এবার কক্সবাজার থেকে সরাসরি প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যাওয়া যাবে। প্রায় ৫২ নটিক্যাল মাইল (৯৫ কিলোমিটার) সাগর পাড়ি দিয়ে কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন সেন্টমার্টিন পৌঁছাবে কর্ণফুলী এক্সপ্রেস নামের জাহাজটি।
আবার প্রতিদিন বিকেল তিনটায় কক্সবাজারের উদ্দেশ্য রওয়ানা হবে। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সমুদ্রযাত্রার মধ্যদিয়ে ৫৮২ জন যাত্রী ধারণ ক্ষমতার এ জাহাজটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হচ্ছে। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) থেকে জাহাজটি কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌ রুটে চলাচল শুরু করবে।
জাহাজটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর। অন্যদের মধ্যে মহেশখালী কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আবদুস সামাদ, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের পরিচালক কমোডর ছৈয়দ আরিফুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, ট্যুরিষ্ট পুলিশের পুলিশ সুপার জিললুর রহমান ও কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এম এ রশিদ উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া জাহাজ থেকে সমুদ্র, পাহাড় আর সূর্যাস্ত দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন যাত্রীরা। বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টায় ‘সমুদ্র যাত্রা’ অনুষ্ঠান উদ্বোধনের মাধ্যমে এই যাত্রা শুরু হচ্ছে। উদ্বোধন অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে জাহাজের দ্বার উন্মোচন, বঙ্গোপসাগরে বিচরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেজবান।
উদ্বোধন এর পরদিন শুক্রবার থেকেই পর্যটকরা কক্সবাজার থেকে সরাসরি সাগর পথে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন, এম ভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস জাহাজে করে।
কক্সবাজার থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিন যাওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ায় সেন্টমার্টিন ভ্রমণে পর্যটকদের ভোগান্তি অনেকাংশে কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাহাজটির কক্সবাজারের পরিচালক ও ফারহান এক্সপ্রেস ট্যুরিজম-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর জানান, কক্সবাজার শহরের উত্তর নুনিয়ারছরা (এয়ারপোর্ট রোড) বিআইডব্লিওটিএ ঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল সাতটায় জাহাজটি সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। আবার বিকেল তিনটায় কক্সবাজারের উদ্দেশে সেন্টমার্টিন ছেড়ে আসবে জাহাজটি। উভয়দিক থেকে গন্তব্যে পৌঁছুতে সময় লাগবে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা।
কিছুদিন পর সেন্টমারটিন থেকে ফেরার সময় আরো ১ ঘণ্টা পেছানো হবে বলেও জানান তিনি।
বাহাদুর জানান, এম ভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস জাহাজের ইকোনমি আসনের (দ্বিতীয় শ্রেণি চেয়ার) ভাড়া জনপ্রতি দুই হাজার টাকা। এছাড়া বিজনেস ক্লাস আসন (প্রথম শ্রেণি চেয়ার) ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে দুই হাজার ৫শ’ টাকা।
এছাড়া জাহাজটিতে রয়েছে মোট ১৭ টি লাক্সারি শ্রেণির কেবিন। তারমধ্যে ইকোনমি শ্রেণির কেবিন (দ্বিতীয় শ্রেণি), এর ভাড়া ১২ হাজার টাকা ও লাক্সারি শ্রেণির (ভিআইপি) কেবিনের ভাড়া ১৫ হাজার টাকা। প্রতিটি কেবিন দুইজনের জন্য প্রযোজ্য।
তিনি জানান, প্রায় ৫৫ মিটার দীর্ঘ ও ১১ মিটার প্রশস্তের জাহাজে মেইন প্রোপালেশন ইঞ্জিন হচ্ছে দুইটি। আমেরিকার বিখ্যাত কামিন্স ব্র্যান্ডের মেশিনগুলোর এক একটির ক্ষমতা প্রায় ৬০০ বিএইচপি করে। জাহাজটি ঘণ্টায় প্রায় ১২ নটিক্যাল মাইল গতিতে ছুটে চলার সক্ষমতা রয়েছে।
এদিকে ১৭ টি ভিআইপি কেবিন ছাড়াও এই নৌযানে ভিন্ন ক্যাটাগরির প্রায় ৫১০ টি আসন ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে প্রশস্ত কনফারেন্স হল রুম, ডাইনিং স্পেস, সি ভিউ ব্যালকনি।
উন্নত ও আধুনিক নেভিগেশন ব্যবস্থার জন্য রয়েছে, জিপিএস, ইকোসাউন্ডার, রাডার ও কম্পাস। রয়েছে অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা। জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম লাইফ জ্যাকেট, লাইফ বয়ার পাশাপাশি রয়েছে ইমারজেন্সি লাইফ সেভিং বোট।
দীর্ঘদিন এ উপকূলীয় পথে অভিজ্ঞ মাস্টার ও ক্রু দ্বারা জাহাজ টি পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।