নিজস্ব প্রতিবেদক:: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থা আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা লঙ্ঘন করে মাধবছড়ার ওপর নির্মিত কালভার্ট ঝুঁকির মুখে ফেলে ছড়া থেকে মাটি কেটে নিজের ফার্মের ভিটা ভরাট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুহিবুর রহমান কামালের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে।
ছড়া থেকে মাটি তোলা বন্ধে স্থানীয় লোকজন সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর অনুলিপি পরিবেশ মন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ মো. শাহাব উদ্দিনের বরাবরেও দেওয়া হয়েছে।
ছড়া থেকে মাটি কেটে নেওয়ায় বড়লেখা-কুলাউড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের মাধবছড়ার ওপর নির্মিত কালভার্টটি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। আসন্ন বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে ছড়ার পাড় ভেঙে উভয় পাড়ের ফসল নষ্ট হবে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।
লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুহিবুর রহমান কামাল নিজের ব্যক্তিগত জমিতে গরুর ফার্ম তৈরি করছেন। ফার্মের ভিটা ভরাট করতে তার নজর পড়ে পাশের মাধবছড়ায়। সম্প্রতি তিনি কয়েকজন শ্রমিক লাগিয়ে মাধবছড়ার ওপর নির্মিত কালভার্টের উভয় পাশ থেকে মাটি কাটা শুরু করেন। এরই মধ্যে তিনি ছড়া থেকে মাটি কেটে নিজের ফার্মের ভিটাও ভরাট করে ফেলেছেন। এতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে ছড়ার ওপর নির্মিত কালভার্ট।
অথচ বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থা আইন, ২০১০-এর ৪ নম্বর ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, বিপণনের উদ্দেশে কোনো উন্মুক্ত স্থান, চা-বাগানের ছড়া বা নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এই ধারার খ উপ-ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে সর্বনিম্ন এক কিলোমিটার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত সীমানার মধ্যে বালু ও মাটি তোলা নিষিদ্ধ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মাধবছড়ার ওপর নির্মিত কালভার্টের উভয়পাশের মাটি কেটে পাশের একটি ফার্মে ভরাট করা হয়েছে। কালভার্টের নিচে গভীরভাবে মাটি কাটার ক্ষত রয়েছে। কালভার্টের পশ্চিম দিকের দক্ষিণ পাড়ের থেকে বেশি মাটা কাটা হয়েছে। এসময় কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিকের (ফার্ম) সঙ্গে কথা হয়। পাশাপাশি স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথাও হয়েছে। তারা জানান, ফার্মটি স্থানীয় ইউপি সদস্য মুহিবুর রহমান কামাল নির্মাণ করছেন। তিনি শ্রমিক লাগিয়ে মাধবছড়া থেকে মাটি কেটে ফার্মের ভিটা ভরাট করিয়েছেন।
ছড়া থেকে মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য মুহিবুর রহমান কামাল বলেন, ‘একটা মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই ফার্মট আমার এক আত্মীয়রে। তারা ফার্ম তৈরির পর আমাকে ঘর ভাড়া দেবেন। তাই আমি এর কাজ দেখাশোনা করছি। আমি অন্য জায়গা থেকে মাটি এনে ভিটা ভরাট করেছি। আর ছড়া থেকে আশপাশের লোকজন মাটি নিয়েছেন।’ যারা মাটি নিয়েছেন তাদের কারও নাম আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছড়া থেকে মাটি কাটার খবর শুনে ভূমি অফিস থেকে তহশীলদার এসেছিলেন। তিনি কয়েকজনের নাম পরিচয় নিয়েছেন।’
এ বিষয়ে সহকারি কমিশনার (ভূমি) জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, ‘ছড়া থেকে মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়টি শুনেছি। তহশীলদারকে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে মাটি কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সড়ক ও জনপথের (সওজ) মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিয়া উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, ‘যে ব্যক্তি এই কাজ করেছেন তিনি ঠিক করেননি। এটা আমাদের বিদ্যমান আইন পরিপন্থী। এটি মূলত বক্স কালভার্ট। মাটি তোলায় কালভার্টটি সংকটাপন্ন হবে। বর্ষা মৌসুমে ঢলে কালভার্টটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই ধরনের স্থাপনাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গোড়া থেকে মাটি তোলায় যে কোনো সময় কালভার্ট দেবে গিয়ে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পরে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্রিজের ফাউন্ডেশন অনেক গভীর পর্যন্ত যায় আর বক্স কালভার্টে ফাউন্ডেশন ততটা গভীরে যায় না। সে ক্ষেত্রে মাটি তুলে ফেললে কালভার্ট বিপজ্জনক অবস্থায় চলে যায়।’