নিজস্ব প্রতিবেদক:: অবশেষে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের পাবিজুরীপার গ্রামের কলেজছাত্রী মরিয়ম ফেরদৌস মনির বসতবাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা থেকে বাঁশের বেড়া ও গাছের চারা অপসারণ করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে রাস্তা থেকে বাঁশের বেড়া ও গাছের চারা সরিয়েছে পুলিশ।
এসময় বড়লেখা থানার ওসি সঞ্জয় চক্রবর্ত্তী, শাহবাজপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পুলিশ পরিদর্শক) নবগোপাল ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টিগোচর হয়।
এর আগে প্রতিবেশীরা ওই কলেজছাত্রীর বসতবাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তায় বাঁশের বেড়া ও গাছের চারা লাগিয়ে তার পরিবারকে প্রায় তিন মাস ধরে অবরুদ্ধ করে রাখে। এমনকি ওই কলেজছাত্রীকে গত মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) অনার্স প্রথমবর্ষের লোকপ্রশাসন ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষায়ও অংশ নিতে যেতে দেওয়া হয়নি।
মনি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারি আলা উদ্দিনের মেয়ে এবং বড়লেখা নারীশিক্ষা একাডেমি ডিগ্রী কলেজের অনার্সের ছাত্রী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কলেজছাত্রী মরিয়ম ফেরদৌস মনির বাবা-মা ২০১১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের ভাটাউচি মৌজায় ডিপি খনিয়ান ২৪৬ এর সাবেক ১৭৭৪ নং দাগের সোয়া ১০ শতাংশ ভূমি ক্রয় করে বাড়ি নির্মাণ করেন। প্রায় ১২ বছর ধরে বসতবাড়ির দক্ষিণ দিকের অর্ধশত বছরের পুরনো রাস্তা দিয়ে কলেজছাত্রীর পরিবারসহ আশপাশের লোকজন চলাচল করেন। ওই রাস্তায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আকবর আলী ও ইউপি সদস্য সরকারি প্রকল্পে উন্নয়ন কাজ করেছেন। কিন্তু হঠাৎ গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রতিবেশি জাকির হোসেন, নাজিম উদ্দিন, ফখর উদ্দিন ওরফে কটন আলী, আব্দুস শহিদ, আজাদ আহমদ গংরা কলেজছাত্রীর পরিবারের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি গাছের চারা রোপন ও বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেন। বাধা নিষেধ করলেও তারা তা মানেনি। বসত বাড়ির দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকের রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়ায় পরিবারটি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। গাছের চারা ও বাঁশের বেড়ার ফাঁক দিয়ে চলাচল করতেও বাধা দেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদের শরনাপন্ন হলে এর কোনো সুরাহা হয়নি। গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর শাহবাজপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার না পেয়ে অবশেষে ভুক্তভোগি কলেজছাত্রী গত ৩১ অক্টোবর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রাস্তা বন্ধকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বড়লেখা থানার ওসিকে রাস্তার প্রতিবন্ধকতা অপসারণ, শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখাসহ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন। তাতেও কোনো প্রতিকার মিলেনি। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে ‘বড়লেখায় চলাচলের রাস্তায় বাঁশের বেড়া, ৩ মাস ধরে পরিবারসহ কলেজছাত্রী অবরুদ্ধ’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টিগোচর হয়। আদালতের নির্দেশে বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে রাস্তা থেকে বাঁশের বেড়া ও গাছের চারা সরায় পুলিশ।
কলেজছাত্রী মরিয়ম ফেরদৌস মনি বুধবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘বুধবার বিকেলে পুলিশ ও স্থানীয় চেয়ারম্যান এসে আমাদের চলাচলের রাস্তা থেকে বাঁশের বেড়া ও গাছের চারা সরিয়ে দিয়েছেন। এখন আমরা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারছি। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের কারণে বিষয়টি সমাধান হয়েছে। এতদিন বিভিন্নজনের কাছে ধরর্না দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। এজন্য আপনাদের (সাংবাদিকদের) অশেষে ধন্যবাদ।’
বড়লেখা থানার ওসি সঞ্জয় চক্রবর্ত্তী জানান, কলেজছাত্রী মরিয়ম ফেরদৌস মনির বসতবাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা থেকে বাঁশের বেড়া ও গাছের চারা অপসারণ করা হয়েছে। এখন তারা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারবেন। এরপরও চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।