মৌলভীবাজার সোসিও ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের আয়োজনে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে জুড়ীতে অনুষ্ঠিত শিল্প-পণ্য মেলা উপলক্ষে অবৈধ লটারি বন্ধ করেছে মেলা কর্তৃপক্ষ।
এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় মেলা প্রাঙ্গণে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মেলার প্রধান আয়োজক সিলেট সোসিও ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এমএ মঈন খাঁন বাবলু বলেন, আমরা মেলায় দর্শনার্থী বৃদ্ধির জন্য লটারির আয়োজন করেছিলাম, যদিও লটারির কোন অনুমতি ছিল না। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ফেসবুকে লেখালেখি হওয়ায় নিজ উদ্যোগে আমরা তা বন্ধ করে দেই। এখন থেকে আর বাইরে মাইক ব্যবহার হবে না এবং বিশ টাকা মূল্যের মেলার প্রবেশ টিকেট দিয়েই র্যাফেল ড্র হবে। মেলায় অশ্লীলতা ও জুয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ মোঈদ ফারুক বলেন, মেলার নিকটে আমাদের পারিবারিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত এতিমখানা, হাফিজি মাদ্রাসা, দাখিল মাদ্রাসা ও মসজিদ রয়েছে। মেলার কারণে শিক্ষার্থীদের পড়ায় বিঘ্ন ঘটছে। সেটা আগে আমার জানা ছিল না। কিন্তু যেহেতু মেলার আয়োজন হয়ে গেছে সেহেতু সবার সহযোগিতায় মেলাটি সুন্দর ভাবে শেষ হোক।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা আহমেদ রিয়াজ বলেন, আমি বড়লেখায় লটারি বিক্রির গাড়ি আটকাই। বৈধ কাগজ দেখাতে না পারায় গাড়িসহ থানায় দেই।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক ও ফুলতলা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুক আহমদ মেলার স্বার্থে আল্লাহর ওয়াস্তে সাংবাদিকদের সহনশীল সহযেযোগিতা কামনা করেন।
উপজেলা চেয়ারম্যানের ছোট ভাই এম এ মুজিব মাহবুব লটারি নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের নিন্দা জানালে সাংবাদিকরা তার প্রতিবাদ করেন। পরে তিনিসহ মেলা কর্তৃপক্ষ ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
সাংবাদিকরা বলেন, র্যাফেল ড্র্র এবং লটারি ভিন্ন বিষয়। এখানে র্যাফেল ড্র্র এর নামে অবৈধ লটারি চলছিল। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক স্বীকার করেছেন লটারির কোনো অনুমোদন নেই, তা অবৈধ। পুলিশ সেটা বন্ধ করবে। যেহেতু জেলা প্রশাসন মেলার অনুমতি দিয়েছেন, সেহেতু শর্ত মেনে মেলা চলুক। তবে মেলার নামে কোন অশ্লীলতা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এবং আইন ও সমাজ বিরোধী কোন কাজ মেনে নেয়া হবে না।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রিংকু রঞ্জন দাস, রনজিতা শর্মা, ইউপি চেয়ারম্যান সালেহ উদ্দিন আহমদ, শাহাব উদ্দিন লেমন, শ্রীকান্ত দাস, এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী লিয়াকত, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম তারা মিয়া, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মামুনুর রশীদ সাজু, কামিনীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি কামাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আম্বিয়াসহ জুড়ী, কুলাউড়া ও বড়লেখা উপজেলার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে জুড়ী কলেজ মাঠে শিল্প পণ্য বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন। ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় অবৈধ লটারি। ৬০/৭০টি গাড়ি যোগে জুড়ী, কুলাউড়া ও বড়লেখা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। এ নিয়ে তিন উপজেলায় জনমনে অসন্তোষ দেখা দেয়। বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে। শুরু হয় সামাজিক প্রতিবাদের প্রস্তুতি। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। জেলা প্রশাসক লটারি অবৈধ ঘোষণার পর নড়ে বসে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে টিকেট বিক্রির সকল গাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে রাতে মেলা কর্তৃপক্ষ অবৈধ লটারি বন্ধের ঘোষণা দেয়। তবে লটারি বন্ধ করে জুয়া বা সার্কাসের নামে অশ্লীলতা শুরু হলে আন্দোলন গড়ে তুলবেন বলে স্থানীরা জানান।