বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

বড়লেখায় জনসেবায় ঐক্যবদ্ধ ৬৫টি সংগঠন স্বেচ্ছাশ্রমে ১০ কি. মি. সড়কের ঝোঁপঝাড়-যাত্রী ছাউনি পরিস্কার
প্রশস্ত হয়েছে সড়ক, কমেছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি

প্রশস্ত হয়েছে সড়ক, কমেছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি



বিজ্ঞাপন

এ.জে লাভলু:: বিভিন্ন বয়সী মানুষ। সবাই একসাথে কাজ করছেন। তাদের কেউ ঝোঁপঝাড় কেটে পরিস্কার করছেন। কেউ বা গাছের ডালপালা ছেঁটে দিচ্ছেন। কেউ সড়কের পাশের পরিত্যক্ত যাত্রী ছাউনি পরিস্কার করে তাতে দিচ্ছেন নতুন রঙের ছোঁয়া।এভাবে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে চান্দগ্রাম-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের দুইপাশের ঝোঁপঝাড় কেটে পরিস্কারে নেমেছেন। গেল শনিবার এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

প্রতি শনিবার তারা এই কার্যক্রম চালাচ্ছেন। গত ২৮ সেপ্টেম্বর শনিবার থেকে তারা এই কার্যক্রম শুরু করেন। তাদের এমন পদক্ষেপ এলাকাজুড়ে প্রশংসিত হচ্ছে।

মূলত বড়লেখা উপজেলার ৬৫টি সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত বড়লেখা উপজেলা সামাজিক সংগঠন অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাশ্রমে সড়কের দুইপাশের ঝোঁপঝাড় কেটে পরিস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সড়কের উভয়পাশের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা পরিস্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় সাতটি পরিত্যক্ত যাত্রী ছাউনি পরিস্কার করে রঙ করা হয়েছে। তাতে গ্রাফিতি অঙ্কন করা হয়েছে। এতে একদিকে সড়ক আগের চেয়ে যেমন প্রশস্ত হয়েছে তেমনি মানুষজন নিরাপদে চলাচল করতেও পারছেন। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও কমেছে।

জনসেবায় যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হলো ৬৫টি সংগঠন:

উপজেলার সংগঠনগুলোকে এক কাতারে এনে জনসেবায় কাজ করার এই উদ্যোগ নেন ব্যবসায়ী জাবেদ আহমদ। তিনি বিষয়টি ব্যবসায়ী আবু হানিফকে ও ইউকে প্রবাসী আব্দুল ওয়াদুদ আদনানকে জানান। পরবর্তীতে শিক্ষক রেজাউল করিম মিন্টু ও প্রভাষক তারেক আহমদকে সঙ্গে নিয়ে তারা এই মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়নে মাঠে নামেন। এরপর একে একে বিষয়টি দেশ-বিদেশের আরও কয়েকজনকে জানানো হয়। এরপর ভার্চুয়ালি মিটিংয়ে সবাই যুক্ত হয়ে তাদের মতামত দেন। পরে বড়লেখা উপজেলার সবগুলো সংগঠনকে নিয়ে পৌরসভায় বসার সিদ্ধান্ত হয়। তখন সবগুলো সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করা হয়। এতে এসব সংগঠন থেকে সাড়া মেলে। ২৫ আগস্ট তাদের নিয়ে বড়লেখা পৌরসভায় বসে বড়লেখা উপজেলা সামাজিক সংগঠন অ্যাসোসিয়েশনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এতে কমিটির মূল উদ্যোক্তা করা হয়েছে ব্যবসায়ী জাবেদ আহমদ ও আবু হানিফকে এবং ইউকে প্রবাসী আব্দুল ওয়াদুদ আদনানকে। এছাড়া ৮ জন উপদেষ্টা ও ১১ জনকে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সংগঠনের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন চান্দগ্রাম-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই ধার ঝোঁপঝাড়ে ভরে গেছে। সড়কের কোথাও কোথাও বাঁশঝাড় আর গাছের ডালাপালা মেলে তা সড়কের ওপর এসে পড়েছে। দীর্ঘদিন সওজ এগুলো পরিস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। স্থানীয়ভাবে কেউ তা পরিস্কারও করেনি। ফলে সড়কে কখনও দুটি গাড়ি পাশাপাশি চলাচল করলে পথচারীদের সড়কে দাঁড়ানোর মতো জায়গা থাকে না। তখন পথচারীরা বাধ্য হয়ে সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনাও ঘটে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা সামাজিক সংগঠন অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ও সমন্বয়ক কমিটি সদস্যদের এক সভা হয়। এতে কমিটির উপদেষ্টা শিক্ষক রেজাউল করিম মিন্টু চান্দগ্রাম-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের দুইপাশের ঝোঁপঝাড় পরিস্কারের প্রস্তাব করেন। এতে সবাই সমর্থন দেন। পাশাপাশ কমিটির উপদেষ্টা প্রভাষক তারেক আহমদ সড়কের পাশের পরিত্যক্ত যাত্রী ছাউনি পরিস্কারের পাশাপাশি তা রঙ করার প্রস্তাব দেন। তখন তাতেও সবার সমর্থন মেলে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সংগঠনের প্রায় ৭০ জন সদস্য গত ২৮ সেপ্টেম্বর শনিবার থেকে চান্দগ্রাম-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের চান্দগ্রাম এলাকা থেকে ঝোঁপঝাড় পরিস্কার ও যাত্রী ছাউনি পরিস্কার কার্যক্রম শুরু করেন। এখনও পর্যন্ত সড়কের উভয়পাশের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা পরিস্কারও করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় সাতটি পরিত্যক্ত যাত্রী ছাউনি পরিস্কার করে রঙ করা হয়েছে। তাতে স্কুলের শিক্ষার্থী গ্রাফিতি অঙ্কন করেছে। এতে রঙের উপকরণ, খাবার, গাড়ি, ব্যানার,পরিস্কারের জন্য জিনিসপত্র কেনাকাটায় প্রায় ২৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। এই টাকা সংগঠনের উপদেষ্টা ও সমন্বয়কদের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের অনেকের কাছ থেকে সংগ্রহ করে ব্যয় করা হয়েছে।

অটোরিকশচালক রাজু আহমদ বলেন, আগে রাস্তাটির দুইপাশ ঝোপঝাড়ে ঘেরা ছিল। রাস্তাটি ছোট হয়ে গিয়েছিল। দুর্ঘটনার ঝুঁকিও ছিল। কখনও কখনও দুর্ঘটনাও ঘটেছে। তবে এখন দেখছি রাস্তার দুইপাশ পরিস্কার হয়েছে। রাস্তা কিছুটা প্রশস্ত হয়েছে। এখন দুর্ঘটনাও ঝুঁকি কমবে। যারা এই কাজ করেছেন তিনি তাদের ধন্যবাদ জানান।

শিক্ষক অপু ইসলাম সিলেটভিউ২৪ডটকমকে বলেন, আগে যাত্রী ছাউনিগুলোও প্যরিত্যক্ত ছিল। অপরিছন্ন ছিল। যাত্রীদের বসার মতো পরিবেশ ছিল না। এখন এগুলো পরিস্কার করে রঙ দেওয়া হয়েছে। যাত্রীরা এখন বসতে পারবেন। খুব সুন্দর লাগছে। যারা এই কাজ করেছেন, তাদের ধন্যবাদ।

সংগঠনের মূল উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী জাবেদ আহমদ বলেন, আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করা। চিন্তা করলাম বড়লেখা উপজেলার সব সংগঠনকে যদি এক করতে পারি, তবে সবাই মিলে যেকোনো সংকটে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারব। বিষয়টি আমি ব্যবসায়ী আবু হানিফ ও প্রবাসী আব্দুল ওয়াদুদ আদনান ও আব্দুর রহমানের সাথে শেয়ার করি। তারা সাড়া দেন। পরে বিষয়টি শিক্ষক রেজাউল করিম মিন্টু ও তারেক আহমদের আরও কয়েকজনকে জানালে তারা এগিয়ে আসেন। এরপর ভাচুর্য়ালি মিটিং করি। সবাই তাদের মতামত দেন। পরে সবাই মিলে উপজেলার বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করি। তাদের বিষয়টি জানাই। তারাও সাড়া দেন। গত ২৫ আগস্ট বড়লেখা উপজেলা সামাজিক সংগঠন অ্যাসোসিয়েশনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ওই কমিটিতে আমাদের তিনজকে মূল উদ্যোক্তা হিসাবে রাখা হয়েছে। কমিটিতে ৮ জন উপদেষ্টা ও ১১ জনকে সমন্বয়ক হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সংগঠনের উপদেষ্টা প্রভাষক তারেক আহমদ  বলেন, বড়লেখা উপজেলা সামাজিক সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন গঠনের পর সংগঠনের উপদেষ্টা রেজাউল করিম মিন্টু চান্দগ্রাম-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের দুইপাশের ঝোঁপঝাড় পরিস্কারের বিষয়টি প্রস্তাব দেন। আমি তখন যাত্রী ছাউনিগুলো পরিস্কার করে রঙ করার বিষয়টি প্রস্তাব দিই। তখন সবাই সমর্থন দেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা সংগঠনের সবাইকে নিয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর রাস্তার পাশের ঝোঁপঝাড় ও যাত্রী ছাউনি পরিস্কারের কাজ শুরু করি। এখনও পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা পরিস্কার করা হয়েছে। সাতটি যাত্রী ছাউনি পরিস্কার করে তাতে রঙ দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাজ চলমান থাকবে। আমরা বড়লেখা শহর পরিস্কারের পরিকল্পনা রয়েছে।

সংগঠনের মূল উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী জাবেদ আহমদ বলেন, সড়কের দুই পাশ পরিস্কার করতে গিয়ে মানুষের সবধরনের সহযোগিতা পাচ্ছি। অনেক বলছেন, আগে ঝোপঝাড়ের কারণে রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটতে তাদের ভয় লাগে। সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কা থাকে। রাস্তার পাশ পরিষ্কার করার অনেকে আমাদের সাধুবাদ জানিয়েছেন। বিশেষ করে বয়স্ক লোকেরা আমাদের জন্য অনেক দোয়া করেছেন।

উপজেলা পরিষদের সাবেক নারী ভাইস চেয়ারম্যান রাহেনা বেগম হাছনা বলেন, বড়লেখা উপজেলা সামাজিক সংগঠন অ্যাসোসিয়েশনের কার্যক্রম আমি সরেজমিন দেখেছি। বড়লেখায় বিভিন্ন সংগঠনকে এক করে তাদের সাথে নিয়ে তারা দারুণ কাজ করেছেন। তারা আঞ্চলিক মহাসড়কের দুইপাশের ঝোঁপঝাড় পরিস্কারের পাশাপাশি যাত্রী ছাউনিগুলো পরিস্কার করে তাতে রঙ করেছেন। তাদের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। সবাই তাদের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে দেশ এগিয়ে যাবে।