বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

‘দল ও প্রতীক’ বদলের মিছিলে সিলেটের ৪ প্রার্থী
বিশেষ প্রতিবেদক

বিশেষ প্রতিবেদক



বিজ্ঞাপন

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে চারদিকে বইছে নির্বাচনী উত্তাপ। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে ঘরে-বাইরে। শেষ পর্যন্ত কে পাচ্ছেন দলীয় বা জোটের মনোনয়ন তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। বসে নেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা। দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে শুরু করেছেন দৌঁড়ঝাপ।

সারাদেশের মতো সিলেটেও বইছে নির্বাচনী আমেজ। কিন্তু সিলেট বিভাগের ৪টি আসনে অন্য রকম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ‘দল বদল’ ‘প্রতীক বদল’ সবই হচ্ছে এই ৪টি আসনে। শুধু সিলেট নয়, এই ইস্যুটি সারাদেশে অন্য রকম উত্তেজনা ছড়াচ্ছে।

এক সময়ের ডাকসাইটে নেতা ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরী বীর বিক্রম, বিএনপির সাবেক এমপি এমএম শাহীনের সঙ্গে সর্বশেষ যোগ হলেন হবিগঞ্জের রেজা কিবরিয়া।

আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়েছেন। মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া উপজেলা) আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে তিনি মনোনয়ন ফরমও কিনেছেন। সুলতান মনসুর ১৯৯৬ সালে নৌকা প্রতীকে এ আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

২০০১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী এমএম শাহীনের কাছে পরাজিত হন তিনি। সংস্কারপন্থী হওয়ায় পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগে আর ঠাঁই হয়নি তার। ফলে এক সময়ের এই দাপুটে আওয়ামী লীগ নেতার সর্বশেষ ঠিকানা এখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে। সবকিছু ঠিক থাকলে ধানের শীষেই ভোটে অংশ নিতে যাচ্ছেন তিনি।

অন্যদিকে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া উপজেলা) আসনে অতীতে আওয়ামী লীগের সুলতান মনসুরের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি এমএম শাহীন। ১৯৯৬ সালে তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সুলতান মনসুরের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। এর আগে একই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন এম এম শাহীন। পরে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ফুটবল প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি।

তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি পরাজিত হন। এবার বিএনপি ছেড়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টে (বিকল্পধারা) যোগ দিয়েছেন এমএম শাহীন। সব ঠিক থাকলে এবার হয়তো নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে তাকে।

২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর শমসের মবিন চৌধুরী পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপি আমলে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতও ছিলেন। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি বিএনপিতে যোগ দেন এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাকে মূলত সিলেট-১ আসনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিল।

তবে কারাগার থেকে বেরিয়ে ২০১৫ সালে তিনি বিএনপির রাজনীতি থেকে অবসর নেন। সম্প্রতি বিএনপির সাবেক এই নেতা বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারায় যোগ দেন। তাকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যের পাশাপাশি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর উপদেষ্টাও করা হয়েছে। শমসের মবিন চৌধুরী সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসন থেকে এবার নির্বাচন করবেন বলে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। সব ঠিক থাকলে তাকেও নৌকা থেকে নির্বাচন করতে হতে পারে।

সর্বশেষ এই মিছিলে যুক্ত হয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়া। তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হতে চান। তিনি হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে প্রার্থী হতে গণফোরামে যোগ দিয়েছেন। শাহ এএমএস কিবরিয়া ২০০১ সালে হবিগঞ্জ-৩ (হবিগঞ্জসদর-লাখাই) আসনের সাংসদ ছিলেন।

অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়া জানান, গণফোরামের সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তিনি হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে নির্বাচন করবেন।

তিনি বলেন, তাঁর বাবাকে ২০০৫ সালে হত্যার পর বিএনপির সরকারের সময় এবং পরবর্তীকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বিচার করা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের ১০ বছরেও এ মামলার কোনো সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি দলটি। এই ক্ষোভের কারণে তিনি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জোট থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফ্রন্টের সিদ্ধান্ত মতে আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তাকে নির্বাচন করতে হবে।

তিনি বলন, আমার বাবার স্বপ্ন ছিল হবিগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচন করার। আমি সেই স্বপ্ন এবার বাস্তবায়ন করতে চাই। কারণ এলাকাটি অবহেলিত একটি জনপদ। এলাকার মানুষের জীবন মানে গুণগত পরিবর্তন আনতে চাই। এখানের মানুষ চায় না রুগ্ন কোনো চেহারা বারবার আসুক’।

‘দল বদল’ ‘প্রতীক বদল’ এখন ভোটারদের নতুন খোরাক যোগাচ্ছে। তাদের নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় উঠছে!

প্রসঙ্গত, পুনঃতফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৮ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ২ ডিসেম্বর। ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে। আর ভোটগ্রহণ ৩০ ডিসেম্বর।