এ. জে লাভলু:: দীর্ঘদিন পর মুক্ত পরিবেশে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী ১৬ আগস্ট শনিবার সকাল ১১টায় পানিধার আব্দুর রহমান কনভেনশন হলে উপজেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
ইতিমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি পদে আব্দুল হাফিজ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে জুয়েল আহমদ নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি তিনটি পদে ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পদপ্রত্যাশীরা দলীয় নেতাকর্মী ও কাউন্সিলরদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। কেউ কেউ দলের শীর্ষ পর্যায়েও যোগাযোগ রাখছেন। ফলে কমিটিতে পরিবর্তন আসবে নাকি পুরোনোই নেতৃত্বে থাকবেন-এ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলন ও কাউন্সিলে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। প্রধান বক্তা হবেন সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ জিকে গউছ। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন সিলেট বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এম নাসের রহমান, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. ফয়জুল করিম ময়ূন এবং সদস্য সচিব মো. আব্দুর রহিম রিপন।
সম্মেলনের সূচি অনুযায়ী সকাল ১১টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর জাতীয় ও দলীয় সংগীত পরিবেশন, উদ্বোধন ও অতিথিদের বক্তব্য অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় পর্বে বিকেল ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত চলবে কাউন্সিল অধিবেশনের ভোটগ্রহণ। নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন মো. জয়নাল আবেদীন, কমিশনার হিসেবে থাকবেন অধ্যক্ষ মো. আসুক উদ্দিন ও ইমরান আহমদ।
জানা গেছে, সর্বশেষ ২০২০ সালে উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আব্দুল হাফিজ সভাপতি ও মুজিবুর রহমান খসরু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এরপর থেকে আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে দলীয় কার্যক্রম চলছিল। গত ১২ আগস্ট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির এক বর্ধিত সভায় ১৬ আগস্ট সম্মেলন ও কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কাউন্সিলকে ঘিরে উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন থেকে ৭১০ জন কাউন্সিলরের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। গত ৮ আগস্ট যাচাই-বাছাই ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে চূড়ান্ত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে বিএনপির সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশন। এতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি পদে আব্দুল হাফিজ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে জুয়েল আহমদ নির্বাচিত হন। এখন তিনটি পদে ছয়জন লড়ছেন। এরমধ্যে সিনিয়র সহসভাপতি পদে নছিব আলী ও এস এম শরীফুল ইসলাম বাবলু; সাধারণ সম্পাদক পদে মুজিবুর রহমান খসরু ও আব্দুল কাদির পলাশ; সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অধ্যাপক আব্দুস সহিদ খান ও জালাল আহমদ তালাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী মুজিবুর রহমান খসরু বলেন, দলের জন্য দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। একাধিকবার জেল-জুলুমের শিকার হয়েছি। আমার বিশ্বাস অতীতের মত এবারও দলের নেতাকর্মীরা আমাকে মূল্যায়ন করবেন।
অপর সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী আব্দুল কাদির পলাশ বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সব আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছি। এ কারণে বহুবার জেল-জুলুমের শিকার হয়েছি। কিন্তু ফ্যাসিবাদের সঙ্গে কখনো আতাত করিনি। অতীতের সাংগঠনিক কার্যক্রম বিবেচনা করে আশা করি কাউন্সিলররা আমাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করবেন।
সিনিয়র সহসভাপতি পদপ্রত্যাশী নছিব আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য কাজ করছি। নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। আশা করি তারা আমাকে মূল্যায়ন করবেন।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদপ্রত্যাশী অধ্যাপক আব্দুস সহিদ খান বলেন, আমি অতীতে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দলকে সুসংগঠিত করতে কাজ করেছি। মামলাও খেয়েছি। জেল-জুলুমের শিকার হয়েছি। আশা করছি দল আমাকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করবে।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. জয়নাল আবেদীন বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, দীর্ঘদিন পর মুক্ত পরিবেশে উপজেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত। সম্মেলকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সভাপতি আব্দুল হাফিজ বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতিতে আছি। আন্দোলন-সংগ্রাম, জেল-জুলুম-সবই পেরিয়ে এসেছি। নেতাকর্মীরা আমাকে ভালোবাসেন, তাই আবারও আমাকে নেতৃত্বে রেখেছেন।