনই ছিলো। এর থেকে বেশি প্রয়োজন যেখানে মিটবে সেই হবে তার ভগবান। কিন্তু দু’দিন আগের ভগবান আপনি যে ছিলেন তা তো রেকর্ড হয়। কখনো আধুনিক ডিভাইসে আর কখনো স্মৃতিতে। মানতে হবে প্রয়োজনের তাগিদেই তো সব কাজই হয়। কিন্তু তা মুখোশধারী হয়ে যোগান নিতে হবে কেন? সাহায্য চাইলেই হয়। আমি এই প্রশ্নের উত্তর পাইনা। কিন্তু না সাহায্য করবে অদৃশ্য শক্তি, আর প্রয়োজন স্বার্থক করবে দৃশ্যমান মানুষ। আর বাস্তবতায় স্বার্থন্বেষীদের ভগবান হয়ে বসে এই মানুষ। তার আনুগত্য তখব খুব মোলায়েমভাবে হয়।
ভুক্তভোগী আপনি তা ভাবছেন কেন? আপনি শুধু তার মতো হতে পারেন নি। পার্থক্য এখানে। কিন্তু ওই একদিনে অনেক সর্বনাশী সুযোগ আপনাকেও ডেকেছিলো। কিন্তু সাড়া দেন নি। কেন দেন নি তা তারা বুঝবে না। কিন্তু মুখোশের আড়ালের স্বার্থপরদের ঠেকাতে কিছু তো ঢিল রাখতে হয়। যারা বহুবার স্বার্থের কষাঘাতে নির্বোধ বনেছেন তাদের অন্তত সতর্ক থাকা লাগে। কিন্তু যে ঢিল কুড়াবেন তা ছুড়তে হয়না। ছুড়বেন না, খুব প্রয়োজন না হলে। আর ছুড়লেও তা যেন ক্ষতির উদ্দেশ্যে না হয়। শুধুই তার মুখোশকে তার সামনে ধরিয়ে দিন।
তারা হয়তো আপনার জীবনে অন্ধকার ঢেলে দিতে পারে তাই বলে আপনিও সুযোগের ব্যবহার করবেন? সে তো বিশ্বাস করেছিলো। বিশ্বাসে তার দুর্বলতা আপনার কাছে ধরা দিয়েছে। প্রয়োজনের বাইরে গিয়ে সে বিশ্বাস কিংবা মর্যাদার নির্থক হয়ে গেছে কিন্তু বিশ্বাস নামের এই একক শব্দ পবিত্র। এগুলো আত্মকেন্দ্রিক মানুষের কাজ। সমাজে তাদের দামতো আছে। তার বদলা নিতে তাকে পুঁজি করবেন না দয়া করে। স্বার্থপরদের ভালো থাকতে দিন। ১০ গজ সামনে গিয়ে ওরা পেছন ফিরে আপনায় নিয়ে আফসোস তো করতেই হবে। এখানেই আপনি ধন্য। যদি আপনি শুদ্ধ হয়ে থাকেন।
আবার উপলব্ধি ভালো হলে আপনায় এসে দুঃখ প্রকাশ করতেও পারে। কিন্তু তাদের বেলা সেই সম্ভবনা শূন্যের কাছাকাছি। কারণ মানুষের চোখের সামনে রঙ খেলা করে। এতো রঙের মাঝে রত্ন হারাতেই পারে। তা খুব স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিন। আর মানতে না পারলে সুবোধ এর মতো জাগতিক জ্ঞান শূণ্য হয়ে আপনাকে পালাতে হবে। কিন্তু এই পালিয়ে বাঁচা জীবন নয়। লড়াই করে বাঁচতে হবে। অমানবিক পৃথবীতে মানবিকতার সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত আপনার থেকে শুরু হবে। দেখে বা শিখে মানুষ বদলাবে। সে অপেক্ষায় মৃত্যুই উত্তম। অন্তত সর্বোচ্চ কালপীঠে আচরণ কিংবা মূল্যবোধ সম্পন্ন কোন উত্তম পরিণতি দেখে তো যাবেন। নতুবা উদারতার উদাহরণ রেখে যাবেন। যা ধরে পরবর্তী প্রজন্ম একটি মানবিক পৃথিবীর দিকে আগাবে।
আমরা ভাবি মানুষ বদলায় না কেন? মানুষ বদলায়। ইতিবাচক বদলটা হয় কম। এই বদল টা একদিনের কাজ নয়। যুগ পেরিয়েও তা না আসতে পারে কিন্তু হতাশ হওয়া যাবেনা। এই ধরুণ আপনার গাভী ভালো দুধ দেয় কিন্তু তাকে ভালো ঘাস না খাওয়ালে সে দুধ দিবেনা। ভালো নার্সিং না করলে ভালো ঘাস হবেনা। পরিবর্তনের প্রক্রিয়াটা এভাবেই করতে হবে। একদম গুড়া থেকে। সুতরাং হতাশ না হয়ে বরং আশাবাদী হয়ে বাঁচতে হবে। এটাই আপনার আর তাদের পার্থক্য সমাজকে বুঝিয়ে দিবে।
এলোমেলো কথাগুলোর কোন দিকপথ পাচ্ছেন না হয়তো? তা আপনার জন্য নয় তাহলে। আপনি জীবনে অনেক সুখী মানুষ। আপনার আগামী সুখেই থাক এই প্রত্যাশা। এই লেখাটি কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষকে উদ্দেশ্য করে। যাদের প্রভাব আমাদের অনেকের জীবনে আছে। তাই তারাই ভালো বুঝবেন এর যথার্থতা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে রঙের মধ্যে আমরা রত্ন চিনতে পারবো কি? মানে, এই যাদের স্বার্থপর ভাবছি তারা আসলেই সেরকম ছিলো কি-না? এই বিচার করতে আপনার বোধশক্তি কেমন সেটাও ভাবার বিষয়। আত্মপর্যালোচনাটা তাহলে আজই করুন।
পরিশেষে কথা হচ্ছে, শুদ্ধতা শুরু হোক নিজের থেকে। আপনার প্রয়োজন আদায় করবেন কিন্তু তা কোন মানুষের ক্ষতি করে না। অধিকার আদায় করবেন কিন্তু অন্যায়ভাবে না। প্রথম লড়াইয়ে আপনি জয়ী হলে তা আদায় নয়। ছিনিয়ে নেয়া। আদায়ের লড়াই একটা পন্থানুসরণ করে যার ব্যাখ্যা বিজ্ঞান দিয়েছে ভালো। হিংসার আগুনে নয় বরং অধিকারের প্রশ্ন দ্বিমত করো, সোচ্চার হও, লড়াই করো। তাতে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই শ্রেয়। যে আমি শুদ্ধ, আমি অন্যায় করবো না। কারো ন্যায়ে শুধু একবার বলো- ‘না, আপনি ভুল করছেন’। আপনার এই কথাটাই তাকে দশ বছর পর ভাবিয়ে তুলবে। তখন থেকেই পরিবর্তন শুরু।
লেখক: সাংবাদকর্মী ও সংগঠক।
ই-মেইল: mahmud.press@gmail.com
মতামত বিভাগে প্রকাশিত লেখা লেখকের একান্ত নিজস্ব। লেখার বিষয়বস্তুর যথার্থতা নিয়ে শাহবাজপুর.কম আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।